• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
ফরিদপুরে বিশ্ব ক্লাবফুট দিবস পালিত

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুরে বিশ্ব ক্লাবফুট দিবস ২০২২ উদযাপন উপলক্ষে র‍্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়েছে। ৬ই জুন সোমবার ফরিদপুরে দি গে-নকো ফাউন্ডেশন এর ওয়াক ফর লাইফ প্রোগ্রাম এর আয়োজনে ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিশ্ব ক্লাবফুট দিবস ২০২২ উদযাপন হয়।
আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাধারন সম্পাদক ডাঃ আ স ম জাহাঙ্গীর চৌধুরী টিটু। এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক মোঃ মোসলেম উদ্দীন,অর্থ পেটিক সার্জন ডাঃ দিলিপ কুমার দাস।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রকল্পের ফরিদপুরের ফিজিওথেরাপিস্ট ও ক্লিনিক ম্যানাজার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। ক্লিনিকটিতে এ পর্যন্ত ৯৭৫ জন শিশুর
ক্লাবফুট বা মুগুর পা চিকিৎসার”ক্লাবফুট” জন্মগত ত্রুটি সমূহের মধ্যে ক্লাবফুট অন্যতম। অনেকে একে মুগুর পা বলে থাকে। এটি জন্মগত শারীরিক বিকৃতি যেখানে শিশুর পায়ের পাতার আকৃতি বা অবস্থান ভিতরের দিকে মোচড়ানো থাকে। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৪০০০ হাজার শিশু এই জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। ক্লাবফুট এর সঠিক কারণ এখনো অজানা, তবে
জিনগত এবং পরিবেশগত কারন বা মাল্টিফ্যাক্টোরিয়ালের সংমিশ্রণে এ বিকৃতি হতে পারে ।
কিছু কিছু স্থানে ক্লাবফুট নিয়ে কোনও শিশুর জন্মের কারণ কী তা সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার রয়েছে যেমন- আধ্যাত্মিক প্রভাব, মন্ত্র, অভিশাপ বা সৃষ্টিকতা প্রদত্ত শাস্তি, সূর্যগ্রহন বা চন্দ্রগ্রহন ইত্যাদি। কখনও কখনও মায়েদের বা বাবাদেরকে এর জন্য দোষারোপ করা হয়, যা একবারেই সঠিক নয়।
ক্লাবফুটের চিকিৎসা নিয়েও আমাদের সমাজে অনেক ভুল ধারনা রয়েছে। কিছু মানুষের ধারনা তেল বা ঘি দিয়ে ম্যাসেজ করলে, ভূমিকম্পের সময় শিশুর পা সোজা করে ধরলে এমনকি কোন চিকিৎসা বা হস্তক্ষেপ ছাড়াই পা ভাল হয়ে যেতে পারে।
জন্মের পরপরই যত দ্রুত সম্ভব ক্লাবফুটের চিকিৎসা শুরু করা ভাল তবে সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে, জন্মের ১ থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যেই চিকিৎসা শুরু করা উত্তম ।

ক্লাবফুট যদি সঠিকভাবে এবং সময়ে সময়ে চিকিৎসা করা না হয়, এটি মারাত্বক বিকৃতির দিকে অগ্রসর হতে পারে। যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আজীবনবিকলাঙ্গতা নিয়ে জীবন যাপন করতে হয়। শিশু বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের শরীরের ভর
পায়ের একপাশে পরে ফলে ত্বকের পৃষ্ঠের উপর ক্ষতের সৃষ্টি ও ব্যথার কারণ হয় এবং ব্যক্তিটি সাধারণ জুতা পরতে সক্ষম হয় না। এছাড়াও এরূপ দৃশ্যমান বিকৃতির জন্য লোকজন বিভিন্নভাবে বৈষম্য বা কুটক্তি করে। চিকিৎসায় অবহেলিত
ক্লাবফুট নিয়ে জীবন যাপনকারী ব্যক্তিরা জীবনের সব ক্ষেত্রে বাধার মুখোমুখি হয় যেমন- শিক্ষা হতে বঞ্চিত, কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমাবদ্ধ করে, সামাজিক অংশগ্রহন, দারিদ্রতা এবং সর্বোপরি সমাজ ও জাতির জন্য এরা একটা বোঝা
হয়ে যায় ।
পূর্বের চিকিৎসা পদ্ধতিতে চিকিৎসার করার পর প্রাথমিক সংশোধনে কিছুটা উন্নতি হলেও শিশুদের অনেক অসুবিধা ও কষ্টের মধ্যে জীবন যাপন করতে হতো, কারন দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল সন্তোষজনক ছিল না।
পনসেটি পদ্ধতির মাধ্যমে এ সমস্যার চিকিৎসা করা যায়। এটি অত্যন্ত কার্যকর, সুলভ এবং স্থায়ী চিকিৎসা। আমেরিকান অর্থোপেডিক সার্জন ডা.ইগনেসিও পনসেটি বহু গবেষনার মাধ্যমে এ পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেন।
বিশ্বজুড়ে ক্লাবফুট চিকিত্সার জন্য এই পদ্ধতিটি এখন সর্বজন স্বীর্কৃত।
পদ্ধতিটির ফলাফল বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই কার্যকর যা বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গবেষনার মাধ্যমে প্রমাণিত । এ পদ্ধতি ব্যবহারের পর দীর্ঘমেয়াদী ফলাফলগুলিও আগের পদ্ধতির তুলনায় খুব আশাব্যঞ্জক। পনসেটি পদ্ধতিটি ম্যানিপুলেশন,
কাস্টিং, টেনোটমি এবং দীর্ঘ মেয়াদী ব্রেস ব্যবহারসহ একটি খুব
সুনির্দিষ্ট চিকিত্সার পদ্ধতি।তার এ আবিস্কারকে স্মরণীয় রাখতে সমগ্র বিশ্বব্যাপী তার জন্মদিন ৩রা জুন কে বিশ্বক্লাবফুট দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে ২০১৩ সাল থেকে এই দিবসটি উদযাপন করে আসছে ক্লাবফুট চিকিৎসাসেবা নিয়ে কাজ করা ওয়াক ফর লাইফ নামক প্রকল্পটি।
অষ্টেলিয়ান সংস্থা দি গ্লেনকো ফাউন্ডেশন ২০০৯ সাল হইতে বাংলাদেশে পনসেটি মেথড এর মাধ্যমে ক্লাবফুট চিকিৎসা কার্যক্রম ওয়াক ফর লাইফ প্রকল্প শুরু করে।
প্রকল্পটি দেশব্যাপী ২৯টি জেলায় বিস্তৃত লাভ করে। কলিন ম্যাকফারলেন, অষ্টেলিয়ান মেডেন খেতাব প্রাপ্ত একজন সমাজ সেবক এ সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা এবংবাংলাদেশে ক্লাবফুট চিকিৎসা কার্যক্রম বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শুরুর পর থেকে অদ্যবদী বাঁকা পা বা ক্লাবফুট নিয়ে জন্ম নেয়া ৩০৬০০ শিশুর পা চিকিৎসার আওতাভুক্ত করে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে। তাছাড়াও প্রকল্পটি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কমিউনিটি পর্যায়ে ক্লাবফুট সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক কাজ করছে। যার ফলস্রুতিতে বেশিভাগ শিশুই এখন জন্মেও ৩ মাসের মধ্যেই

