• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
জীবন সংগ্রামে গেরদার মনোয়ারা লেবু বিক্রি করে পথে-পথে

বিজয় পোদ্দার,ফরিদপুর:

তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়?/দুখের দহনে, করুণ রোদনে তিলে তিলে তার ক্ষয়।/আমি তো দেখেছি কত যে স্বপ্ন মুকুলেই ঝরে যায়।/শুকনো পাতার মর্মরে বাজে কত সুর বেদনায়…………….। বাস্তবতার থাবায় কখনো কখনো জীবন ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। স্বপ্ন ভাঙা মর্মর বেদনার কান্না কেউ শোনে কেউ শোনেনা। তারপরও পথ চলতে হয়। জীবন-সংগ্রামে ছুটতে হয় প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ। অভাব ক্ষুধা নামক শব্দের সাথে মানুষকে যুদ্ধ করে করে আগাতে হয়। সাম্প্রতিক মহামারী করোনা ভাইরাসে গোটা বিশ্ব যখন বিপর্যস্থ, বিপর্যস্থ আমার দেশ ও মানুষ। টানা লকডাউনে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের কর্মহীনতা নানা দূর্ভোগের মধ্যে ফেলেছে। আর্থিক সঙ্কট আর খাদ্য সঙ্কট কাটাতে সরকারও ধারাবাহিকভাবে চেষ্টা করেছে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে।

কিন্তু ফরিদপুরের বেশীর ভাগ ধনকুপের নিস্তব্ধতা আমাদের বিবেকের দরজায় কড়া নেড়েছে কি নাড়েনি? তা মানুষই ভালো জানে। একমুঠো ভাতের সংগ্রামে এই দুর্যোগ মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করে শহরের পথে প্রান্তরে লেবু বিক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করে এক নারী। ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নে রঘুয়াপাড়ার বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম (৩৫) এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান।

সেদিন শহরের মায়া সুপার মার্কেটে রাজিবের কম্পিউটারে সংবাদ তৈরীর কাজ করছিলাম? হঠাৎ কানে এলো এই লেবু নিবেন, লেবু………। মাস্ক পরিহিত মুখ ঢাকা এক ঘামে ভেঁজা নারী। দুটো চোখে যেন কি না বলা কথা? আমাদের পেছনে কাজে ব্যস্ত থাকা শ্রমিক নেতা গোলাম আজাদ তাকে ডাকল এই লেবু ওয়ালা, দেখি কেমন লেবু। ১০/১২ হালি লেবু কিনে নিল সে। হঠাৎ তার মুখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম এই পরিস্থিতিতে কেন বের হয়েছেন? উত্তরে সে জানায় ভাই কি করবো? পেটে ক্ষুধা লাগে।

ঘরে দশ বছরের শিশু সন্তান রয়েছে। ভাতের জন্যইতো পথে নামছি। আল্লাহ যদি বাঁচায় বাঁচব…….। কিছুক্ষণ রাজিবের কম্পিউটারের কিবোর্ডের বাটন থেমে গেল। আমি তাঁর বিস্তারিত জানতে চেষ্টা করলাম। সে জানায় ১২ বছর ধরে স্বামী পরিত্যাক্তা। পলাশ নামে তার ১০ বছরের এক পুত্র রয়েছে। সন্তানের জন্মের পর স্বামী আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র চলে যায়। আর খবর রাখেনি। মায়ের সংসারে এমনিতেই অভাব। এটা-সেটা করা, অন্যের বাসায় ঝিয়ের কাজ পর্যন্ত করেছে। সেখানেও নানা প্রতিবন্ধকতা। তাই মাঝেমধ্যে ফরিদপুর শহরে এসে শরীয়তুল্লাহ বাজার থেকে আড়ৎদারদের কাছ থেকে লেবু, শসা এটা-সেটা ক্রয় করে ঘুরে ঘুরে বিক্রয় করে। কোন কোন দিন দেড়শ থেকে দুইশত টাকা লাভ হয়। তা দিয়ে নিজে, সন্তান ও মাকে একটু সাহায্য করে।

ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করেছে। আগামী স্বপ্ন কী? জানতে চাইলে নিঃস্তব্ধ হয়ে যায় সে, কোন কথা বলেনা। নিমিষেই লেবুর বোঝা মাঁথায় করে আবার ছুটল এই লেবু, লেবু নিবেন ……….। ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের রঘুয়াপাড়ার বাসিন্দা কদম ফকিরের স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের মাতা ফিরোজা বেগম জানান, আমার দুই মেয়ে, দুই ছেলে। এক ছেলে ঢাকায় জুট মিলে শ্রমিকের কাজ করে, আরেক ছেলে ফরিদপুর বাজারে এটা-সেটা বিক্রয় করে। আমি অপারেশনের রোগী অসুস্থ। স্বামীও কিছু করে না।

১২ বছর আগে আমার দ্বিতীয় মেয়ে মনোয়ারার বিবাহ দিয়েছিলাম। এক নাতি হবার পর জামাই চলে যায়। ভাত-কাপড় দেয়না মেয়েকে। আমার মেয়ে খুব কষ্ট করে, ছোট্ট নাতির জন্য,মেয়ের জন্য মায়া হয়। কিন্তু কি করবো ভাই? ও সাহস করে শহরে ঘুরে-ঘুরে শ্রম দিয়ে উপার্জন করে, দুইটা ভাত খাবার জন্য।

আমাদের সমাজে লোক চক্ষুর আড়ালে কতকিছু হয়। আমরা যদি মানবতার সম্প্রসারিত হাত বাড়াই এক-এক গ্রামে, এমন একেকজন মনোয়ারার পাশে দাঁড়াই তাহলে মনোয়ারারা স্বপ্ন দেখতে সাহস পেত। তারপরও এদের মতো সংগ্রামী নারীদের সালাম জানাই। যারা জীবনকে যুদ্ধের শ্রমে জয়ী হবার সংকল্পে অবিরাম ছুটছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

ডিসেম্বর ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« নভেম্বর    
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।