একটা সময় রাজশাহীর পদ্মা নদী থাকত পানিতে টইটুম্বুর। মাঝ নদীতে নৌকা ভাসিয়ে মাছ ধরার ব্যস্ততা থাকত মৎস্যজীবীদের। কিন্তু এখন বছরের বেশিরভাগ সময়ই নদীর অর্ধেকেরও বেশি অংশ শুকিয়ে পরিণত হয় ধু ধু বালুচরে। শুধু বর্ষাকালে পদ্মায় পানি আসে। মাস তিনেক পর আবার সৃষ্টি হয় বালুচর।
গেল এক মাস ধরে পদ্মা নদীতে অল্প অল্প করে পানি বাড়ছে। এখন পদ্মা ফিরেছে তার পুরনো রূপে। আগের মতো পদ্মার গর্জন এখনও না থাকলেও নদীর বুক ভরেছে পানিতে। নদীর বুকে জেগে ওঠা বালুচরগুলো আবার ডুব দিয়েছে পানিতে। এখন নদীর পানির ঢেউয়ের সাথে সাথে ভেসে যাচ্ছে কচুরিপানা। জেলেরাও ব্যস্ত হয়েছেন মৎস্য শিকারে। কেউ কেউ পরিকল্পনা করছেন নৌকা ভ্রমণের।অবশ্য নদীতে পানি আসার ফলে রাজশাহীর অনেক স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙনের শঙ্কা। এ অবস্থায় বন্যা ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে সরকারের কাছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা চেয়েছে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পদ্মার পানির তোড়ে কোথাও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সে টাকায় তা মেরামত করা হবে।রাজশাহী পাউবোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভরা মৌসুমে পদ্মার পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ১৯ মিটার। এরপর পানি কমতে কমতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সর্বনিম্ন উচ্চতা হয় ৯ দশমিক ৪৬ মিটার। অবশেষে গেল জুনের প্রথম থেকে পদ্ময় অল্প অল্প করে পানি বাড়তে শুরু করে।রাজশাহী পাউবোর গেজ রিডার এনামুল হক জানান, রাজশাহী মহানগরীর বড়কুঠি পয়েন্টে বুধবার (০১ জুলাই) পানির পরিমাপ পাওয়া গেছে ১৪ দশমিক ৭৩ মিটার। এর আগে ভোর ৬টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৪ দশমিক ৭১ মিটার। আগের দিন মঙ্গলবার ভোর ৬টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৪ দশমিক ৬৪ মিটার। মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত পানি বাড়ে দুই সেন্টিমিটার। রাজশাহীতে পানির বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। সে অনুযায়ী পানি এখনও বিপদসীমার ৩ দশমিক ৭৭ মিটার নিচে।পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বৃষ্টির কারণে এখন নদীতে পানি বাড়ছে। তাছাড়া ভারত থেকেও পানি আসছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, গেল জুন মাসে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার। এর মধ্যে গত শনিবার ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩৯ দশমিক ৫ মিলিমিটার। গতবছর রাজশাহীতে মোট বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল ১ হাজার ২৪১ দশমিক ৭ মিলিমিটার।
রাজশাহী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী কোহিনুর আলম বলেন, বৃষ্টির কারণেই মূলত নদীতে পানির পরিমাণ বাড়ছে। বর্তমানে যেভাবে পানি বাড়ছে এটা অস্বাভাবিক নয়। অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাত হলে বন্যার সম্ভাবনা থাকে। রাজশাহীতে বন্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে কি না তা আগামী কয়েকদিনের পানির প্রবাহ দেখে বোঝা যাবে।তিনি বলেন, বন্যা পরিস্থিতির জন্য আমাদের জরুরি কাজের পরিকল্পনা থাকে। এবারও আছে। যেসব এলাকায় পানির তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তার সংস্কারের জন্য আমরা তালিকা করেছি। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা চেয়েছি। আশা করছি অর্থ বরাদ্দ করা হবে, সেটা দিয়ে আমরা কাজ করতে পারব। তবে পানি বিপদসীমা অতিক্রম না করলে সমস্যা হবে না।
গত ১৮ বছরে রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে মাত্র দুইবার। এর মধ্যে ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত একটানা ৮ বছর রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। কেবল ২০০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বিপদসীমা ছাড়িয়ে রাজশাহীতে পদ্মার সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ৮৫ মিটার।এরপর ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মা বিপদসীমা অতিক্রম করেছিল। ওই বছর পদ্মার উচ্চতা দাঁড়িয়েছিল ১৮ দশমিক ৭০ মিটার। এরপর আর এই রেকর্ড ভাঙেনি।