• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
চরভদ্রাসন পদ্মার ঘাটে নৈরাজ্যের শিকার হচ্ছেন ঈদ যাত্রীরা

চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পদ্মা নদীর গোপালপুর ও চর মৈনট ঘাট দিয়ে বুধবার সকাল থেকে ঈদযাত্রী পারাপারের ধুম লেগে আছে। বছর ঘুরে নারের টানে ঘরমুখী মানুষগুলি বাড়ী ফিরতে গিয়ে উপজেলা নৌরুটের লঞ্চ ও ষ্পীডবোট ঘাট কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্নভাবে নৈরাজ্যের শিকার হচ্ছেন ঈদযাত্রীরা।
উপজেলা পদ্মা নদীর গোপালপুর ও চর মৈনট ঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করার পাশাপাশি দ্বিতীয় তলার ছাদ জুড়ে সারি সারি মোটর সাইকেল বোঝাই করে পদ্মা পারাপার, যাত্রীদের সাথের ব্যাগ ও ব্যাগেজের ভাড়া আদায়, ঘাট নৈরাজ্যের শিকার প্রতিবাদী যাত্রীদের অশ্লিল গালমন্দ করে থামিয়ে রাখা, যাত্রীদের পাওনা টাকা ফেরত না দেওয়া ও মহিলা যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যাবহার করা ও অশ্লিল গালমন্দ করা সহ ঘাট কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছচারীতায় ঈদযাত্রীরা চরম নৈরাজ্যর শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
বুধবার উপজেলা পদ্মা নদীর গোপালপুর ও মৈনট ঘাট দু’টি সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, প্রতিটি ঘাট পয়েন্টে ষ্পীডবোট ও লঞ্চ ষ্টেশন পাশাপাশি রয়েছে । গত ক’মাস ধরে ষ্পীডবোট ঘাট দু’টির রাজস্ব আদায় করে চলেছেন সরকারি লোকজন। উপজেলা পদ্মা নদীর গোপালপুর ষ্পীডবোট ঘাটটি চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও চর মৈনট ঘাটটি দোহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাদের কর্মচারী দিয়ে নিয়ন্ত্রন করে আসছেন। এতে পদ্মা পারাপারে ষ্পীডবোট নির্ধারিত ভাড়া ছিল যাত্রীপ্রতি ১৫০ টাকা। কিন্ত বুধবার ঢাকা থেকে আগত ঈদযাত্রীদের কাছ থেকে চর মৈনট ঘাটে যাত্রীপ্রতি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ২শ’ টাকা। এ ব্যপারে বুধবার দোহার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছ থেকে সাত দিনের জন্য ডাক নেওয়া ঘাট ইজারাদার কাজল হোসেন জানায়,“চর মৈনট ঘাটটি এক সপ্তাহর জন্য ডাক নিয়েছেন মূলত আবুল খায়ের। আমি তার পক্ষে ঘাট পরিচালনা করছি। এ নৌরুটে ষ্পীডবোটের পরিমান কম থাকার কারনে গোপালপুর ঘাট থেকে ঝাওয়ালী ষ্পীডবোট এনে ঈদযাত্রী পারাপার করানো হচ্ছে। তাই ঘাটে পর্যাপ্ত পরিমান ষ্পীডবোট সচল রাখার স্বার্থে যাত্রী প্রতি অতিরিক্ত ৫০ টাকা সহ মোট ২০০ টাকা হাড়ে ভাড়া আদায় করে চলেছি”।
আর পদ্মা নদীর ষ্পীডবোট ঘাটের পাশাপাশি রয়েছে বিডাবিøউটিএ পরিচালিত লঞ্চঘাট। এ ঘাটের যানগুলো অনেক পুরাতন ও জরাজীর্ণ আনফিট লঞ্চ দিয়ে হাজার হাজার ঘরমুখো যাত্রীদের পদ্মা নদী পারাপার করানো হচ্ছে। দেশের কাঠালবাড়ী ও মাওয়া সহ বিভিন্ন ঘাটে ব্যবহৃত আনফিট ও বাতিলকৃত লঞ্চগুলো উপজেলার গোপালপুর ও মৈনট ঘাটে এনে যাত্রীদের চরম ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে পারাপার করানো হচ্ছে পদ্মা নদী। বুধবার সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, প্রতিটি জরাজীর্ণ লঞ্চের কানায় কানায় ঈদযাত্রী বোঝাই করে এবং একই লঞ্চের দ্বিতীয় তলার ছাদে ২৫/৩০ খানা করে মোটরসাইকেল সাজিয়ে পারাপার করা হচ্ছে পদ্মা নদী।
