ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা এলাকায় মধুমতির তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত পনের দিনে মধুমতি নদী তীরের টগরবন্দ, গোপালপুর, বুড়াইচ, বানা ও পাচুড়িয়া ইউনিয়ন ইউনিয়নে কয়েকটি গ্রামে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে পাকা সড়ক, বাড়িঘর, কৃষি জমি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ গাছপালা ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে উপজেলার বাজড়া, চর আজমপুর, চাপুলিয়া, চরধানাইড়, শিকিপাড়া, চাপুলিয়াসহ প্রায় ১০টি গ্রাম।
সরেজমিনে দেখা যায়, মধুমতি নদীর পানি নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার বাজড়া, চর আজমপুর, চরডাঙ্গা, চাপুলিয়া, চরধানাইড়, শিকিপাড়া, চাপুলিয়া, চরনারানদিয়া, বঁাশতলাসহ প্রায় ১০টি গ্রাম এখন হুমকির মুখে পড়েছে। এরই মধ্যে কয়েক গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র গোপালপুর-চরডাঙ্গা মেইন পাকা সড়কের প্রায় ৫০০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একই সঙ্গে নদীগর্ভে চলে গেছে চাপুলিয়া গুচ্ছগ্রাম ও আশ্রয়ন কেন্দ্রের ৬৫ টি ঘর, বাজড়া পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদ, চরআজপুর গ্রামের প্রায় ৩০টি বাড়িসহ নানা স্থাপনা। এখন চরম হুমকির মুখে রয়েছে বাজড়া চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাঙন ঝুঁকিতে গত এক সপ্তাহে উপজেলার চর আজমপুর গ্রামের প্রায় ১৫-২০টি পরিবার তাদের বসতঘর ভেঙ্গে অন্য এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা টগরবন্দ ইউনিয়নের চর আজমপুর গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল শেখ ও আবুল হোসেন জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি সময়মত পদক্ষেপ নিতো তাহলে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ভাঙন থেকে হয়তোবা রক্ষা পেত। এখন আমাদের মাথা গোজার জায়গাটুকু নেই। এ এলাকার অন্তত ২০টি বাড়িঘর নদীতে খেয়ে ফেলেছে।
বাজড়া গ্রামের ইউপি সদস্য ওবায়দুর রহমান বলেন, নদী আমার বাড়ি থেকে অল্প কয়েক গজ দূরে। এ বছর বাড়ি মনে হয় আর থাকবে না। আমাদের এলাকায় গত কয়েকদিনে নদীর পাড়ে থাকা ২০-২৫টি পরিবার তাদের বাড়িঘর ভেঙে অন্যত্র চলে গেছে। অনেকেই যাওয়ার জন্য বাড়ি ঘর ভাঙতে শুরু করেছেন।
ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলছে বাজড়া সীমানায়। গত বছর যেখানে বস্তা ফেলা হয়েছে এবছরও সেখানে বস্তা ফেলা হচ্ছে। অথচ এখন নদী ভাঙছে চর-আজমপুর, রায় পানাইল, গোপালপুর-চরডাঙ্গা মেইন সড়ক এবং পাচুড়িয়ার চরনারানদিয়া ও বঁাশতলা এলাকা। এক মাস হলো বস্তা ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। এ বছর চর-আজমপুর মেইন রাস্তার পাশে বস্তা ফেললে আজ এই রাস্তা ভাঙতো না।
টগরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমাম হাচান শিপন বলেন, আমাদের তেমন কিছু করার নাই। সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের শুধু ১০ কেজি চাল দেয়া হবে। কিছু এলাকায় জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুর রহমান জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহিদুল হাসান জানান, ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করা হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলমান রয়েছে। আপাতত তাদের ১০ কেজি করে চাল দেয়া হবে।
বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা অঞ্চলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সন্তোষ কর্মকার মোবাইলে জানান, ভাঙন রোধে বর্তমানে ১৭৫ কেজির ৩০ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও ফেলা হবে। স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ করার জন্য আলফাডাঙ্গা ও মধুখালীতে প্রায় ১১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজন। এ জন্য প্রকল্প প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে ৬শ কোটি টাকা।
ফরিদপুর-১ আসনের সাংসদ মনজুর হোসেন বলেন, ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় স্থায়ী বাঁধের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্প তৈরি করছে। এটি বাস্তবায়নের জন্য আমি সরকারের সবোর্চ্চ পর্যায়ে চেষ্টা করবো।