গোটা বিশ্ব আজ কাঁপছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপে। এই ভাইরাসের তাণ্ডবে ইতোমধ্যে বিশ্বের ২১২টি দেশ ও অঞ্চলে আক্রান্ত হয়েছে ৩৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯ শতাধিক মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৭৭৩ জন।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে।
চীনের দাবি, একটি মাছের বাজার থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে, ‘ফাইভ আইস’ নামের গোয়েন্দা জোটের একটি প্রতিবেদন ফাঁস হয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, চীন ভাইরাসটির উৎস সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে মিথ্যা বলেছে।
ভাইরাসে সংক্রমণ সম্পর্কে যারা প্রথমে বলেছিল তারা অদৃশ্য হয়ে গেছে এবং পশ্চিমারা যাতে ভ্যাকসিন তৈরি করতে না পারে সে জন্য ভাইরাসের নমুনা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করেছিল।
১৫ পৃষ্ঠার বিস্ফোরক এই প্রতিবেদনে এমন ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে যে, ভাইরাসটি উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থেকেই ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এই দাবিটি প্রাথমিকভাবে একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে চীন। তারা জোর দিয়ে বলেছে ভাইরাসটি স্থানীয় সামুদ্রিক মাছের বাজার থেকে এসেছে।
একই সময়ে, একটি সিনিয়র গোয়েন্দা সূত্র ফক্স নিউজকে বলেছে যে, বেশিরভাগ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিশ্বাস করে কভিড-১৯ উহান ল্যাবেই সৃষ্টি হয়েছিল, তবে এটি দুর্ঘটনাক্রমে বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা তাদের।
ইংলিশভাষী শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি দেশ- আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং কানাডার গোয়েন্দাদের একটি সম্মিলিত জোট ‘ফাইভ আইস’। তারা নিজেদের মধ্যে গোয়েন্দা তত্য ভাগাভাগি করে থাকে। জোটের প্রতিবেদনে ভাইরাসটি ছড়ানোর বিষয়ে চীনকে দায়ী করা হয়েছে এবং এটাকে ‘আন্তর্জাতিক স্বচ্ছতার উপর হামলা’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।
চীন কিভাবে সারা বিশ্বে এই মহামারিটি ছড়িয়ে দিয়েছিল সে সম্পর্কে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, চীন শুরু থেকেই ভাইরাসটি সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। ভাইরাসটি যে মানব সংক্রামক সেটা লুকিয়েছে। ফলে এটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পেরেছে। ভাইরাসটির অসম্পূর্ণ বাহকগুলোর বর্ধমান প্রমাণকেও সেন্সর করেছে এবং অন্যান্য দেশগুলোর কাছে নমুনা হস্তান্তরের বিষয়ে অস্বীকার করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেইজিং ভাইরাস সম্পর্কিত তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে ডিসেম্বরের প্রথম দিকে সার্চ ইঞ্জিনগুলো সেন্সর করা শুরু করেছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনের দাবির সাথে চলছিল এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্বেগ সত্ত্বেও ভাইরাসটির মানব-থেকে মানবিক সংক্রমণকে অস্বীকার করেছে।
গোয়েন্দাদের সম্মিলিত এই জোট দেখেছে যে, চীনের কাছে ডিসেম্বরের প্রথম দিক থেকে ভাইরাসটির মানব সংক্রমণের প্রমাণ রয়েছে। তবুও বেইজিং ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত এটা অস্বীকার করে গেছে।
নথিতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, চীন দেশজুড়ে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণকারীদের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশে ভ্রমণ অব্যাহত রাখতে বলেছে। এটা ভাইরাসটি ছড়িয়ে দেওয়ার সুস্পষ্ট ইচ্ছের প্রমাণ।
উহানের ল্যাবেই কি তৈরি হয়েছিল বিশ্বজুড়ে প্রলয় সৃষ্টিকারী নভেল করোনাভাইরাস? গোটা বিশ্বে এখন এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি, উহানের ভাইরোলজি ল্যাবরেটরি থেকেই লিক হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। চীনের কাছ থেকে এ জন্য বড় অংকের ক্ষতিপুরণ আদায় করে ছাড়বেন বলেও হুমকি দিয়েছেন তিনি। যদিও মার্কিনীদের এমন দাবিকে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বলে উড়িয়ে দিয়েছে চীন। সূত্র: নিউইয়র্ক পোস্ট, ডেইলি টেলিগ্রাফ এইউ