১৮ বিঘা জমি, সাজানো গোছানো বাড়ি, স্বামী- স্ত্রী, নাতি নাতনী ছেলে আর বৌমা মিলে ৭সদস্যের পরিবার। গোয়াল ভরা গরু আরও আছে ছাগল আর মুরগী। ১৮ বিঘা জমি তার সবটুুুকু গ্রাস করেছে সর্বনাশা পদ্মা নদী। অবশিষ্ট রয়েছে একটুুুকরো জমির উপর নবনির্মিত বাড়িটি। তাও আবার
নদীগর্ভে যায় যায় তাই আতঙ্কে আৎকে উঠে মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গ যায়। অশ্রু ছল ছল নয়নে বলছিলেন লাল মোহাম্মদ।
রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই ভাঙনের কারণে বাঁধের সঙ্গে ২৫টি বাড়ি হুমকির মধ্যে রয়েছে। যে কোন সময় এই বাড়িগুলো পদ্মার গর্ভে চলে যাবে। তাই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন এলাকার লোকজন। জানা যায়, বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের আলাইপুর ভুড়িপাড়া থেকে নাপিতপাড়া জামতলার মোড় পর্যন্ত ৩০০ মিটার পদ্মার বাঁধের পাড়ে ২৫টি পরিবারের বসবাস। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এই বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে লাল মোহাম্মদ, নজমুল, মোস্তফা কামাল(টেনু), সিরাজুল, আকবর, মাসুদ, কমল, সাদেকুল ইসলাম (কালু), আলম, তসলেম, রাকিব, সান্টু ও তসিকুল সহ মোট ২৫টি পরিবারের ঘরবাড়ি। তারা এখন আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছেন। ছোট ছেলে-মেয়ে ও গরু-ছাগল নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা ও দুশ্চিন্তায় আছে পরিবারগুলো। আতঙ্কে তারা রাতে ঘুমাতে পারছেনা। জিও ব্যাগ দিয়ে অস্থায়ীভাবে বাধ রক্ষা করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড বারবার অবগত করা হলে কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয় চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজের অনুরোধ ক্রমে। নাপিতপাড়া পদ্মার বাঁধ সংলগ্ন বাড়ির গৃহীনি গোলাপী বেগম বলেন, আমার ৫ কক্ষ বিশিষ্ট আধাপাকা বাড়ি। এই বাড়ি যে কোন সময় পদ্মায় চলে যাবে। রাতে ঘুম হয় না। এই বুঝি পদ্মায় চলে যাচ্ছে সব। ফলে গরু, ছাগল, নাতী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছি।অন্যস্থানে যাওয়ার জমিও নেই।পথে বসা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই আমাদের সামনে। কালু নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমি বর্ষা মৌসুমে পদ্মায় মাছ ধরে এবং অন্য সময়ে মাঠে কাজ করে তিন সদস্যের সংসার চালাই। আমি খুব কষ্টে ৩ কাঠা জমি কিনে একটি টিনের বেড়া দিয়ে ছাপরা ঘর দিয়েছি।এটা এখন হুমকির মধ্যে পড়েছে।অন্য জায়গায় যাওয়ার জমি নেই। কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা। রাত হলেই খুব ভয় লাগে। অনেক রাত আছে না ঘুমিয়ে পার করতে হচ্ছে।
পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজ বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপির সার্বিক সহযোগিতায় চলতি বছরে ৭২২ কোটি ২৪ লাখ টাকার বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে। বর্ষা মৌসুম শেষে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হবে।