করোনা :বাংলাদেশের জন্য এডিবির ইতিবাচক পূর্বাভাস।
বর্তমানে বিশ্ব-অর্থনীতি করোনা ভাইরাস কবলিত এবং এতে এক মহামন্দা দেখা দেবে বলে বিশ্বের অর্থনীতিবিদেরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। এর মধ্যেই এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক পূর্বাভাস দিয়েছে। এডিবি বলেছে, করোনা সংকটে বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষতির পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে। ফলে মোট জিডিপির প্রবৃদ্ধি তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তবে তা চলমান ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ থেকে নেমে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। অবশ্য এডিবি এটাও বলেছে যে, করোনা সংকটের প্রভাব যদি দীর্ঘায়িত হয় তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমাসহ ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে। এর সপক্ষে এডিবি কিছু যুক্তিও তুলে ধরেছে। সংস্থাটি বলছে, করোনার কারণে বর্তমান সময়টাই পোশাক খাত ও প্রবাসী আয় কমলেও দুটি খাতেই গত কয়েক মাসে আশাব্যঞ্জক আয় হয়েছে। তার ওপর চীনে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বাংলাদেশে-চীনের সহযোগিতা আবার ফিরে এসেছে। এক্ষেত্রে স্মরণ করা যেতে পারে, পদ্মাসেতু, পোশাক ও
অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্পে চীন জড়িত। চীন এটাও বলেছে যে, দ্বিগুণ কাজ করে মেগাপ্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে শেষ করে দেবে তারা।
নিজস্ব অর্থায়নে চীনের সহযোগিতায় পদ্মাসেতু, কর্ণফুলী টানেল, জাইকার সহযোগিতায় মেট্রোরেল, রাশিয়ার সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ দশটি মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। সৌদি আরব, জাপানসহ বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। দারিদ্র্য নেমে এসেছে বিশ শতাংশের নিচে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ নিম্নআয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির এই ধারাবাহিকতায় প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০২১ এর সাফল্যের পর সরকার এবার অগ্রসর হচ্ছে রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়ে। এই পরিকল্পনা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ১২ হাজার ৫০০ ডলারের বেশি। মোট দেশজ উৎপাদন জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। হতদরিদ্রের হার নেমে আসবে শূন্যের কোঠায়। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হবে ৮০ বছর। উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ ও উচ্চ আয়ের দেশগুলো যে উন্নয়নের পথ পাড়ি দিয়েছে সেই ইতিবাচক দিকগুলো বিবেচনায় নিয়েই অগ্রসর হতে চায় সরকার।
বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকার ১০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি চালু হয়েছে। বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন। মাত্র সাত দিনে এসব জোনে বিদ্যুৎ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যুতের সমস্যাও নেই। তার ওপরও বড় কথা, রাশিয়া ও ভারতের সহযোগিতায় রূপপুরে নির্মাণাধীন দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২০২৪ সাল থেকে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। আগামী বছর এটির দরপত্র আহ্বান করা হবে। এটি নির্মাণ করা হবে অপেক্ষাকৃত অনুন্নত ও দরিদ্র এলাকায়।
সরকার আগামী দিনে একটি দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে অঙ্গীকারবদ্ধ। অর্থমন্ত্রী এই মর্মে পূর্বাভাস দিয়েছেন যে, প্রায় ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে আগামীতে বাজেটের আকার অনেক বড় হবে। আগামী অর্থবছরে জাতীয় বাজেট ৪ লাখ ষাট হাজার কোটি টাকারও বেশি ছাড়িয়ে যেতে পারে।
গত কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। করোনাজনিত পরিস্থিতি মোকাবেলায়ও সরকারি তৎপরতা সন্তোষজনক। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহের ইতিবাচক অব্যাহত থাকলে চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ অসম্ভব কিছু নয় বলে মনে করে এডিবি। তবে এডিবির এই পূর্বাভাস কিছু কিছু অর্থনীতিবিদ অবাস্তব মনে করছেন।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে চলমান অস্থিরতার মধ্যে এই পূর্বাভাস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু সরকার চলতি অর্থবছরে জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ অর্জনে নিরন্তর কাজ করে চলেছে বলেই প্রতীয়মান হয়।
সংবাদ সুত্র ঃ দৈনিক আজাদী