• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং
ফরিদপুরে অভিমানে প্রেমিক ও প্রেমিকা দু’জনরই আত্মহত্যা

প্রেমিকার সঙ্গে অভিমান করে আত্মহত্যা করেন প্রেমিক। প্রেমিকের আত্মহত্যার দেড় মাসের ব্যবধানে শোক সইতে না পেরে এবার আত্মহত্যা করলেন প্রেমিকা। মান-অভিমানে ঝরে গেল দুটি প্রাণ। তাদের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে একটি প্রেমের করুণ সমাপ্তি ঘটলো। পাশাপাশি তাদের মৃত্যুতে পরিবার দুটিকে আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে স্বজন হারানোর বেদনা।

জানা যায়, ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের মনোহরদিয়া গ্রামের নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন সুপ্রিয়া দাস নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী। সুপ্রিয়া দাস বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) গণিত বিভাগের চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। শনিবার (০১ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি আত্মহত্যা করেন।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থী তপু মজুমদারের আত্মহত্যার ঘটনার দেড় মাসের ব্যবধানে আত্মহত্যা করেন সুপ্রিয়া দাস। তারা প্রেমিক যুগল। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ে মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ সেল গঠনের দাবি উঠেছে।

সুপ্রিয়া দাসের সহপাঠীরা জানান, ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার বাগাট ইউনিয়নের বাসিন্দা কুয়েটের শিক্ষার্থী তপু মজুমদারের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক থেকে সুপ্রিয়া দাসের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। দুজনের গ্রামের বাড়ি একই উপজেলায়। উভয় পরিবার মেনে নিয়েছিল তাদের সম্পর্ক। করোনার মধ্যেও সুপ্রিয়ার বাসায় এসেছিল তপু মজুমদার।

গত ১৪ জুন রাতে মুঠোফোনে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে সুপ্রিয়া কান্নাকাটি করে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন সকালে থেকে উঠে তপুর আত্মহত্যার কথা জানতে পারেন। এরপর থেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়নে সুপ্রিয়া। তপুর আত্মহত্যার ঘটনায় সামাজিকভাবে তাকে দোষারোপসহ নানা কথা শুনতে হয়। সামাজিক ও মানসিক চাপে সুপ্রিয়া আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে বলে ধারণা করেন তার কাছের বন্ধুরা।

সুপ্রিয়ার পরিবারের সদস্যরা জানান, তপুর মৃত্যুর পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সুপ্রিয়া। বাড়িতে থাকা অবস্থায় সবাই সুপ্রিয়াকে চোখে চোখে রাখতেন। তপুর মৃত্যুর প্রায় দেড় মাস পার হওয়ায় সবাই ভেবেছিল সুপ্রিয়া স্বাভাবিক হয়ে গেছেন। ঘটনার দিন সবাই বাড়ির বাইরে গেলে সুপ্রিয়া ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে দড়ি ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করেন। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে সুপ্রিয়া বড় ছিলেন। তপুর মৃত্যুর শোক সইতে না পেরেই সুপ্রিয়া আত্মহত্যা করেন।

তপুর পরিবারের সদস্যরা জানান, দুজনের সম্পর্কের কথা উভয় পরিবারই জানত। এই সম্পর্কে কারও কোনো অভিযোগ ছিল না। তারা মেনে নিয়েছিলেন তাদের সম্পর্ক। হঠাৎ করে তপুর সঙ্গে সুপ্রিয়ার একটু মান-অভিমান হয়। মান-অভিমানের কারণেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তপু। বড় অভিমানী ছিলেন তপু। সামান্য ভুল বোঝাবুঝিতে অভিমান করে চলে গেলেন তপু। এরপর চলে গেলেন সুপ্রিয়া।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সুব্রত কুমার দাশ বলেন, ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় সুপ্রিয়া দাস মধুখালী উপজেলার মনোহরদিয়া গ্রামের নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিল। সেখানে গত শনিবার সন্ধ্যায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে সুপ্রিয়া। খবর পাওয়ার পর মুঠোফোনে তার পরিবারের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেছে। একজন মেধাবী ছাত্রীর অকালে ঝরে পড়া খুবই মর্মান্তিক।

সুপ্রিয়া দাসের মৃত্যুতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ গভীরভাবে শোকাহত। গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান চিন্ময়ী পোদ্দার স্বাক্ষরিত এক শোকবার্তায় সুপ্রিয়া দাসের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। একই সঙ্গে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়।

এদিকে সুপ্রিয়ার অকাল মৃত্যুতে শোকার্ত সহপাঠী ও শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে বিশ্ববিদ্যালয়ে মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ সেল গঠনের দাবি তুলেছেন।

শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মিজানুর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ সেল গঠন জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

অক্টোবর ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« সেপ্টেম্বর    
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।