• ঢাকা
  • সোমবার, ২২শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৫ই জুন, ২০২৩ ইং
Mujib Borsho
Mujib Borsho
করোনা প্রভাবে রাজশাহীসহ সারাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণী -পেশার লোকজনের চরম দুর্বিসহ জীবন -যাপন
মোঃআলাউদ্দিন মন্ডল,রাজশাহী : 
সরকারী চাকুরীজীবী বাদে কোন মানুষই কোনদিন কল্পনাও করতে পারেনি যে,তাদের জীবনে এইরূপ সময় আসবে।বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর।বাইরে থেকে দেখে বোঝার কোন  উপায় নেই কারা এই শ্রেণীর মধ্যে পড়ে।কারন তাদের চলাফেরা থেকে শুরু করে জীবন যাত্রার মান দেখে সমাজের,এমনকি আশপাশের লোকজন তাদের মনে করে তারা টাকা পয়সাওয়ালা  মানুষ,কিন্তু আসলেই যে তারা পয়সাওয়ালা লোকজন নই। খাটি খায় কোন চিন্তা নাই এই টাইপের এটা কাকে বোঝাবে ?করোনা মহামারীর কারণে তারা এখন যে সমাজের বঞ্চিতদের কাতারে পড়ে তা কাকে বলবে?
বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মরতদের অনেকে বেতন পাচ্ছেন না৷ সঞ্চিত অর্থ শেষের পথে, আছেন চাকরি হারানোর শঙ্কায়৷ সরকারের কোনো প্রণোদনার মধ্যেও নেই তারা৷ ফলে চলমান লকডাউনের মধ্যে মহাসংকটে পড়েছেন দেশে ‘গৃহবন্দি’ কয়েক কোটি মধ্যবিত্ত৷ অর্থনীতিবিদরা মনে করেন এইসব পরিবারের অনেকেই এখন নিম্নবিত্তের স্তরে নেমে আসছেন৷সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বার্তা সংস্থাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষের চার কোটি পরিবার আছে৷ এর মধ্যে নিম্নবিত্ত ২০ ভাগ আর উচ্চবিত্ত ২০ ভাগ৷ মাঝের যে ৬০ ভাগ এরা নিম্ন, মধ্য ও উচ্চ মধ্যবিত্ত৷ এই সংখ্যা আড়াই কোটি পরিবার হবে৷ এর মধ্যে সরকারি চাকরিজীবী, মাল্টিন্যাশনাল ও বড় কোম্পানিতে কাজ করা কিছু মানুষ বাদে অন্যরা সবাই সংকটে আছেন৷ এদের মধ্যে বড় একটা অংশ চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে আছেন৷ অনেকেরই বেতন হয়নি, অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে৷ ফলে তারা বেতন তো পাননি।এই মানুষগুলো সরকারি কোনো কর্মসূচির মধ্যেও নেই৷ তবে সরকার এসএমই ঋণ দিয়ে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে৷ তবে এই সংখ্যাও খুব বেশি না৷ বিপুল জনগোষ্ঠী এখনও সহায়তার বাইরে রয়ে গেছে,অনেকের ঘরে খাবার নেই। মোঃ মইদুল ইসলাম রাজশাহী সাহেব বাজারে একটি গার্মেন্টসের দোকানদার  ৷ তার দোকানে কয়েক জন  কর্মচারী৷ ২৫ মার্চ দোকান বন্ধের আগে হাতে যে টাকা ছিল তা দিয়ে কর্মচারীদের মার্চ মাসের বেতন দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন৷ সামান্য টাকা রেখেছিল নিজের পরিবারের খরচ মেটাতে৷ যা এরিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে৷ রোজগারের জন্য দোকান খুলতে পারছেন না বা খুললেও বেচা বিক্রি নেই।অত্র প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে  বলেন, ‘আমি কোনোভাবেই কর্মচারীদের এপ্রিল মাসের বেতন দিতে পারব না৷ নিজেই খাওয়ার জন্য এক আত্মীয়ের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করেছি৷ এখনও বাড়ি ভাড়া দিতে পারিনি৷ মালিক চাপ দিচ্ছে৷ চার সদস্যের পরিবার নিয়ে খুবই সংকটে আছি৷ এই অবস্থা আর ১৫ দিন থাকলে আমাকে পথেই নামতে হবে৷’শুধু মইদুল ইসলাম নই,এই রকম লক্ষাধিক এরও বেশি লোকজন রয়েছে এই মহানগর এর অধিবাসী।