তীব্র শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন
চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় গত তিন দিনের তীব্র শৈত্য প্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বাড়ছে শীতজনিত ভাইরাস জ্বর, সর্দিজ্বর ও ঠান্ডাকাঁশি সহ হাপানী রোগের প্রাদুর্ভাব। সেই সাথে শিশু ও বৃদ্ধদের মাঝে দেখা দিয়েছে কোল্ড ডাইরিয়া রোগের ছড়াছড়ি। পদ্মা নদী অধ্যুষিত অত্র উপজেলার চরাঞ্চলবাসী, নদী পারের বসতি, বিভিন্ন বেড়িবাঁধ ও উন্মুক্ত ফসলী মাঠের মধ্যে বসতিরা তীব্র শীতে কাবু হয়ে পড়েছে। গত ক’দিনের পদ্মা পারের তুষারাচ্ছান্ন বাতাস আর ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার মধ্যে হাড় কাপানো শীতে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগাক্রান্ত হচ্ছে চরাঞ্চলবাসী।
শনিবার বিকেলে উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ জাহিদ হোসেন জানান, ” গত কয়েকদিন ধরে অধিকাংশ রুগীই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছে। বেশীরভাগ রুগীই চিকিৎসা পত্র নিয়ে বাড়ীতে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে মৃত্যুর সংখ্যা কম”। আর উপজেলা স্বাস্হ্য কর্মকর্তা ডাঃ হাফিজুর রহমান বলেন, “শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ওমিক্রন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবও বাড়ছে। সে কারনে চরাঞ্চলের স্বাস্হ্য কর্মীদের ঘরে ঘরে স্বাস্হ্য সেবা প্রদানের জন্য জোর তাগিত দেওয়া হয়েছে এবং প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্হ্য কেন্দ্রে পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ করা হয়েছে”।
জানা যায়, গত ক’দিনের তীব্র শীতে উপজেলার ভাঙন কবলিত ও ছিন্নমূল পরিবারগুলো তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধদের মাঝে শীতজনিত রোগ লেগেই আছে। দিনের অধিকাংশ সময় রোদ্রের আলো না থাকায় তারা আরও শীত কাবু হয়ে পড়ছে। গৃহস্হ্য’ পরিবারের গরু ছাগল হাস মুরগী সহ গৃহপালিত পশুর মধ্যেও দেখা দিয়েছে শীতজনিত রোগ। উপজেলার অনেক দুস্হ্য মজুর ও জেলে পরিবারের সদস্যরা তীব্র শীতে ভাইরাস জ্বর ও সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হয়ে কাজে যেতে পারছে না। তাই কর্মহীন অবস্হায় দিন কাটছে অনেকের। শনিবার উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নের বিন্দু ডাঙ্গী গ্রামের লক্ষী রানী জানায়, ” তার স্বামী চিত্ত হালদার (৬০) পদ্মা নদীর একজন মৎস্যজীবী। গত তিনদিন ধরে তীব্র শীতের কারনে সে অসুস্হ্য হয়ে নদীতে যেতে পারে নাই। তাই তিন কন্যা সন্তানের সংসারে অভাব অনটন দেখা দিয়েছে”।
উপজেলা পদ্মা নদীর অপর পারে চরহরিরামপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির বেপারী জানান, ” তীব্র শীতে চরাঞ্চলের একচেটিয়া ভাইরাস জ্বর দেখা দিয়েছে এবং আমি নিজেও জ্বরাক্রান্ত হয়েছি। তিনি আরও জানান, ” এ বছর সরকারী ও আমার ব্যাক্তি তহবিল মিলে সর্বমোট ১ হাজার ৩শ’ কম্বল দুস্হ্যদের মাঝে বিতরন করেছি। কিন্ত শীতের তীব্রতা এতো বেশী যে শীতবস্ত্র বরফগলা ঠান্ডা আবহাওয়া প্রতিরোধ করতে পারছে না”। গাজীরটেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াকুব আলী বলেন, ” দুস্হ্যদের শীত নিবারনের জন্য চলতি মৌসুমে সরকারী ও আমার ব্যাক্তি তহবিল মিলে সাড়ে ৯শ’ কম্বল বিতরন করেছি”। চরঝাউকান্দা ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন মৃধা জানান, ” গত ক’দিনের তীব্র শীতে চরাঞ্চলবাসী একচেটিয়াভাবে জ্বর রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। তাদের মাঝে আরও শীতবস্ত্র বিতরন করা দরকার”। সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আজাদ খান বলেন, ” আমি নিজে ও ইউএনও মিলে সরকারি কম্বল ইউনিয়নের দুস্হ্য পরিবারের মাঝে ঘুরে ঘুরে বিতরন করার পরও আমার ব্যাক্তি তহবিল থেকেও শীতবস্ত্র বিতরন করেছি। কিন্ত ক’দিন ধরে এলাকায় যেভাবে ভাইরাস জ্বরের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে তাতে সকলের আরও সচেতন হওয়া দরকার”।