• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ ইং
একজন মহৎ জেলা প্রশাসকের গল্প

নির্জন বালুচরে কুকুরের সঙ্গে শুয়ে থাকতো এই শিশুটি।

করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে জনমানবশূন্য কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। সৈকতের বালুচরে খোলা আকাশের নিচে ঘুমাত ৯ বছরের শিশু ইমন। ইমনের সঙ্গী ছিল একটি কুকুর। এক পুলিশ পরিদর্শকের মোবাইলে ধারণ করা সেই ছবি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।

আরও পড়ুনঃ   চারটি বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের মনে দাগ কাটে এই ছবিটি। বাকি গল্পটা মানবতার। এখন সেই ইমনের ঠিকানা হয়েছে ডিসি বাংলো। সেখানেই থাকছে, খাচ্ছে সে। জেলা প্রশাসকের এই উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে। সৈকতের ছবির বিপরীত একটি ছবি গতকাল শনিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসে।

এছবিতে দেখা যায় জেলা প্রশাসক নিজে তার বাংলোতে বসে ইমনকে নাস্তা করাচ্ছেন। জীর্ণ পুরনো পোশাকের পরিবর্তে তার গায়ে নতুন টি-শার্ট।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ফেসবুকে ছবিটি দেখেই মনটা ভারী হয়ে যায়। আমার একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে বললাম শিশুটির খোঁজ পেলে নিয়ে আসতে। শুক্রবার রাত একটার দিকে সৈকতের বালুচর থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে আমার বাংলোয় নিয়ে আসে। তিনি বলেন, ইমন অসুস্থ। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন আছে। হয়ত কেউ তাকে মেরেছে। তাই তাকে চিকিৎসা করাচ্ছি।

আরও পড়ুন ঃ করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যর সাথে কাজ করবে

ইমনকে নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি চাই ইমন আমার তত্ত্বাবধানে থাকবে। কিন্তু সে বারবার সৈকতে চলে যেতে চায়, কুকুরের কথা বলে। ওখানে থাকতে থাকতে সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। আগে চিকিৎসা করাচ্ছি। সুস্থ হওয়ার পর কোনো একটা ব্যবস্থা নেব।

কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মানস বড়ুয়া জানান, ২৬ মার্চ সৈকতে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হঠাৎ চোখে পড়ে নির্জন বালুচরে কুকুরের সঙ্গে শুয়ে আছে একটি শিশু। বিষয়টি আমার মনে খুব দাগ কাটে। তাই শিশুটির একটি ছবি ফেসবুকে আপলোড করি। মুহূর্তেই ছবিটি ভাইরাল হয়।

তিনি বলেন, ছবিটি দেখে ডিসি স্যার ইমনকে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেন। একটি ভালো কাজের অংশীদার হতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
তিনি জানান, শিশুটির সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, তার বাড়ি মহেশখালী পৌরসভার পুটিবিলা গ্রামের দাসি মাঝির পাড়া। মা-বাবা তাকে লেখাপড়ার জন্য পাঠিয়েছিল একটি মাদরাসায়। মাদরাসার মৌলভী তাকে পিটুনি দেওয়ায় সে পালিয়ে আশ্রয় নেয় সাগরপাড়ে। গত ১০/১২ দিন ধরে সাগরপাড়ে থাকছে।

জেলা প্রশাসকের নির্দেশে গত ২৭ মার্চ রাতে বিচ কর্মীদের সহায়তায় সমুদ্র সৈকত থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করেন জেলা প্রশাসনের প্রটোকল শাখা, পর্যটন শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরান জাহিদ খান এবং শিক্ষা ও আইসিটি শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ ইসলাম। রাত ১টার দিকে শিশুটিকে উদ্ধার করে ডিসির বাংলোয় নিয়ে যান তারা। উদ্ধার তৎপরতার পর নিজের ফেসবুক ওয়ালে স্ট্যাটাস দেন মো. ইমরান জাহিদ খান। সেখানে তিনি লিখেন, ‘পর্যটনের দায়িত্ব পাওয়ার পর কক্সবাজারের স্থানীয় গোষ্ঠীর নানা শ্রেণির লোকের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয়েছে। পর্যটন নির্ভর খেটে খাওয়া এ লোকগুলোর কষ্টের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে করোনাভাইরাসের আক্রমণে। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্টের স্বীকার মনে হয় বিচে ঘুরে বেড়ানো ছোট ছোট বাচ্চাগুলো, বিশেষত যখন সে অনাথ।

সংবাদসুত্রঃ দৈনিক আজাদী

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মার্চ ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« ফেব্রুয়ারি    
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।