বাঘা উপজেলার মাঠে মাঠে এখন পাট কাটা, জাগ দেয়া, আশ ছাড়ানো, শুকানো এবং বিক্রি করা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। বর্তমানে বিভিন্ন হাট-বাজারে মানভেদে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২১শ’ থকে ২২শ’ টাকায়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এবার চাষিরা ৩২০ হেক্টর বেশি জমিতে পাটের চাষ করেছে। গতবার চাষ হয়েছিল ৩ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে পাট কাটা, জাগ দেয়া, আঁশ ছাড়ানো এবং শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে।
শুক্রবার উপজেলার দিঘাহাটে পাট বিক্রি করতে আসেন দিঘা গ্রামের মকুল হোসেন। তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে লাঙ্গল, বীজ সেচ, কাটা, পরিষ্কার করা, সারসহ যাবতীয় খরচ হয় সাড়ে ৬-৭ হাজার টাকা। এবার উৎপাদন হচ্ছে বিঘায় ৭-৮ মণ।
বাউসা আমরপুর গ্রামের পাটচাষি আমিরুল ইসলাম বলেন, জমিতে পানি থাকায় পাট কাটা শ্রমিকদের অনেক বেশি মজুরি দিতে হচ্ছে। গতবারের মতো এবার পাট চাষে লাভ কম হবে। লোকসান না হলেও, লাভ হবে কম। বর্তমান বাজারে মানভেদে প্রতি মণ পাটের দাম ২১শ থেকে ২২শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাটের ফড়িয়া ব্যবসায়ী দিঘা গ্রামের ইদ্রিস আলী বলেন, এই এলাকার চাষিরা খুব একটা যত্ন নিয়ে পাট ধোয়ার কাজ করে না। এতে করে অন্য জেলার পাটের মানের চেয়ে আমাদের পাটের মান ও রং ভালো হয় না।
পাট ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, নওগাঁয় প্রতিমণ পাটের দাম আমাদের চেয়ে ৫-৬শ টাকা প্রতিমণে বেশি। কিন্তু এই এলাকার পাটের মান ভালো না হওয়ার কারণে দাম তুলনামূলক কম পায় চাষিরা।
পাট সংরক্ষণকারী দিঘা গ্রামের ব্যবসায়ী আজিজুল হোসেন বলেন, পাট কিনতে শুরু করেছি। পাটের দাহিদা আছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এবার অন্য এলাকার পাট কম চাষ হয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে স্থানীয়ভাবে পাটকল। এছাড়াও বিভিন্ন মোকামে পাটের টান রয়েছে।
আড়ানী সরকারি মনোমোহিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক কামরুল হাসান জুয়েল বলেন, সরকারিভাবে খাদ্য বিভাগ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান পাটের ব্যাগ ব্যবহার করে না। যদি সার কারখানা, চিনিকল, সিমেন্ট কারখানা, চাল ও আটাসহ বেশিরভাগ কারখানার পণ্য সরবরাহ করা হলে পাটের দাম বাড়ত বলে মনে করেন তিনি। আবার বিভিন্ন পণ্যের মোড়কের জন্য দেশের বিপুল অর্থ বিদেশে যেত না। বেঁচে যেত দেশীয় পাট শিল্প।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, পাটের জমিতে কিছু পানি থাকলে আঁশের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে অপরিপক্ক পাট কাটলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। বর্তমান বাজারে ওঠা পাটগুলো হয়তো পরিপক্ক হওয়ার আগে কাটা হয়েছে, ফলে ফলন কিছুটা কম হচ্ছে। এ উপজেলা ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ফলন হয়েছে ২ পয়েন্ট ৬৫ মেট্টিকটন। উপজেলায় মোট উৎপাদন হয়েছে ৯ হাজার ৬৫৮ মেট্টিকটন।