চিকিৎসা গ্রহন করছে। বিশ্ব ক্লাবফুট দিবসের পাশাপাশি ওয়াক ফর লাইফ অদ্য প্রোগামে (ত্রিশ হাজার) ৩০ ০০০ ক্লাবফুট শিশুর অন্তভূক্তি ও উদযাপন করেছে। বিশ্বে যা প্রোগ্রামটিকে
একটি অনবদ্য রেকর্ড এ অন্তভুক্ত করেছে। ওয়াক ফর লাইফ প্রোগ্রামটি বিশ্বেও অন্যতম বৃহত্তম একটি ক্লাবফুট প্রোগ্রাম ও একটি রোল মডেল। দেশের ত্রিশ হাজার শিশুকে প্রতিরোধযোগ্য এই প্রতিবন্ধকতার হাত থেকে ফিরিয়ে স্বাভাবিক জীবন উপহার দিয়েছে।ফরিদপুর ক্লিনিকে চিকিৎসায় সুস্থ ও স্বাভাবিক হওয়া শিশুদের পদচারনা আজকে এই সভা ও র‍্যালিটি মুখরিত ছিল। কেউ দেখে চিন্তাও করতে পারবে না এই শিশুরা জন্মের সময় ক্লাবফুট নিয়ে জন্ম গ্রহন করেছেন। সকল অভিভাবকও
প্রোগ্রামটি বেশ গুনগান ও প্রসংশা করেছেন। তারা সবাই তাদের সন্তানের পায়ের পাতা বঁাকা রোগের এই চিকিৎসায় বেশ খুশি।
ফরিদপুর জেলায় বর্তমানে ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এ এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
ফরিদপুর জেলার ক্লিনিকটির ওয়াক ফর লাইফ ক্লাবফুট ক্লিনিকটি তত্বাবধান ও সার্বিক দিকনির্দেশনায় রয়েছেন- ডা. দিলীপ কুমার দাস, সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিক বিভাগ, ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এখানে ফিজিওথেরাপিস্ট ও ক্লিনিক ম্যানাজারের দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। ক্লিনিকটিতে এ পর্যন্ত ৯৭৫ জন শিশুর ক্লাবফুট বা মুগুর পা চিকিৎসার আওতাভুক্ত করেছে। সপ্তাহে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিরার এ ক্লিনিকটিতে এ চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
মুগুর পায়ের চিকিৎসার পাশাপাশি এ সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে ওয়াক ফর লাইফ ফরিদপুর জেলার উপজেলা সমূহে বিভিন্ন সচেতনতা মূলক ও প্রচারণামূলক
কার্যক্রম পরিচালিত করে। এছ্াড়াও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে সংস্থাটি দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও জেলা সদর হাসপাতালে অর্থোপেডিক সার্জন,
চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য ক্লাবফুট এর নিয়মিত প্রশিক্ষণ কমসূচী আয়োজন করে থাকে।

ক্লাবফুট বা “মুগুর পা” নিয়ে জন্মানো কোন শিশুকে যেন সুচিকিৎসার অভাবে প্রতিবন্ধী জীবনের শিকার না হতে হয় এবং বাংলাদেশে ক্লাবফুট নিয়ে জন্মানো সকল শিশুদের যথাযথ সুযোগ-সুবিধা ও তথ্যদানের মাধ্যমে জন্মেও পর যত
দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নিশ্চিত করাই ওয়াক ফর লাইফ প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য। তাই আসুন, সচেতন হই, এখন সময়। জন্মেও সাথে সাথে ক্লাবফুট শিশুদেও পনসেটি পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিশ্চিত করি।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।