বোয়ালমারী থেকে ঘুরে এসে সিনিয়র সাংবাদিক হারুন আনসারী রুদ্র :
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রুপাপাত ইউনিয়নের একটি গ্রাম টোংরাইল। সবুজ শ্যামল এই গ্রামের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সুদীর্ঘ একটি খাল। খালটি এখন পাউবোর আওতাধীন। দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়া এই খাল গ্রামটিকে একটি ভিন্নধর্মী স্বাতন্ত্রভাব দিয়েছে। যার উপড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বাঁশের সাকো।
একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী শেখড় ইউনিয়নের তেলজুড়ি গ্রামে কুমার নদ হতে এই খালের উৎপত্তি। এরপর মুরা গ্রামের ভেতর দিয়ে এসে টোংরাইল গ্রাম হয়ে কদমি রুপাপাতের পর কালিনগর গ্রামে পৌছে ১৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে মধুমতি নদীর সাথে মিশেছে। দুই পাশে কৃষি জমি ও ঘরবাড়ি ছাপিয়ে খালটি বয়ে গেছে এঁকেবেঁকে। সারাবছরই কমবেশি পানি থাকে আর ভরা বষার্য় পানিতে টুইটুম্বুর হয়ে ওঠে খালটি।
উপজেলা সদর হতে প্রায় ১২ কিলোমিটার দুরত্বের প্রত্যন্ত এই টোংরাইল গ্রামের জনবসতি খুব বেশি নয়। গ্রামের জনসংখ্যা সবমিলিয়ে চার হাজারের মতো। ভোটার সংখ্যা ৬ শতাধিক। মাত্র শ’ তিনেক পরিবারের বসতি রয়েছে। যাদের অর্ধেকই বসবাস করে খালের এপাড়ে। গ্রামটির বেশিরভাগ অধিবাসীই কৃষক।
খাল পাড় ঘেঁষে একসময়ের পায়ে পায়ে গড়ে ওঠা মেঠো পথটির অর্ধেক অংশ পিচ ঢালা পাঁকা সড়ক হয়েছে। সেটি এখন এলজিইডির সড়ক। আগে নৌকাই ছিলো গ্রামবাসীর চলাচলের একমাত্র বাহন। প্রতিদিনের চলাচলের জন্য তারা ব্যবহার করেন এই বাঁশের সাকো। খালের ওপাড়ে থাকা পরিবারগুলো নিজেদের প্রয়োজনে নিজের খরচেই তৈরি করে নিয়েছেন এসব সাকো। সবমিলিয়ে এই সাকোর সংখ্যা প্রায় ৬০টির মতো সেতু। নিজেদের খরচে সারাবছর এই সাকো সংরক্ষণের দ্বায়িত্বও তাদের। কোনটিতে দু’টি বাঁশ আবার কোনটি চারপাঁচটি বাঁশ পাতা হেটে যাওয়ার জন্য। গ্রামটিতে প্রথম গেলে মনে হয়, পুরো গ্রামটিই যেনো বাঁশের সাকের গ্রাম।
ওই গ্রামের বাসিন্দা ফরিদপুরের সরকারী রাজেন্দ্র কলেজের ব্যবস্হাপনা বিভাগের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী সুমন রায় (২৪) বলেন, টোংরাইল খালের উপড়ে প্রায় ৬০টির মতো বাঁশের সাকো রয়েছে। তিনি জানান, গ্রামে কৃষিজীবী মানুষ বেশি হলেও প্রত্যেক ঘরেই স্কুল পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী রয়েছে। তবে গ্রামে একটি মাত্র সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া আর কোন বিদ্যালয় নেই। প্রাইমারী পাশ করে অনেকে পাশের গ্রাম বনমালিপুর জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।
স্বপন দাস (৪১) নামে ওই গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, খালের ওপাড়েও চলাচলের রাস্তা রয়েছে। তবে সেতু না থাকায় যানবাহন ওপাড়ে যেতে পারেনা। তবে ক্ষেতের ফসল নিয়ে এই বাঁশের সাকো পাড়ি দিতে তাদের অনেক ভোগান্তি হয়। এখানে একটি স্হায়ী সেতু নিমার্ণ হলে ভাল হতো।
দুলাল বিশ্বাস (৬২) নামে ওই গ্রামের এক কৃষক জানান, জন্মের পর হতেই তিনি এই খাল দেখে আসছেন। তখনও বাঁশের সাকো ছিলো। টোংরাইল ব্রিজের পর কালিনগর পর্যন্ত সড়কের কিছুদুর পর রাস্তা খুবই খারাপ।
স্হানীয় ওয়ার্ড মেম্বার রবিন বিশ্বাস বলেন, গ্রামের অসুস্হ্য মানুষকে হাসপাতালে নিতে অনেক কষ্ট হয়। এলাকায় কোন হাসপাতাল বা ক্লিনিক নেই এখনো। পাশের সুতালিয়া গ্রামে একটি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। তবে সেখানে কোন ডাক্তার থাকেননা বলে এখন আর কেউ সেখানে যাননা। তিনি বলেন, সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোগে এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়ন এবং স্কুল ও হাসপাতাল নিমার্ণ জরুরি।
বোয়ালমারী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ বলেন, টোংরাইল খাল ওই গ্রামের প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এজন্য উপজেলা প্রশাসন খালটির অস্তিত্ব ও স্বকিয়তা বজায় রাখতে তৎপর। তিনি জানান, খাল পাড়ে দোকান ঘর বা অবৈধ স্হাপনা তুলে পলিথিন ও প্লাষ্টিকসহ অন্যান্য বজ্র ফেলে কেউ যাতে খালের প্রবাহ নষ্ট না করে সেজন্যও তারা দৃষ্টি রাখছেন।