রাজশাহীতে চিকিৎসকদের সুরক্ষায় জরুরি এন-৯৫ মাস্কের ঘাটতি
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী :বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, স্বাস্থ্যকর্মীরা ঝুঁকিতে থাকলে সবাই ঝুঁকিতে থাকে। তাই তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত হলে সংক্রমণ প্রতিরোধ সম্ভব। সারা দেশের মতো রাজশাহীতে করোনা মোকাবিলায় সম্মুখসারিতে আছেন চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ানসহ অন্যন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা। এসব পেশাজীবী মানুষের মধ্যে বেশ কয়েকজন করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের সুরক্ষার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত না হলে দেশে করোনা মোকাবেলার অবনতির আশঙ্কাও রয়েছে। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকেও চিকিৎসকদের জন্য নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। দেশে এ পর্যন্ত কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স আক্রান্ত হওয়ার পরে গত বুধবার সিলেটের ডা. মঈন উদ্দিন নামের এক চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। চিকিৎসকের মৃত্যুর বিষয়টি দেশের চিকিৎসকদের নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে।গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসকের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনা মোকাবেলার জন্য যে জিনিসটা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে এন-৯৫ মাস্ক। এই মাস্কটি পড়ে চিকিৎসা করলে ৯৫ শতাংশ সুরক্ষা থাকা যায়। কিন্তু চিকিৎসার জন্য এই মাস্কটি রাজশাহীতে রয়েছে, হাতে গোনা।
এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, রাজশাহীতে ৬৩ জন চিকিৎসক, ১২০ জন নার্স ও ৫০ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। এদের জন্য ২০ হাজার পিপিই, ২০ হাজার মাস্ক ও হাতের স্লোভসসহ অন্যান্য উপকরণ যা রয়েছে তা দিয়ে এক মাস চালানো যাবে। তবে সংকট রয়েছে ভেল্টিলেটরের যা রাজশাহীতে আছে মাত্র ১৫টি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, এই ভেল্টিলেটর শুধু রাজশাহীতেই নয় দেশব্যাপী সংকট আছে। আর পরীক্ষা কিট পর্যাপ্ত রয়েছে ।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যপক ডা. মাহাবুবুর রহমান বাদশা জানান, চিকিৎসকদের জন্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এন-৯৫ মাস্ক। এই মাস্ক না পড়ে চিকিৎসা করা খুবই ঝঁকিপূর্ণ। এই মাস্কটি ৯৫ শতাংশ সুরক্ষা দিয়ে থাকে চিকিৎসকদের জন্য। এই বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে কর্তৃপক্ষকে। করোনা চিকিৎসার জন্য ৭টি উপকরণ মিলে পিপিই আর এই উপকরণের মধ্যে এন-৯৫ মাস্ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
রামেক হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী জানান, পরীক্ষা করার জন্য হাসপাতালে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত কিট রয়েছে। কিন্তু এন-৯৫ মাস্ক এখন সংকট। এন-৯৫ মাস্ক ছাড়া করোনা পরীক্ষা করা যাবে না! বর্তমানে হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগে ৯০ টি এন-৯৫টি মাস্ক আছে যা কোনোভাবেই পর্যাপ্ত নয়। আর চিকিৎসা করার জন্য হাসপাতালেও এন-৯৫ মাস্ক আরো ৯০টির জরুরি সরবরাহ প্রয়োজন।
তিনি আরো জানান, বিষয়টি এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। নইলে চিকিৎসকরা ঝুঁকির মধ্যেই থাকবেন।
রাজশাহী স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. গোপেন্দ্র নাথ আচার্য্য জানান, করোনার বিষয়ে সারা দেশের চেয়ে আমাদের রাজশাহী এখনো অনেক ভালো অবস্থানে আছে। তাই এই ভালো অবস্থান সবাইকে নিশ্চিত করতে হবে। তবে দিনে দিনে করোনা রোগী বাড়ছে!
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত বলে কোনো কথা নেই! আমাদের চাহিদা মতো আমরা চিকিৎসকদের পিপিই ও প্রয়োজনীয় উপকরণ দিচ্ছি। কিন্তু এন-৯৫ মাস্ক এখন ভীষণ প্রয়োজনÑ যা সারা বিশ্বেই সংকট আছে। এটার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, বর্তমানে আমাদের রাজশাহীতে করোনার জন্য ৬৩ জন চিকিৎসক, ১২০ জন নার্স ও ৫০ জন বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করছে। তাদের জন্য ২০ হাজার পিপিই এবং ২০ হাজার মাস্ক এবং বাকি উপকরণ আছে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এন-৯৫ মাস্ক। বর্তমানে আমাদের হাসপাতালে মাত্র ১২০টি এন-৯৫ মাস্ক আছে। তাই এই মাস্কের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে গুরুত্ব দিতে হবে। চিকিৎসকরাও আমাকে এই বিষয়ে অনেকবার অবহিত করেছেন। আমিও উপর মহলে বিষয়টি জানিয়েছি।
এদিকে করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। প্রতিবেদনে জেলার করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ অবস্থা এবং গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রকাশ করা হয়। বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসন প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজশাহীতে ১০টি সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রের ১১৫টি বেড করোনা চিকিৎসায় প্রস্তুত করা হয়েছে। ১৬ জন ডাক্তার ও ১৩ জন নার্স করোনা চিকিৎসায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছেন। ৬,৮০৯ সেট ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) এবং প্রয়োজনীয় জরুরি ওষুধ মজুত রয়েছে। ইতোমধ্যে ১, ৪২৫ সেট পিপিই বিতরণ করা হয়েছে।