• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে মে, ২০২৪ ইং
বিষয়:মৃত্যু এবং করোনায় মৃত্যু!- শাহ্ মোঃ সজীব,সহকারী কমিশনার(ভূমি),সদর উপজেলা,ফরিদপুর

বিষয়:মৃত্যু এবং করোনায় মৃত্যু!

শাহ্ মোঃসজীব,সহকারী কমিশনার (ভূমি)সদর উপজেলা,ফরিদপুর✍️

মৃত্যু অনিবার্য! সকল ধর্মে বিশ্বাসীগণই তা বিশ্বাস করে! যারা ধর্ম নিয়ে দো’টানায় থাকে তারাও বিশ্বাস করে। এমনকি যারা কোন ধর্মেই বিশ্বাস করে না তারাও বিশ্বাস করে মৃত্যু অনিবার্য! বর্তমানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কাজ করার সুবাদে ‘মৃত্যু’ এর মত নির্মম সত্য বারবার সামনে আসে। অন্তত তিনভাবে এটি সামনে আসে। যথা- ক) নামজারি বা মিউটেশন করার সময় প্রায়ই চোখে পড়ে অমুক মারা যাওয়ায় তার সম্পত্তি ওয়ারিশদের নামে আসছে। আবার মৃতের ওয়ারিশ বিক্রি করছে। বারবার মৃত্যু সনদ দেখি। চেক করি সে মরল কিনা!! চেয়ারম্যান সাহেব সনদ দিয়েছে।
খ) বীর মুক্তিযোদ্ধারা মারা গেলে গার্ড অব অনার দিতে যাই। প্রায়শই যেতে হয়। কারণ বীর মুক্তিযোদ্ধারা এখন জীবনের সায়াহ্নে! অবস্থান লাশ থেকে একটু দুরেই। নিজ হাতে নিথর দেহের উপর পতাকা বিছিয়ে দেই। পুষ্পমাল্য অর্পণ করি। আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করি! মৃতব্যক্তি কেউ না হলেও মৃত্যু তো আমারও আপন।
গ) আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক কবর থেকে লাশ উত্তোলন করতে হয়। এটা সচরাচর না হলেও কখনো কখনো করতে হয়। তরতাজা লাশখানা কি করে গলিত হয়ে যায় তা স্বচক্ষে অবলোকনসহ সুরতহাল প্রতিবেদন লিখতে হয়। আমি যতবারই করেছি ততবারই লাশটিকে খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছি। গন্ধ হলেও দেখেছি। কর্দমাক্ত কাফনের কাপড় সড়িয়ে দেখেছি। কখনো কখনো পুলিশ সদস্যরা অবাক হতো। ‘স্যার আপনি তো অনেক দেখেন। কেউ কেউ কাছে আসে না।’ আমি দেখি আর ভাবি আমারও তো এমন পরিণতি হবে। হয়ত একটু আগে আর পরে। আবার এটাও ভাবি, আহা বেচারা লাশ। মাটির ভেতর ঢুকেও শান্তি নাই। টেনে হিঁচড়ে বের করে ফেলছে!
যা বলতে এত কথা বলেছি সেখানে যাই। করোনা আসার পর থেকে এই মৃত্যুও একটা ভিন্নরুপ ও মাত্রা নিয়েছে! মারা যাওয়ার পর মৃতদেহটি সৎকার/দাফন করতে হয়। এটা যতটা ধর্মীয় তার চেয়ে বেশি সামাজিক। কারণ মৃতদেহটি ওপরে রাখা যায় না। লাশটিকে চোখের আড়ালে নিয়ে যেতে হয়। একেক ধর্মে একেক প্রক্রিয়া। কিন্তু উদ্দেশ্য একই। তুমি গন্ধ হয়ে গিয়েছো! করোনা যেহেতু একটি প্রাণঘাতী ভাইরাস। তাই এতে বেশ কিছু মৃত্যু হয়েছে। ভাইরাসটি যেহেতু খুবই সংক্রামক মানুষ ভীত! তবে সবাই ভীত হয়ে প্রতিরোধমূলক কাজ না করলেও মারা গেলে ঠিকই ভয় পায়। নিজের সন্তান, স্ত্রী, স্বামী, আত্মীয় স্বজনরা ধরছে না।
গতকালকে আমার অধিক্ষেত্রে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মারা যান। আমার ওপর দায়িত্ব পড়ে গার্ড অব অনার প্রদানসহ আনুষ্ঠানিক কাজ সম্পন্ন করার। আমি যতটুকু সম্ভব প্রস্তুত হয়ে শ্মশানে চলে আসি। কিন্তু যথাসময়ে লাশটি আসেনি। কারণ হাসপাতালে ধরার কোন লোক নেই। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয় একটা স্বেচ্ছাসেবক টিম পাঠিয়ে লাশটি নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন। লাশ আসলে শ্মশান সংলগ্ন মানুষজন বেঁকে বসে। তারা লাশ দাহ করতে দিবে না। তাদের বিশ্বাস এতে করে ভাইরাস তাদেরও ছড়াবে। পরে পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এর সহযোগিতা নিয়ে গার্ড অব অনার ও দাহ সম্পন্ন করা হয়। ইউএনও মহোদয়কেও আসতে হয়।
যেটা ভাবার বিষয় ঐ শ্মশানে হাজার হাজার মৃতদেহ পোড়ানো হয়েছে। কোন সমস্যা হয়নি। আজ সমস্যা! কারণ কি! করোনা! তাই মৃত্যু হলেও শেষ কথা নয়! কিসে মৃত্যু হচ্ছে সেটাও ম্যাটার করছে! স্বজনবিহীন বিদায়! এটা ভাবতেই কষ্ট হয়! কিন্তু আমরা করোনা নিয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে কতটুকু সচেতন আছি। নিজেকে প্রশ্ন করলে উত্তর পাওয়া যাবে। ২৬ মার্চ, ২০২০ থেকে দেখেছি আসলে আমরা কি করেছি। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক বা এর কাছাকাছি না আসা পর্যন্ত আত্মসংযম জরুরি। না হলে এমন বিদায় হবে যখন কেউ থাকবে না। কখনো কখনো মৃত্যুর পরও আপনাকে নিয়ে বিদ্রোহ হবে যা সুখকর নয়! হাজারো সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বই আপনার। সরকার বা অমুক আমার জন্য কিছুই করে নি বা যা করছে তা যথেষ্ট নয় এমন ভেবে বাজারে গিয়ে অযথা চা খেলে বিপদটা আপনারই হবে। আমরা শুধু একটা সংখ্যা ধরে নিব। তাই, এমন মৃত্যু বা অসহনীয় দুর্ভোগ এড়াতে সচেতন হোন, প্লিজ! যা না করলেও চলবে তা করার কোন প্রয়োজন নেই।

১ জুন, ২০২০
ফরিদপুর সদর।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মে ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« এপ্রিল    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।