পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ায় বাড়ছে করোনা সংক্রমণ
সুমন ভূইয়া সাভার প্রতিনিধিঃ গত চারদিন আগেও সাভার উপজেলায় করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু পোশাক কারখানাগুলো খুলে দেওয়ায় ক্রমশই বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা।
কারখানাগুলোতে স্বাস্থ্যগত নিয়ম না মেনে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব না রেখে কারখানায় কাজ করাসহ প্রবেশ ও বের হওয়া এবং বার বার কারখানা চালু আর বন্ধ করার নাটকের কারণে সংক্রমণের হাড় বেরেই চলেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী ১৪ দিন কঠিন সময়। তাই ভীষণ সতর্কতা নিয়ে পরিকল্পিতভাবে পার করতে হবে। যদি সেটা না হয় তাহলে সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু এবং রোগী দুটোই দেখা যাবে মে মাসে।
শনিবার (০২ মে) সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, সাভারে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ১৪ এপ্রিল। আক্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির চিকিৎসক। এরপর থেকে প্রতিদিন গড়ে একজন করে গত ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৩০ জনের নমুনা পরীক্ষা শেষে রোগীর সংখ্যা ছিল ১৮ জন। কিন্তু গত দুইদিনে ৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে ১৬ জনের শরীরের করোনার উপস্থিত পাওয়া যায়। ১৬ জনের প্রায় সবাই পোশাক শ্রমিক। এখন পর্যন্ত সাভারে ৪১৬ জনের পরীক্ষা করে ৩৪ জনের পজেটিভ পাওয়া গেছে।
করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গত ৩০ এপ্রিল সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বরাবর একটি চিঠি পাঠান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সায়েমুল হুদা। চিঠিতে তিনি। পোশাক কারখানা বন্ধের পাশাপাশি উপজেলার প্রবেশপথগুলো বন্ধ করা অনুরোধ জানান।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সায়েমুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, সাভারকে করোনা থেকে নিরাপদ রাখতে প্রথম থেকেই কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু কারখানাগুলো খোলার পর থেকে সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। সাভারে করোনা আক্রান্ত এমন রোগী আছে যার তথ্য আমাদের কাছে নেই। কারণ তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে সাভারে ঢুকেছেন এবং তথ্য গোপন রেখেছেন।
তিনি আরও বলেন, পোশাক কারখানাগুলোতে পরীক্ষা করে কারখানায় প্রবেশ করাতে হবে। একজনও পরীক্ষার বাইরে থাকা মানেই ঝুঁকিতে থাকা। তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রেখে গ্রুপ ধরে কাজ করাতে হবে, নয়তো হবে না।
এদিকে শ্রমিক নেতারা বলছেন, সাভার-আশুলিয়া যে হারে পোশাক কারখানা খুলছে আর শ্রমিকেরা বেতনের দাবিতে রাস্তায় নামছেন তাতে এই এলাকায় করোনা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বাংলানিউজকে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সব কিছু লকডাউন, কোথাও কোনো গণজমায়েত হতে দেওয়া হচ্ছেনা। হোটেল, মার্কেট সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অথচ সব থেকে বেশি মানুষ এক সঙ্গে কাজ করে পোশাক কারখানায়। এখানে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা সব থেকে বেশি অথচ স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই সব শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। শ্রমিকরা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে, ইতোমধ্যে কিছু কারখানায় শ্রমিকদের করোনা ভাইরাসে আক্রান্তও হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এখনো সময় আছে, হয় পোশাক কারখানা বন্ধ করতে হবে অথবা কারখানা ভিত্তিক করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করতে হবে এবং শ্রমিকদের জন্য কারখানার ভেতর থাকার যায়গা করে সেখান থেকে কাজে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তা নাহলে ঈদের আগেই বাংলাদেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে।