• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
ফরিদপুরে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বেত ঝাঁড় বিলুপ্তির পথে

সনতচক্রবর্ত্তী:প্লাস্টিকের পন্যের কদর বেড়ে যাওয়ার কারণে ফরিদপুর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বেঁত শিল্প। সাধারণত গ্রামের লোকেরাই বেত শিল্পের সাথে জড়িত। তাই এ শিল্পকে গ্রামীণ লোকশিল্প বলা হয়। কালের বিবর্তনে এবং প্রযুক্তির বদৌলতে পুরনো এ শিল্পের ঐতিহ্য আজ আমাদের মাঝ থেকে বিলুপ্তির পথে। তার স্থানে দখল করে নিচ্ছে প্লাস্টিকের তৈরি আসবাবপত্র। এর মধ্যে প্লাস্টিক পণ্যের কদর বেশী। বাজারে প্লাস্টিক সামগ্রীর সাথে পাল্লা দিতে না পেরে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বেত শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে।

এজন্য বাজারে বেতের তৈরী আসবাবপত্রের চাহিদা না থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহি বেত শিল্প। বেত শিল্পিরা জীবিকা নির্বাহের জন্য তাদের বাব-দাদার আদিপেশা ছেড়ে দিয়ে এখন নতুন- নতুন পেশায় অগ্রসর হচ্ছে। এখনও যারা পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া আদিপেশা ধরে রয়েছেন তাদের জীবিকা চলে কোনো রকমে। জানা যায়, বর্তমানে স্বল্প দামে হাতের নাগালে প্লাস্টিক সামগ্রী পাওয়ায় কুটির শিল্পের চাহিদা আর তেমন নেই। তাছাড়াও দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে এ শিল্পের কাঁচামাল বেত। এখন আর আগের মতো বাড়ির আশেপাশে বেত ঝাড় রাখছে না কেউ। সেগুলো কেটে বিভিন্ন চাষাবাদসহ দালান তৈরি করছে মানুষ। তাই বেতর তৈরির কাঁচামাল আর আগের মতো সহজেই পাওয়া যায় না।
জেলার কয়েকটি উপজেলা খোঁজ নিয়ে জানা যায়,এক সময় গ্রামের কৃষক শ্রেণীর অতি প্রয়োজনীয় গাছ হিসেবে পরিচিত বেত গাছ। তারা বেত দিয়ে নানা ধরনের কাজ করে থাকে। কৃষকের মাটি কাটার ঝুড়ি ,শুকনো বেত দিয়ে বিভিন্ন হস্তশিল্প জাতীয় জিনিসপত্র তৈরি করা হয়, যেমন- চেয়ার, টেবিল, মোড়া, ডালা, কুলা, চাঙ্গারী, মুড়া, হাতপাখা, চালোন, গোলা, ডোল, ডুলা, চাঁচ, ধামা, বই রাখার তাক, সোফা, দোলনা, খাট, টেবিলল্যাম্প, ল্যাম্পশেড ইত্যাদি। এটি গৃহনির্মাণ কাজেও ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে রেস্তরাঁ, ঘর বা অফিসের শৌখিন পার্টিশন হিসেবে এর ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে।

এছাড়া লম্বা বেত ফালা করে নানা কিছু বাঁধার কাজেও ব্যবহার করা হয়। ফলের জন্য বেতের চাষ করা হয় না; বেতের প্রধান ব্যবহার হস্তশিল্প সামগ্রী তৈরির কাঁচামাল হিসেবে।

বোয়ালমারী পৌরসভার কামারগ্রামের বেত শিল্পীর কারিগর নিমাই বিশ্বাস বলেন, বংশানুক্রমে পাওয়া আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র কর্ম হচ্ছে বাঁশ-বেত শিল্প । এই বাঁশ-বেত দিয়ে আমরা ডালা, কুলা, চালন, খাচি,ঝুডি ইত্যাদি বানাতাম। এসব দেশী পণ্যের একসময় প্রচুর চাহিদা ছিল। দিন বদলাই গেছে। প্লাষ্টিক ঢুকে আমাদের কদর কমে গেছে। প্লাষ্টিকের দখলে চলে গেছে বাঁশ-বেতের সকল নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। তাই শুধু এ পেশা দিয়ে আমরা চলতে পারছিনা।

ময়না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক কালিপদ চক্রবর্ত্তী বলেন, একসময় গ্রামের মানুষের ব্যবহারের জন্য চাল ও ধান মাপের সের,দাঁড়ি পাল্লা, ঝুড়ি, ঝাঁকা বা ধামা, হাত পাখা, হাতের লাঠিসহ বেতের চেয়ার, সোফা, দোলনা, ফুলদানি তৈরি হতো। প্রতিটি বাড়িতে ওইসব পণ্যের প্রচুর চাহিদা ছিল। তবে ধীরে ধীরে এখন এসব পণ্যের কদর কমে গেছে। একদিকে পতিত জমিতে ফসল উৎপাদন করতে জঙ্গল কেটে ফেলছেন কৃষকেরা। সেখানে এখন চাষ করা হচ্ছে নানা জাতের কৃষি ফসল।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।