করোনা সংকট মোকাবেলায় সরকারি এক লাখ পিস পার্সোনাল প্রটেকশন ইক্যুপমেন্ট (পিপিই) বানাচ্ছে চট্টগ্রামের তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান স্মার্ট জিন্স গ্রুপ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় ঔষধালয় স্মার্ট জিন্স গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেডকে পিপিই তৈরির এ কার্যাদেশ দেয়। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সরা এসব পিপিই ব্যবহার করবেন বলে জানা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রথম দফায় ৫০ হাজার পিপিই’র চালান ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান সিআইপি।
স্মার্ট জিন্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান সিআইপি দৈনিক আজাদীকে বলেন, করোনা ভাইরাস সংকটে দেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এর মধ্যেও করোনা সংকট মোকাবেলায় সরকারি কার্যাদেশ পাওয়ায় আমাদের শ্রমিকদের পিপিই তৈরির জন্য লাগানো হয়েছে। চট্টগ্রাম সিইপিজেডস্থ আমাদের বিশেষায়িত পোশাক কারখানা স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেড-এ এসব পিপিই তৈরি করা হচ্ছে।’ পিপিই তৈরির মধ্য দিয়ে করোনা মোকাবেলায় সরকারের পাশে দাঁড়াতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন খ্যাতনামা এ ব্যবসায়ী।
স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় ঔষধালয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত পৃথক পত্রের মাধ্যমে এক লক্ষ পিপিই তৈরির দুটি কার্যাদেশ দেওয়া হয়। গতকাল ২৪ মার্চ সকালে এ কার্যাদেশ পেয়েই কারখানার শ্রমিকদের পিপিই তৈরির কাজে নিয়োগ করা হয়। মঙ্গলবার প্রথমদিনেই ৫০ হাজার পিপিই ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আগামী ২৬ মার্চের মধ্যেই বাকিসব পিপিই তৈরির কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, সিইপিজেডস্থ স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেডের একটি বিশাল ফ্লোরে পিপিই তৈরির কাজ করছে কয়েক হাজার শ্রমিক। করোনা ভাইরাস মোকাবেলার পর্যাপ্ত সরঞ্জাম পরিহিত অবস্থায় শ্রমিকরা এসব পিপিই তৈরির কাজ করছেন। কারখানার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পিপিই তৈরি কাজ দেখভাল করছেন। কোনরূপ সেলাই ছাড়াই আল্ট্রাসনিক মেশিনের মাধ্যমে আলাদা তিন রঙের এসব পিপিই তৈরি হচ্ছে।
স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) বিপ্লব কুমার মজুমদার দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমাদের কারখানায় তৈরি এসব পিপিই ওয়াটার প্রুফ ও এয়ার প্রুফ। এতে এসব পিপিইতে কোন পানি ঢুকবে না, বাতাসও প্রবেশ করবে না।’ তিনি বলেন, প্রথম দিনেই ৫০ হাজার পিপিই তৈরি করে আমরা ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছি। আরো ৫০ হাজার পিপিই তৈরি করা হচ্ছে। আরো অর্ডার পাওয়ার প্রস্তাব পেয়েছি। ওয়ার্ক অর্ডার (কার্যাদেশ) পাওয়ার পরই দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব পিপিই প্রস্তুত করা হবে। এসব পিপিই তৈরির জন্য আমাদের কারখানাতে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তাছাড়া আগে থেকেই কারখানার নিরাপত্তা দিতে সরকারের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, পিপিই তৈরিতে আমাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমরা আমেরিকায় পিপিই রপ্তানি করি। যে কারণে পিপিই তৈরির যাবতীয় সাপোর্ট ও এঙেসরিজ আমাদের রয়েছে। পিপিই তৈরিতে আমাদের টেকনিশিয়ানরা অভিজ্ঞ। আমাদের কারখানায় পিপিই তৈরির আল্ট্রাসনিক মেশিন রয়েছে। নায়াগ্রা জলপ্রপাতে আমাদের কারখানার পিপিই আগে থেকেই রপ্তানি হতো। আমাদের এখনো এঙপোর্ট বুকিং রয়েছে। করোনা সংকটকালীন সময়ে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রপ্তানি বুকিং বাতিল করে বিশেষ অনুমোদনক্রমে সরকারকে পিপিই সরবরাহ করছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের আগে থেকেই পিপিই তৈরির উপকরণ মজুদ ছিল। এঙপোর্ট বন্ধ থাকায় ওইসব উপকরণ ব্যবহার করে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জন্য পিপিই সরবরাহ করছি।