মনির মোল্যা, সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের সালথায় ভিজিটরের অবহেলায় রেহানা বেগম (৪০) নামে ৫মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবারের অভিযোগ। নিহত নারীর মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার (২৭ আগষ্ট) বিকালে উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের কানাইড় গ্রামে দাফন করা হয়। নিহত রেহানা, কানাইড় গ্রামের আজিজুল শেখের স্ত্রী ও ৩ কন্যার জননী। তার দুই কন্যা বিবাহিত ও ছোট কন্যার বয়স ৪ বছর। ওই ভিজিটর রোকেয়া বেগম সালথা উপজেলা মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যর ভিজিটর হিসেবে কর্মরত। এদিকে রেহানার মৃত্যুতে তার পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নিহত রেহানা বেগমের বড় মেয়ে রিক্তা আকতার সাংবাদিকদের বলেন, আমার মা ৫মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। এই বয়সে আবার সন্তান জন্ম দিবে এই লজ্জায় ছিলেন আমার মা। এ অবস্থায় উপজেলা হাসপাতালের ভিজিটর রোকেয়া বেগমের কাছে গেলে তিনি আমার মাকে বাচ্চা গর্ভপাত করার পরামর্শ দেয়। তার পরামর্শানুযায়ী বৃহস্পতিবার ভিজিটর রোকেয়ার ফরিদপুর শহরের আলীপুর বাসায় নিয়ে গর্ভপাতের জন্য মাকে ঔষধ খাওয়ায়। এরপর মায়ের ব্যাথা ওঠে। ব্যাথা ওঠার পর আমার মা ছটফট করতে থাকে। এসময় আমি নিষেধ করার পরও রোকেয়া আমার কথা শোনে না। আরো বলে কিছুই হবে না, ঔষধেই বাচ্চা গর্ভপাত হয়ে যাবে। এই বলে ৫হাজার টাকা নেয় আমাদের কাছ থেকে। কিন্তু ঔষধে গর্ভপাত না হওয়ায় ওইদিন রাতে আমার মায়ের শরীরে অস্ত্রপাচার করে ভিজিটর রোকেয়া বেগম। এতে মায়ের শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। শুক্রবার সকালে রোকেয়া বলে টাকা লাগবে আরো ৫ হাজার, তা না হলে তোমার মাকে মেডিকেলে নিয়ে যাও তার অবস্থা খারাপ আমি কিছু করতে পারবো না। তখন আমি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসা শুরু করার আগেই সকাল ১১ টার দিকে আমার মা মারা যায়। ভিজিটর রোকেয়ার অবহেলায় আমার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। আমি ও আমার পরিবার রোকেয়া বেগমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি। যাতে আমার মায়ের মতো আর কারো মায়ের এভাবে মৃত্যু না হয়।
এবিষয়ে ভিজিটর রোকেয়া বেগমের ০১৭১২৪৬০৭০০ নাম্বারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এসময় তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য পারভেজ মাতুব্বার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিহত রেহানা বেগম আমার প্রতিবেশি। সে খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তার মর্মান্তিক মৃত্যুতে আমি শোকাহত। সেই সাথে ভিজিটর রোকেয়ার শাস্তি দাবী করছি।
উপজেলা মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যর মেডিকেল অফিসার ডা. নাহিদা পারভিন বলেন, এরকম ঘটনা আমার জানা নাই। তবে রোকেয়া শনিবার সকালে দুই দিনের ছুটি নিয়েছে। যেহেতুৃ ঘটনা উপজেলার বাইরে তাই কিছু বলতে পারছি না। তবে এধরনের ঘটনা দুঃখজনক।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে প্রথম জানলাম। আপনারা মেডিকেল অফিসার ডা. নাহিদা পারভিনের সাথে কথা বলেন। তার অধিনেই রোকেয়া বেগম কাজ করেন।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সদর সার্কেল সুমন রঞ্জন সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, রেহানা বেগমের মৃত্যুর বিষয়ে তার পরিবার থানায় একটি জিডি করেছে। লাশ ময়না তদন্ত করা হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২৮ আগষ্ট ২০২২