রাশেদুল হাসান কাজল, ফরিদপুর।
ফরিদপুরে “ভুল অস্ত্রোপচারে প্রসূতির জরায়ু কেটে ফেলার অভিযোগ” টি মিথ্যা এবং তার ভুল বুঝতে পেরে সকলের কাছে ক্ষমা চাইলেন রোগীর পরিবারের স্বজনরা।
অভিযোগটির বিষয়ে হাসপাতাল ও ডাক্তারের কোন প্রকার দায় নেই জানিয়ে হাসপাতালে গনমাধ্যমের কাছে শনিবার একটি অঙ্গিকার নামা পাঠিয়েছেন প্রসূতির শশুড় ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের গেন্দু মোল্লার হাটের রফিক মোল্লা।
এর আগে গত ২৪ মার্চ শুক্রবার সন্ধ্যায় তার পুত্রবধুকে নিয়ে শহরের মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে সিজার অপারেশনের জন্য ভর্তি হন। সেখানে রাতে তাদের একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেন মা। ডাক্তার এসময় রোগী ও সন্তানকে বাঁচাতে প্রসূতির পরিবারের সম্মতিতে তার জরায়ু কেটে ফেলেন ডাক্তার। এ ঘটনায় দেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ফরিদপুরে “ভুল অস্ত্রোপচারে প্রসূতির জরায়ু কেটে ফেলার অভিযোগ” এ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।
যা ভুল বলে অঙ্গিকারনামা রফিক মোল্লা বলেছেন, আমি গ্রামের সহজ সরল কৃষক। আমার পুত্র বধূর সিজার অপারেশনের পর তার জয়ারু অপসারণের বিষয়টিকে একটি মহল ভুল ভাবে আমার কাছে উপস্থাপন করে। আমি অন্যের প্ররোচনায় বিষয়টি প্রথমে মিডিয়ার সামনে তুলে ধরলে তারা সংবাদ প্রকাশ করে। এর ফলে হাসপাতালের সুনামের যে ক্ষতি হয়েছে এজন্য আমি জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
রফিক মোল্লা বলেন, সংবাদ কর্মী সংবাদে ডাক্তার বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোন বক্তব্য নেন নি। তাদের বক্তব্য নিলে আমার ভুল তথ্য উপস্থাপনের সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যেত। এখন আমার পুত্র বধূ ও নাতি সুস্থ আছে। এ হাসপাতালেই চিকিৎসা নিচ্ছে। আমার কোন অভিযোগ নেই, আমি অন্যের প্ররোচনায় পরে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলাম, আমি ক্ষমা চাই।
অপারেশনের পূর্বে বন্ড শই প্রদান করেন রফিকের জামাতা সোহান শরীফ বলেন, অপারেশনের পূর্বে আমিই স্বাক্ষর করি। অপারেশন চলার সময় ওটি রুম থেকে কয়েকবার রোগীর অবস্থা সম্পর্কে আমাদের সাথে পরামর্শ করে। প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে রক্ত জোগাড় করতে বলে। কিন্তু আমরা না বুঝেই ডাক্তারকে দোষারোপ করতে থাকি।
ওই হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে প্রসূতি মা রিক্তা বলেন, আমি ও আমার সন্তান সুস্থ আছি। কোথায় কি হয়েছে আমি কিছুই জানি না। শুধু এটুকু জানি জীবনের চেয়ে বড় মূল্যবান কিছু নেই।
প্রসূতির অপারেশন করেন ডা: কল্যান কুমার সাহা৷ তিনি মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে সপ্তাহে দু’দিন শুক্রবার ও শনিবার চেম্বার ও ওটি করেন। তিনি মূলত ঢাকার পিজি হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ডাক্তার।
ডাক্তার কল্যান বলেন, ওটিতে নেবার পর রোগীর অবস্থা ভাল ছিল না। মা ও সন্তানের মধ্যে একজনকে বাঁচানোর অবস্থা তৈরি হয়। তখনও রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বলি। কাকে বাঁচাবো মতামত নেই। এরপর অপারেশন সঠিক হয়। একটি পুত্র সন্তান হয়। সন্তান সুস্থ ছিল। কিন্তু তখনও মায়ের রক্ত ক্ষরণ বন্ধ হচ্ছিল না। তখনও আমরা রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বলি ও দ্রুত রক্ত জোগাড় করতে বলি। এক পর্যায়ে মা কে বাঁচাতে তার জরায়ু কাটতে বাধ্য হই। এখন মা ও সন্তান সুস্থ আছেন। এখানে ভুল অস্ত্রোপচার কোথায় বলুন?
মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মানিক চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন মিডিয়াতে যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে তাতে ডাক্তার বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোন মতামত বা বক্তব্য নেই। একটি অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে আমার প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন করা হয়েছে। যা আইন সমর্থন করেন না।
হাসপাতালটির চেয়ারম্যান নুর মো: মাজেদ বলেন, একটি মহল আমাদের প্রতিষ্ঠানের নামে অপপ্রচার চালানোর জন্য তাদেরকে প্ররোচনা দিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করিয়েছে। অপরদিকে রোগীর স্বজনরাও তাদের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে। আমরা অপপ্রচার কারীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহনের কথা ভাবছি।