কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে ৬৬টি নমুনার করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরীক্ষার ‘নিশ্চিত’ ফল আসেনি। যদিও ওই ৬৬ জনকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে জানানো হয়েছিল। তবে নমুনা পরীক্ষার ফল নিশ্চিত না থাকায় সেগুলো ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানে পরীক্ষায় দু’টি নমুনার ফল করোনা পজিটিভ এসেছে। বাকি ৬৪টি নমুনার ফলই এসেছে নেগেটিভ।
শুক্রবার (১ মে) কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, গত ২৭ এপ্রিল কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে ৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে একটি নমুনা নিশ্চিতভাবে পজিটিভ হিসেবে আসে। তবে বাকি ৬৬টি নমুনার রেজাল্ট ‘পজিটিভ’ এলেও সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন না ল্যাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তবে সে নমুনাগুলোও ‘পজিটিভ’ বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। সে অনুযায়ী ওই ব্যক্তিদের আইসোলেশনে রাখা হয়।
এদিকে, নমুনা পরীক্ষা নিয়ে সন্দেহ থাকায় ল্যাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নমুনাগুলো ঢাকার একটি ল্যাব পরীক্ষার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করতে বলেন। সে অনুযায়ী জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে নমুনাগুলো ঢাকায় জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে (আইপিএইচ) পাঠানো হয়। সেখানে পরীক্ষার পর বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) রাতে সিভিল সার্জন কার্যালয়কে জানানো হয়, ৬৪ নমুনার ফল নেগেটিভ এসেছে। মাত্র দুইটি নমুনার ফল পজিটিভ এসেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ড. মো. কামরুজ্জামান সোহেল সারাবাংলাকে বলেন, মেডিকেল কলেজ থেকে প্রথমে আমাদের স্যাম্পলের রেজাল্ট পজিটিভ বলে জানানো হয়েছিল। সে অনুযায়ী সবাইকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে গণ্য করা হয়। পরে জানতে পারি, পরীক্ষার ফল নিয়ে সন্দেহ ছিল। সে অনুযায়ী সেগুলো ঢাকায় পরীক্ষা করে দুইটি ছাড়া বাকি সবগুলো নেগেটিভ এসেছে বলে গতকাল জানতে পারি।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের করোনা ইউনিটের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজনীন আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, গত ২৭ এপ্রিল যে টেস্টগুলো করা হয়েছে, এর মধ্যে ৬৬টি টেস্টের ফল নিয়ে সন্দেহ ছিল। আমরা এগুলোকে ‘অমীমাংসিত’ বলেছি। সেগুলোকে আবারও পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানকার পরীক্ষায় দু’জনেরটা পজিটিভ এসেছে, বাকি ৬৪ জনের নমুনা নেগেটিভ এসেছে।
ডা. নাজনীন বলেন, যাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল, সবাই ছিলেন সন্দেভাজন। তাই পরীক্ষার ফল ‘অমীমাংসিত’ থাকলেও সতর্কতার কারণে তাদের লকডাউন থাকতে বলা হয়েছিল। সে কারণেই হয়তো ফল পজিটিভ হিসেবে সবাই ধরে নিয়েছিলেন।
জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবের রেজাল্ট নিয়ে সন্দেহ ছিল। ওখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. নাজনীন জানান, তারা পরীক্ষার ফল নিয়ে নিশ্চিত নন। সে কারণে আমরা আবার নমুনাগুলো ঢাকার জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে পাঠিয়েছিলাম। সেখানকার পরীক্ষায় দুইটি বাদে বাকি সব নমুনার ফল নেগেটিভ এসেছি।
ডা. আনোয়ারুল বলেন, গত রাতেই আমাকে ঢাকা থেকে পরীক্ষার ফল জানানো হয়েছে। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সবাইকে ফল জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে নেগেটিভ রেজাল্ট এলেও ওই ব্যক্তিরা যেহেতু সন্দেহভাজন ছিলেন, তাই আপাতত সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তবে লকডাউন তুলে নেওয়া হয়েছে।
সিভিল সার্জন বলেন, এখানকার ল্যাবে নতুন পরীক্ষা শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞরা এসে বিষয়টি দেখছেন। আশা করি আর সমস্যা হবে না। একই আশাবাদ জানালেন ল্যাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. নাজনীনও।সারাবাংলা