• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
ফরিদপুরে ‘চা আপা’ রিনিয়া বেগমের জীবন যুদ্ধ

এন কে বি নয়ন, ফরিদপুর >>

রিনিয়া বেগম। একজন চা বিক্রেতা। অত্যন্ত শক্ত মনের মানুষ। লক্ষ্যে তিনি অবিচল। দীর্ঘদিন এগিয়ে চলছেন দীপ্ত প্রত্যয়ে। প্রায় দেড় যুগ ধরে চা বিক্রি করছেন রিনিয়া। সবার কাছে তিনি চা আপা নামেও পরিচিত। রিনিয়া যেন জীবন সংগ্রামে বিজয়গাঁথার রচয়িতা। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার সকলের প্রিয় মুখ রিনিয়া আপা। উপজেলার পৌর সদরের থানার পাশেই তার চায়ের দোকান। স্বামীর মৃত্যুর পর চার সন্তানকে নিয়ে বাবার হাত ধরে ১৮ বছর আগে শুরু হয় তার জীবন যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়া। তারপর থেকে আর থেমে থাকেননি তিনি।

জানাগেছে, উপজেলার বড়গাঁ গ্রামের বাসিন্দা রিনিয়া বেগমের স্বামী শাহাদৎ শেখ ২০০৫ সালে মারা যান। ২০১৮ সালে পিতা আতিয়ার রহমান ও ২০১৯ সালে মাতাও মারা যান। একান্ত কাছের তিনটি প্রিয় মানুষের মৃত্যর পর একাই সামলে চলেছেন সবকিছু। পিতৃ-মাতৃহীন আর স্বামী হারা অসহায়তাকে পিছনে ফেলে দু’মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন ইতিমধ্যে। এক মেয়ে আলফাডাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজের এইচএসসির ছাত্রী। ছোট ছেলে আলফাডাঙ্গা সরকারি আরিফুজ্জামান পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌর সদরের থানা সংলগ্ন প্রধান সড়কের পাশে রিনিয়া বেগমের চায়ের দোকান।তার বাবার বাড়ি বোয়ালমারী উপজেলার বারাংকুলা গ্রামে। আর স্বামীর বাড়ি উপজেলার বড়গাঁ গ্রামে। দীর্ঘদিন আলফাডাঙ্গা পৌর সদরে বাসা বাড়া করে থাকেন। প্রতিদিন সূর্য উঠার পরে খুব সকালে শুরু হয় তার চা তৈরির কার্যক্রম। চলে রাত ১২ থেকে ১টা পর্যন্ত। যেন কোন বিরাম নেই। জীবন সংগ্রামে অবিরাম ছুটে চলা। চায়ের পাশাপাশি বিস্কুট,রুটি, পান-বিড়িও বেচেন। দোকানে নেই কোন সহযোগী। চা তৈরি করা, ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়া, বিলের টাকা-পয়সা নেওয়া থেকে সব কাজই তিনি একা দু’হাতে সামলান। মাঝে মধ্যে ক্লান্ত হয়ে পড়লে চা বানানোর ফাঁকে দাড়িয়ে দাড়িয়েই একটু ঝিমুনি দিয়ে শক্তি সঞ্চয় করেন সংগ্রামী রিনিয়া।

দোকানে চা বানানোর মাঝেই সরাসরি কথা হয় রিনিয়া বেগমের সাথে। তিনি বলেন, ২০০৫ সালে স্বামী মারা গেছেন। ২০১৮ সালে বাবা মারা যান। এরপর মা ও চলে যান। তিন মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়ে চা বিক্রি করে কোনমতে জীবনযাপন করছি। কিছু দিন আগে আমার পেটে টিউমার অপারেশন করা হয়। এতে অনেক টাকা ব্যয় হয়। বেশ কিছু দিন দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছে। আমি এখনও অসুস্থ। দোকান চালাতে কষ্ট হয়। তারপরও কি আর করবো। আমার কোন জমিজমা, সহায় সম্পদ নেই। সরকারী-বেসরকারী ভাতা, কোন দান-অনুদান, সাহায্য-সহযোগীতা কিছুই পাই না।
ছেলেমেয়ের খাবার লেখাপড়ার খরচ চালানো ও নিজের জীবন চালাতে চায়ের দোকান চালাতে হচ্ছে। সব কিছুর দাম বাড়তি। খরচ বেশি। আমি সকাল সন্ধ্যা দোকান চালিয়ে কষ্ট করে উপার্জন করি। বাবা-মা,স্বামীর কোন সম্পদও নেই। আমারও কিছুই নেই। এই চায়ের দোকান করেই কোনমতে জীবন পার করছি।

আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি,উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোঃ এনায়েত হোসেন বলেন, দোকানের নাম রিনিয়া টি স্টোর। এখানে সব ধরনের শ্রেনী-পেশার মানুষ প্রতিদিন চা খেতে আসে। রিনিয়ার তিন মেয়ে এক ছেলে। বাবা-মা,স্বামী মারা গেছেন। ছেলেমেয়ে আর চায়ের দোকানই সম্বল। জমিজমাও নেই।উপজেলা ছাড়াও আশপাশের উপজেলার নামি-দামি মানুষ এখানে চা খেতে আসে। রিনিয়া বেগম সমাজের একটি দৃষ্টান্ত। আমাদের সমাজে অনেক পুরুষ মানুষ আছে তারাও সামর্থ থাকা অবস্থায়ও বেকার-অলস জীবন কাটাচ্ছে। কিন্তু রিনিয়া একজন নারী হয়েও কষ্ট করে স্বাবলম্বী জীবন চালাচ্ছেন।

উপজেলার গোপালপুরের বাসিন্দা, কবি,সাহিত্যিক
আসাদুজ্জামান টুনু বলেন, রিনিয়ার দোকানে ছোট-বড়, নামি-দামি বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ তার দোকানে চা খেতে আসে। তার আচার আচরণ ও কথা বার্তায় সবাই সন্তুষ্ট। রিনিয়া দেশ ও সমাজের উদাহরণ। সংগ্রামী জীবন তার।

এ ব্যপারে আলফাডাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক প্রবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, রিনিয়া বেগম,একজন চা বিক্রেতা। সবার কাছে তিনি চা আপা নামেও পরিচিত। শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, সমাজকর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ রিনিয়ার দোকানে চা পান করতে আসেন। তার হাতের এক কাপ চা না খেলে আমাদের মনে শান্তি আসেনা। তার স্বামী, বাবা-মা রিনিয়া গত হয়েছেন। তার কেউ নেই। একাই অনেক কষ্ট করে ছেলেমেয়েদের নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন।

এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মোঃ সাইফুর রহমান সাইফার বলেন, রিনিয়া বেগম যদি সরকারি কোন ভাতা ও সহযোগিতা পাওয়ার উপযুক্ত হন। সরকারি নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে তাকে সাধ্যমতো সহায়তায় করা হবে। এছাড়াও আমি ব্যক্তিগত ভাবে তার সাহায্য সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।