রাজশাহীতে উপজেলা ও আন্ত:জেলা পর্যায়ের বাস চলাচলে অব্যবস্থাপনার কারণে রাজশাহীর সড়ক ও গণপরিবহণে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। যাত্রী ও পথচারীদের অভিযোগ, সড়কে গাড়িগুলো যত্রতত্র রাখা হচ্ছে, ভেঙে পড়েছে বাস যাত্রার টাইম টেবিল (যাত্রার সময়), এক রুটের যাত্রীকে প্রতারণা করে অন্য রুটের গাড়িতে তুলে টাকা নিয়ে মাঝ রাস্তায় নামিয়ে দেয়া হচ্ছে।
তবে বাস মালিক সমিতির দাবি, তারা অর্থিক সংকটের কারণে বাস টার্মিনালসহ স্টপেজগুলোতে জনবল দিতে পারছে না, বাধ্য হচ্ছেন আন্তজেলা কাউন্টার বন্ধ রাখতে। ফলে এমন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে যাত্রীসহ সকলকে। যা গণপরিহণ সংশ্লিষ্ট কারোই কাম্য নয়।
রাজশাহীর সড়কে ১ জুন থেকে সরকারের নির্ধরিত নির্দেশনা মতো সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির আগে যাত্রীদের সুবিধার জন্য উপজেলা ভিত্তিক এবং আন্তজেলা পর্যায়ের গাড়ির অগ্রিম টিকেট টার্মিনাল ছাড়াও বিভিন্ন স্টপেজে বিক্রি করা হতো। তবে এখন তা আর দেখা যাচ্ছে না। ফলে সাধারণ যাত্রীরা বিভিন্ন ভাবে সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছেন। টিকেট আগে না পাওয়ায় বাস যাত্রায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। যাত্রীদের ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে স্টপেজে। স্টপেজগুলো থেকে কোন দিক নের্দেশনা বা তথ্য পাচ্ছেন না তারা।
ভদ্রা মোড়ে অবস্থিত বাস স্টপেজে রংপুর রুটের যাত্রী কামাল হোসেন অভিযোগ করে জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে যাত্রী কম থাকায় অনেক সময় নাটোরের গাড়ি রংপুরের যাত্রীদের ভুল বুঝিয়ে তাদের গাড়িতে করে নাটোরে নিয়ে যাচ্ছে। এর পর সেখানে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নামিয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে সেখান থেকে রংপুরের গাড়ি ধরেন। এভাবে যাত্রীদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে।
গ্রেটার রোডের কাছের স্টপেজে নওগাঁ রুটের যাত্রী ওমর জানান, অগ্রীম টিকেট বুকিয়ের ব্যবস্থা না থাকায় সময়মতো অনেক যাত্রী বাস ধরতে পারছেন না। কখন বাস আসবে বা কখন ছাড়বে এবিষয়ে কোন তথ্য স্টপেজ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। নগরীর রেলগেট চত্ত্বর, ভদ্রা মোড় এলাকায় দিনের বেশিরভাগ সময় দীর্ঘ যানজট লেগে থাকছে। কারণ হিসেবে জানা যায়, বর্তমানে ওই স্টপেজগুলোতে সময় নিয়ন্ত্রণে কোন জনবল কাজ করছে না। ফলে ওই রাস্তাগুলোতে যানজট এখন নিত্য দিনের সঙ্গি।
ভদ্রা মোড়ের আন্তজেলা বাস স্টপেজে কাজ করতেন রহিম। করোনা পরিস্থিতির পর থেকে তিনি বেকার। রহিম জানান, করোনা পরিস্থিতির আগে স্থানীয় স্টপেজগুলোতে বাস নিয়মমতো ছাড়া ও সড়কে শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে যান চলাচলে দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে পৃথক জনবল নিয়োগ দেয়া ছিলো। তিনি স্টপেজ থেকে বাস ছাড়ার সময় নিয়ন্ত্রণের কাজ করতেন। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তার মতো স্টপেজগুলোতে কাজ করা প্রায় ১৫০ জন পরিবহণ শ্রমিক এখন কর্মী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
এবিষয়ে বাস মালিক সমিতির কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘদিন বাস চলাচল বন্ধ থাকার পর বেশ কিছু নীতিমালা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত ১ জুন থেকে সীমিত পরিসরে বাস চালু করা হয়েছে। তবে এখন রাস্তায় তাদের কোন জনবল নেই। যাত্রী ও পথচারীদের সুবিধার্থে বাসের মালিকরা দৈনিক ভাতা প্রদানের ভিত্তিতে বেশ কিছু কর্মচারী দিয়ে ওই কাজ করিয়ে আসছিলেন। তবে বর্তমানে বাস-মিনিবাস থেকে কোন প্রকার অর্থ প্রদানের বিধান না থাকায় কর্মচারীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। একই সাথে সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।