• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
ফরিদপুরের সদরপুরে পানিবন্দি ৭ হাজার পরিবার

ছবিঃ বন্যাকবলিত এলাকা চরনাছিরপুর ইউনিয়ন।

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। উজানের পাহাড়ি ঢলের সাথে সাথেই হঠাৎ পানিবৃদ্ধির কারনে এ বন্যা দেখা দিয়েছে।

বর্তমানে পদ্মা ও আড়িয়াল খা নদীর পানি বিপদৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সৃষ্ট বন্যায় পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় ৭হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদের পানি প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি থাকায় নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ঘরবাড়ি,ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও পানির স্রোতে বাড়িঘর,গাছপালা ভেঙ্গে পড়ছে। চরবেষ্টিত চরনাছিরপুর,দিয়ারা নারিকেল বাড়ীয়া, চরমানাইর, আকোটেরচর ও ঢেউখালী(আংশিক) ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি পরিবারের ঘরেই পানি প্রবেশ করেছে। পানিতে বন্দি থাকা পরিবার গুলো রান্না,থাকা,খাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

গত ক’দিন ধরে পানিবন্দি পরিবারগুলোর কেউ কেউ পাশের নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে আবার কেউ রাস্তা বা বাঁধের উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ ঘরের মাঝে খাট চৌকি দিয়ে মাচা বানিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। চরম বিপাকে পড়েছেন বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী আর শিশুরা। অনেকে বাড়িঘর ফেলে আগেই বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। বিশেষ করে বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও নতুন করে এসব পরিবারের মাঝে কোন ত্রাণ সহায়তা ও শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়নি।

পানিতে প্লাবিত চরাঞ্চলের প্রতিটি গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট প্লাবিত থাকায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা। এসব চরাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে গরু, ছাগলসহ বিভিন্ন গৃহপালিত পশু-পাখি। এসব গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার কৃষকরা। এছাড়াও বন্যার পানিতে ভেসে গেছে শত শত বিঘা জমির ফসল। অব্যাহত বন্যায় ডুবে গেছে উঠতি ফসল বাদাম, আমান,আউস,পাট,ভুট্টাসহ নানান জাতের সবজি। ফসল নষ্ট হওয়ায় নিদারুন অর্থ কষ্টে পড়েছেন এসব অঞ্চলের চাষিরা। অপরদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোও রয়েছে পানিতে প্লাবিত। পানিতে বিপর্যস্ত রয়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা।

আসন্ন ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে অনেকেই ঘরে ঘরে গরু ছাগল মোটাতাজা করেছেন। কিন্তু বন্যার পানিতে খাদ্যসংকটে স্বাস্থ্যহানী হচ্ছে এসব মোটাতাজা গরুর। ফলে লোকসানের শঙ্কা রয়েছে চরবাসীর মধ্যে। অব্যাহত বন্যার কারণে রান্না করতে না পেরে অনেকেই এক বেলা খেয়ে দিনাতিপাত করছেন। এসব এলাকায় শুকনো খাবার ও শিশু খাদ্যের ও সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
এলাকার ইমান উদ্দিন, গত ক’দিন ধরে বন্যায় ডুবে আছি। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। ঘরের ভেতর খাট ও চৌকিতে মাচা বানিয়ে দিনে রান্না করে তাই রাত পর্যন্ত খেয়ে কোনো রকম বেঁচে আছি। করোনার কারণে আত্মীয়ের বাড়িতেও পাঠাতে পারছি না।

হোসেন কাজী বলেন, চারদিকে পানি পরিবার নিয়ে শুকনো স্থানে দাঁড়ানোর জায়গা নেই। উঁচু রাস্তায় দাঁড়ালেও বৃষ্টির কারণে থাকার উপায় নেই। গরু ছাগল নিয়ে বড় বিপদে পড়েছি।
চরনাছিরপুর ইউনিয়নের হাফেজ কান্দি গ্রামের বাসিন্দা ও ইউপি সদস্য রিপন ফকির জানান, গত দুদিন যাবত গবাদিপশু নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বাড়ীতে খাবারও নেই, বাড়ী থেকে বেরও হতে পারছেন না। একপ্রকার তিনি অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।

এ ব্যাপারে চরনাছিরপুর ইউনিয়ন শেখ মোঃ আক্কাছ আলী বলেন, আমি পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং তাদের তালিকা তৈরী করছি। প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে ত্রান বিতরণ করা হবে।

সদরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পূরবী গোলদার বলেন, আমি প্রতিনিয়িত দুযোর্গ কবলিত এবং পানিবন্দি পরিবার গুলোর খোজ খবর নিচ্ছি। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে ত্রান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।