ডাক্তারের পরামর্শ মেনে খেতে হচ্ছে একগাদা সাপ্লিমেন্ট। কারণ আর কিছুই নয়, শরীর মজবুত করে তুলতে যে যে পদার্থগুলো আপনার প্রয়োজন, তার কোনওটাই আপনার শরীরে নেই। তাই বাইরে থেকে আমদানি করতে হচ্ছে শরীরকে সচল রাখতে। অথচ এমন কিছু খাবার বাজারে সবসময় পাওয়া যায় যারা একাই অনেক কিছুর ঘাটতি মেটাতে পারে অনায়াসে। আমন্ড কিন্তু তেমনই একটা খাবার ফল। স্রেফ আমন্ডের মধ্যে যা যা গুণ আছে, তা একাই আপনার শরীরের পুরোনো উদ্যম ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট।
১। প্রয়োজনীয় মিনেরেলস রোজ যেসব আনাজপাতি থেকে শুরু করে আমিষ খাবার খান, তা থেকে শরীরের প্রয়োজনীয় যথেষ্ট পরিমাণ খনিজ পদার্থ পাচ্ছেন তো? আমন্ডে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম কপারের মত খনিজ পদার্থ, রয়েছে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিনস-এর মত দরকারি পদার্থগুলিও। অনেক সমীক্ষায় দেখা গেছে আমন্ডে ভিটামিন ই-এর পরিমাণ যথেষ্ট বেশি। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, যারা নিয়মিত আমন্ড খান তাদের শরীরে ভিটামিন ই-এর অভাবজনিত রোগ দেখাই যায় না।
২। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমন্ডে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সারাদিন কাজ করার ফলে শরীরে প্রচন্ড স্ট্রেস জমা হয়। এই স্ট্রেসের ফলে কোশের ক্ষতি হতে থাকে। আমন্ডে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেসকে কমাতে সাহায্য করে। মৃত কোশগুলোকে সুস্থ স্বাভাবিক করে তোলে। শুধু মৃতকোশগুলোকে বাঁচিয়ে তুলতেই নয়, ত্বকের বার্ধক্য কমাতেও এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমান উপকারী। আবার প্রদাহজনিত কোনও ব্যথা হলে তা কমাতেও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রয়োজন।
৩। ব্লাড সুগার কমায় ব্লাড সুগারের রোগীদের চারভাগের একভাগ রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের অভাব। এদিকে ম্যাগনেসিয়াম যে একশোরও বেশি শারীরিক ক্রিয়া চালানোর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ৫০ গ্ৰাম আমন্ডে ম্যাগনেশিয়াম থাকে প্রায় দেড়শো গ্ৰামের মত। তাই আমন্ড খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় ম্যাগনেসিয়াম-এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা শরীরে ঠিক থাকলে ইনসুলিনের কাজকর্মও স্বাভাবিক হতে থাকে। এই ইনসুলিন হরমোন ঠিকঠাক কাজ করলে রক্তে সুগারের মাত্রাও কিন্তু স্বাভাবিক থাকে।
৪। কোলেস্টেরল কমায় কোন কোলেস্টেরল আপনার হার্টের জন্য ভালো নয় জানেন কি? কোন কোলেস্টেরল হৃৎপেশির ক্রিয়াকে দুর্বল করে দেয়? ডাক্তারি ভাষায় এর নাম এলডিএল কোলেস্টেরল, সাধারণভাবে যাকে বলা হয়ে থাকে ‘ব্যাড কোলেস্টেরল।’রোজ যেসব ভাজাভুজি বা তেলের রান্না চেটেপুটে খাচ্ছেন তাতে এইধরনের কোলেস্টেরল যথেষ্ট পরিমাণে আপনার শরীরে ঢুকছে। আমন্ড জাতীয় বাদাম এই কোলেস্টেরলকেই ঠেকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। মুখের কথা নয়, বিভিন্ন গবেষণায় এটা প্রমাণ হয়ে গেছে। আমন্ড খেলে তাই হার্টের রোগে সহজে কাবু হতে হয় না।
৫। ব্লাড প্রেসার হাই ব্লাড প্রেসারের জন্য সহজেই মাথা গরম হয়ে যায়। অফিস থেকে বাড়ি সব জায়গায় অশান্তি হচ্ছে আপনার গরম স্বভাবের কারণে। ব্যাপারটা আপনার মনেও কম খোঁচা দিচ্ছে না। রোজ নিয়ম করে আমন্ড খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে। ব্লাড প্রেসারের প্রধান কারণ হল শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের অভাব। আর আমন্ড হল ম্যাগনেসিয়ামের সম্ভার। ফলে নিয়মিত আমন্ড খেলেই কিন্তু এই ম্যাগনেসিয়ামের অভাব মেটানো সম্ভব। হাই ব্লাড প্রেশারে হার্ট অ্যাটাক, কিডনির সমস্যার মত দুর্ঘটনাও কিন্তু ঘটতে পারে। তাই অবশ্যই প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার।
৬। ওজন ঠিক রাখে প্রোটিন আর ফাইবার জাতীয় খাবার খেলে আপনার পেট ভরা থাকে অনেকক্ষণ। আমন্ডে এই দুটোই রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে। তাই নিয়মিত আমন্ড খেলে বেশ কয়েক ঘণ্টা শরীরের প্রয়োজন পড়বে না অন্য কোনও খাবারের। তাই খিদেয় যখন পেট গুড়গুড় করছে, আমন্ড খেতে পারেন নিশ্চিন্তে। আকারে ছোট্ট দেখতে হলেও আপনার খিদে মেটাবে তৎক্ষণাৎ।