লঞ্চে যাত্রী প্রতি ৭০ টাকা, প্রতি মোটরসাইকেল ২০০ টাকা, যাত্রীর ব্যাগ ব্যাগেজের অতিরিক্ত ভাড়া ৫০ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। কিন্ত একই লঞ্চে ঈদযাত্রী ও মোটরসাইকেল বোঝাই করার ফলে অনেক বেশী ঝুঁকির বেড়ে গেছে। যাত্রীরা পদ্মা নদী পারাপারকালে লঞ্চে যার যার মত স্থান নেওয়া মাত্র একহাত জায়গায় দাড়িয়ে প্রচন্ড তাপদাহর মধ্যে বাড়ী ফিরছেন। যেকোনো মুমূর্তে লঞ্চগুলো দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
বুধবার সকালে লঞ্চে পার হয়ে আসা গোপালপুর ঘাটের একযাত্রী রানা শংকর (৩৫) জানায়, “ তার বাড়ী খুলনা শহরে। তিনি এ নৌরুটে পদ্মা পার হয়ে বাড়ী যাচ্ছেন। কিন্তু লঞ্চে উঠার সময় ভাড়া বাবদ মাষ্টারকে ৫শ’ টাকার নোট দিলে ভাংতির অভাবে টিকিট মাষ্টার যাত্রীর পাওনা টাকা দিতে না পেরে টিকিটের গায়ে যাত্রীর পাওনা ২০০ টাকা লিখে দেয়। কিন্ত লঞ্চটি গোপালপুর ঘাটে ভিড়ার আগেই কর্মরত সুপারভাইজার উঁধাও হওয়ার কারনে যাত্রীদের পাওনা টাকাগুলোও গচ্চা গেছে। একই প্রতরনার শিকার আরেক যাত্রী উপজেলা সদরে বিএস ডাঙ্গী গ্রামের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষিকা ফিরোজা বেগম ওরফে লতা ম্যাডাম। উক্ত শিক্ষিকাকে লঞ্চ কর্মচারীরা র্দুব্যবহার ও কুরুচিপূর্ণ গালমন্দ করে সুপার ভাইজার একই যাত্রীর দুই দফায় ভাড়া আদায় করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। একই সময় উপজেলা সদরে বিএস ডাঙ্গী গ্রামের বাড়ী ফেরা আরেক যাত্রী. যিনি ঢাকা প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের অডিটর হিসেবে কর্মরত মুক্তা আক্তার জানায়, “ঢাকা থেকে এসে চর মৈনট ঘাটে নেমে আমি প্রথমে লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখি ঘাট কর্তৃপক্ষ মহিলাদের সাথে চরম দুর্ব্যাবহার করছে, তাই লঞ্চে না এসে আমি দ্রæত ষ্পীডবোট দিয়ে পদ্মা পারাপার হয়েছি”।
এছাড়া জানা যায়, লঞ্চে জীবনরক্ষাকারী পর্যাপ্ত বয়া নেই, পর্যাপ্ত পরিমান অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার নেই, নবায়নকৃত কাগজপত্র ও চালকদের লাইসেন্স নেই। লঞ্চের ধারন ক্ষমতা অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই, মোটর সাইকেল ও অতিরিক্ত বিভিন্ন মালামাল বোঝাই করে পদ্মা পারাপার চরম ঝুঁকি বয়ে আনছে বলে অভিযোগ। এ ব্যপারে উপজেলা গোপালপুর ঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) ফরিদ হোসেকে জিজ্ঞেস করলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, “লঞ্চে ধারন ক্ষমতা অতিরিক্ত মোটরসাইকেল লোডতো দুরের কথা, এককেজি মালামালও উঠানো যাবে না বা আইনগত সম্পূর্ণ নিষেধ রয়েছে। তিনি লঞ্চ ঘাটের নৈরাজ্যর বিষয়টি গভীর নজরে রাখছেন বলেও জানান”।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।