• ঢাকা
  • শনিবার, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ ইং
ফরিদপুরে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বীর নিবাসে অনিয়মের অভিযোগ, প্রতিবাদ করে হুমকিতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি:

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বীর নিবাসের নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সরুজ মিয়া নামের এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদ করায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে নানা উপায়ে হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো প্রতিকার মিলেনি বলে দাবি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটির।

নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের ধুতরাহাঁটি গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ মুক্তিযোদ্ধা সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর পরিবারের অভিযোগ, ‘আমাদের বীর নিবাসের কাজে প্রথম থেকেই নানা অভিযোগ থাকলেও আমরা বলা সত্ত্বেও ঠিকাদার কোনো কথার ভ্রুক্ষেপ করেন না। নিবাসের দেওয়ালে ভালো ইটের সাথে খারাপ ইট মিশিয়ে কাজ করেছেন। ছাঁদে যেভাবে পাথর মিশিয়ে কাজ করার কথা সে অনুপাতে পাথর দেননি। তুলনামূলক সিমেন্টের চেয়ে বালু বেশি দিয়ে কাজ করা হয়েছে। ছাঁদের কিছু জায়গা দিয়ে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পানি পড়ছে। এছাড়া ইটের খোয়ার মানও ভালো না। এ ছাড়া এই ঠিকাদারের অন্যন্য এলাকার বীর নিবাসের কাজেও অনিয়ম করেছেন বলে শুনেছি। কেউ ভয়ে উনার (ঠিকাদার) বিরুদ্ধে অভিযোগ দেননা।’

তারাও আরও অভিযোগ করেন, ‘ফ্লোরের কাজের জন্য নিম্নমানের ইটের খোয়া ভাঙ্গা হচ্ছে। এছাড়া তিন ইঞ্চির ফ্লোর দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা দুই ইঞ্চি ও আড়াই ইঞ্চি করছে। স্থানীয়ভাবে ওই ঠিকাদার প্রভাবশালী হওয়ায় বিভিন্ন উপায়ে আমাদের পরিবারকে হুমকিতে রাখা হয়েছে- যাতে আমরা কথা না বলি এ সংক্রান্ত।’

বীরমুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো. আবু নাঈম আলী বলেন, ‘আমার বাবার মুক্তিযুদ্ধের অবদানের উপহার স্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের একটি ‘বীর নিবাস’ দিয়েছেন। ঠিকাদার সুরুজ মিয়া নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শুরু করায় আমরা প্রতিবাদ করি। পরে ঠিকাদারকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, সরকারি কাজ এর চেয়ে বেশি ভালো হবে না।’

আবু নাঈম আরও বলেন, ‘ঘর নিয়ে প্রতিবাদ করে আমরা পুরো পরিবার এখন হুমকিতে আছি। ঠিকাদার সুরুজ ও তার লোকজন আমাদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর পাচ্ছি। কিন্তু এ ঘরে নির্ভয়ে না থাকতে পারলে তো শান্তি পাবো না। প্রশাসনের কাছে আমরা নিরাপত্তাসহ সঠিক বিচার চাই।’

বীর নিবাস সম্পর্কে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী বলেন, ইট, বালু, সিমেন্টও নিম্নমানের। এসব মালামাল দিয়ে ঘর নির্মাণ করে সে ঘরে তো থাকা যাবে না। তার চেয়ে আমাদের আগের ঘর অনেক ভালো। শান্তিতে ঘুমানো যায়।

এদিকে, ঠিকাদার সুরুজ মিয়া সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বীর নিবাস নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানে কোনো নিম্নমানের কাজ হচ্ছে না। এসব বানোয়াট ও মিথ্যা অভিযোগ। প্রয়োজনে আপনি এসে আমার সাথে দেখা করেন। আমি আপনাকে নিয়ে কাজ দেখাচ্ছি। কোথায় অনিয়ম হয়েছে সেটা বের করে দেন। আমি সেগুলো ঠিক করে দিব। ওই পরিবার এর আগেও নানা অভিযোগ করেছিলেন, সেগুলোর সত্যতা পাইনি এ প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ। এছাড়া হুমকি-ধমকি দেওয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করেছেন এ ঠিকাদার।’

এব্যাপারে নগরকান্দা উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফজলুল হক বলেন, ‘নগরকান্দা উপজেলায় বীর নিবাসের অনেক জায়গায়ই ভালো কাজ হয়নি। অনেক নিবাসের কাজ পড়ে আছে দীর্ঘদিন। তিন বছরের আগের কাজও পড়ে থাকতে দেখেছি। এ সংক্রান্ত অনিয়মের ব্যাপারে খতিয়ে দেখার দাবি এ কমান্ডারের।’

এব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কাজ করতে ঠিকাদারকে বলা হয়েছে। তবে, কয়েকমাস আগে কাজের একটি অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন ওই বীরমুক্তিযোদ্ধা। আমি অভিযোগটি রেখে তাকে বলেছিলাম ছাঁদ ঢালাইসহ অন্যন্য কাজের সময় জানাতে, কিন্তু তিনি আর জানাননি। আবার ঠিকাদারও আর যোগাযোগ করেননি।’

এব্যাপারে নগরকান্দার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি এখানে, তাই বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে, খোঁজ খবর নিতে এখনই লোক পাঠাচ্ছি ওই মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে।’

এব্যাপারে জানতে চাইলে নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাফী বিন কবির বলেন, ‘বিষয়টি আপনার মাধ্যমেই প্রথম জানলাম। তবে বীর নিবাসের কাজে অনিয়ম হওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রতিবেদক
হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

জুলাই ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« জুন    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।