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গৃহিণী হলেও বাসায় টুকটাক জমা কাপড় সেলাই এর কাজ করে কিছু সংসারের পিছনে ব্যয় করেন,তার স্বামী একটি দোকানের কর্মচারী৷ ছেলে মেয়ে নিয়ে কোনোমতে সংসার চলে তাদের৷ করোনায় স্বামী-স্ত্রীর কোনো কাজ না থাকায় তীব্র খাবার সংকটে পড়েছেন এই দম্পতি৷ উক্ত পরিবার বলেন, নিরুপায় হয়ে তিনি থানার ওসিকে ফোন দিয়েছিলেন৷ ওসি অপারগতা প্রকাশ করেন৷ পরে ওই এলাকার কাউন্সিলর কিছু সাহায্য দেওয়ার আশ্বাস দিলেও চারদিনেও কিছু পাননি৷ পরে একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাদের কিছু সাহায্য দিয়েছে৷তবে মধ্যবিত্তদের অনেকেই চক্ষুলজ্জায় মানুষের কাছে সাহায্য চাইতে পারছেন না৷ নিজেদের পরিস্থিতি বাইরের কাউকে তারা জানাতেও পারছেন না৷এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে চলছেন দেশের কয়েক কোটি মধ্যবিত্ত? পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘মধ্যবিত্তের কিছু সঞ্চয় থাকে৷ গেল এক মাসের লকডাউনে তারা সেই সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে৷ এভাবে আরেক মাস চললে তাদের সেই সঞ্চয়ও শেষ হয়ে যাবে৷ তখন কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে? বিপুলসংখ্যক মধ্যবিত্ত এই পরিস্থিতিতে নিম্নবিত্তে পরিণত হবেন৷সবচেয়ে বড় সংকট হবে যখন সবকিছু স্বাভাবিক হবে তখন তো বিপুল সংখ্যক মানুষ চাকরি হারাবেন৷ উন্নত দেশে তো বেকার ভাতা দেওয়া হয়৷ এখানে সেই ব্যবস্থা নেই৷ তাহলে এই মধ্যবিত্ত বেকার শ্রেণি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? সরকারের যে প্রণোদনা সেখানেও কিছু মধ্যবিত্তের কোনো অবস্থান নেই৷ আবার আমাদের যে ব্যবস্থা সেখানে সরকার চাইলেও মধ্যবিত্তকে কিছু করতে পারে না৷ আসলেই বাংলাদেশে মধ্যবিত্তরা ভয়াবহ সংকটে আছেন৷’
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই কারণেই আমরা নগদ প্রণোদনার কথা বলেছিলাম৷ আমাদের দেশে ছয় কোটি ১০ লাখ শ্রমিক আছেন৷ এর মধ্যে এক কোটি শ্রমিক দিন এনে দিন খায়৷ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কর্মসংস্থান যারা করেন তাদের সংখ্যা দুই কোটি ২০ লাখ৷ আমরা সরকারকে বলেছি, একটি পরিবারে চারজন আছেন এমন একটি পরিবারকে মাসে আট হাজার টাকা হিসেবে দুই মাসের ১৬ হাজার টাকা দিতে৷ তাতে সরকারের ২৭ হাজার কোটি টাকা লাগবে, যা জিডিপির এক শতাংশ৷ এভাবেই এই ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের সহায়তা করা যেতে পারে৷’রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল এলাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায় স্বামী-স্ত্রী দুজনই একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। ফেব্রুয়ারী মাসে বেতন পেয়েছেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে বেতন পাচ্ছেন না৷ কোনোমতে চলছে সংসার, কিন্তু এখনো বাসাভাড়া মেটাতে পারেননি৷আরো একজন মানুষ (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)পাবলিক গাড়ী চালক জানান, সামনের মাসে বেতন দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে তার চাকরিদাতা ৷ এমনকি চাকরি থাকবে কি না তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

জুন ২০২৩
শনিরবিসোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্র
« মে  
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।