সালথা’র গ্রাম-গঞ্জে পল্লী চিকিৎসকদের ওপর বাড়ছে রোগীর চাপ
মনির মোল্যা সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : সরকারি বেসরকারি ক্লিনিকে সচরাচার সাধারণ রোগীরা সেবা পাচ্ছে না বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অনুপস্থিতির কারনে। অল্প সংখ্যাক ডাক্তার চিকিৎসা সেবা দিলেও বেশ কিছু চিকিৎসক নিজেদেরকে গুটিয়ে রেখেছেন। ফলে ফরিদপুরের সালথা উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার গ্রাম গঞ্জে পল্লী চিকিৎসকদের ওপর বাড়ছে সাধারণ রেগীর চাপ। শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্যসেবা, টিকাদান, পরিবার পরিকল্পনা, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ চিকিৎসা, অপুষ্টিজনিত রোগীর চিকিৎসা, সকল প্রকার সাধারণ রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে পল্লী চিকিৎসকগণ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
প্রাণঘাতী করোনা পরিস্থিতিতে মৃত্যুঁ ঝুকি নিয়ে যেসব পল্লী চিকিৎসক বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সেবা দিয়ে হাসপাতালের রোগীর চাপ কমাতে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে সেসব চিকিৎসকদেরও পুরস্কৃত করা উচিত বলে মনে করছেন অনেকে। করোনায় নিজেদের জীবনের ঝুঁকির পাশাপাশি এসব চিকিৎসকেরা পরিবারের সদস্যদের জীবনকে ঝুঁকিতে রেখে দিনরাত সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
সালথা উপজেলার একাধিক পল্লী চিকিৎসকের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতির এ সময়ে বিভিন্ন রোগের উপসর্গ যেমন নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দি কাশি, পেটে ব্যাথা, পায়ে ব্যাথা রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে অাসছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করছি। মারাত্বক অবস্থার রোগীদেরকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা নিতে অন্যত্র রেফার করা হলে তারা সেবা না পেয়ে অাবার পুনরায় অামাদের কাছে সেবা নিতে অাসছে। স্বজনদের অাহাজারিতে বাধ্য হয়ে ঐসব রোগীদের সেবা দিতে হচ্ছে। অনেক সময় তারা সুস্থ হয়ে যাচ্ছে অাবার কোন সময়ে রোগীর অবস্থার অবনতিও হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে অামাদের দূর্নামও হয়ে থাকে। তখন পল্লী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসা সেবা প্রদানের অভিযোগ ওঠে।
নিউমোনিয়ায় অাক্রান্ত এক রোগীর অভিভাবক জানান, অামার সন্তান কয়েকদিন ধরে অসুস্থ। গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে সেবা নিতে গেলে অামার মেয়ে নিউমোনিয়ায় অাক্রান্ত হয়েছে বলে ডাক্তার জানান। তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকট থেকে সেবা নিতে বলেন। অামি শহরে কয়েকজন ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে দেখি তাদের চেম্বার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে আবার গ্রাম্য ডাক্তারের সরনাপন্ন হতে হয়। শতশত রোগীর ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে বলে একাধিক পল্লী চিকিৎসক জানিয়য়েছেন।
সালথা সদর বাজারের পল্লী চিকিৎসক বিধান কুমার বিশ্বাস বলেন, আমি করোনা পরিস্থিতিতেও আমার চেম্বারে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত নিয়মিত রুগী দেখছি। আমার এলাকার মানুষের কথা চিন্তা করে। অনেকেই এখন করোনা ভাইরাসের কারনে শহরে যেতে চান না। তাই আমাদের কাছে রুগীর অনেক চাপ বেড়ে গেছে।
সালথা সদর বাজারের আরেক পল্লী চিকিৎসক ধীরাজ কুমার চক্রবর্তী রতন বলেন, করোনা অাতঙ্ক দূর করতে ও প্রতিরোধ মূলক পরামর্শ প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি জীবনের ঝুকি নিয়ে। মানবিক দিক থেকে হলেও রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট অামাদের পল্লী চিকিৎসকের অনুরোধ অামরা যেন কোনরকম কারোর দ্বারা হয়রানির শিকার না হয়ে থাকি। এসময় উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে পিপিই সহ অন্যান্য সহোযোগিতার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মাদ হাসিব সরকার বলেন, আমার সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের পিপিই সরবরাহ করেছি। যদি আমাদের কাছে পিপিই মজুদ হয় তাহলে পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত পল্লী চিকিৎসক পল্লী চিকিৎসকদের সেটা দেওয়া হবে। গ্রাম গঞ্জে প্রাথমিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পল্লী চিকিৎসকরা। বর্তমান করোনা প্রতিরোধেও তারা যথেষ্ট ভূমিকা রেখে চলেছে। তিনি অারো বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সারাদেশের পল্লী চিকিৎসক ও ফার্মেসিগুলো খোলা রাখতে বলা হয়েছে। তিনি উপজেলা বাসির উদ্দেশে বলেন- আপনারা বাসায় থাকুন, নিরাপদে থাকুন, প্রয়োজনে জাতীয় স্বাস্থ্য বাতায়নে যোগাযোগ করুন।