সাভারে বেশিরভাগ কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে
সুমন ভূইয়া সাভারঃ সারা দুনিয়া জুড়ে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়েছে। এতে আক্রান্ত হয়েছেন ২৮ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। আবার করোনার সাথে পাঞ্জা লড়ে অনেকে জয়ী হলেও এখনো এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব হয়নি। তাই দুনিয়াজুড়ে চলছে লকডাউন, মানুষ এখনো ঘরবন্দি। অনলাইন পোর্টাল বার্তা২৪-এর প্রতিবেদক মাহিদুল মাহিদের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসছে।
বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। করোনাভাইরাস রোধে ২৬ মার্চ থেকে কয়েক দফা বাড়ানোর পর ৫ মে পর্যন্ত দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এ সময় পর্যন্ত বন্ধ থাকবে গণপরিবহন ও সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান। বন্ধ ছিল পোশাক খাতও। ছুটি পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থল ছেড়ে অনেক পোশাক শ্রমিকই গিয়েছিলেন গ্রামে।কিন্তু কাজ না থাকায় অনেক পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। আবার কাজ না থাকলে চাকরি থাকলেও বেতন হবে না। তাই চাকরি বাঁচাতে পেটের তাগিদে অনেক শ্রমিক আন্দোলনে নেমেছেন। আবার অনেক কারখানা থেকে ফোন করে শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বলা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রফতানিমুখি পোশাক কারখানাগুলো খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বিজিএমইএ। সে অনুযায়ী রোববার (২৬ এপ্রিল) সাভারের বেশিরভাগ কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে।
অনেকে বেতনের আশায় ফিরে এসেছেন আগেই। আর যারা গ্রামে ছিলেন, তারাও চাকরি বাঁচানোর জন্য কষ্ট হলেও ফিরেছেন রাতেই। শত দুর্ভোগ উপেক্ষা করে খণ্ডপথ পায়ে হেঁটে কিংবা গাড়িতে কিছুটা পথ পাড়ি দিয়ে অনেকেই যোগ দিয়েছেন কর্মস্থলে। রোববার সকালে সাভারের বাড়ইপাড়া, জিরানীবাজার, বাইপাইল, নবীনগর, কাঠগড়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ কারখানাই খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।বাইপাইল বাসস্ট্যান্ড দিয়ে হেঁটে হেঁটে কারখানায় যাচ্ছিলেন পোশাক শ্রমিক শিউলি। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, গতকাল সুপারভাইজার ফোন করে বলেছে, আজ থেকে তাদের কারখানা খুলে দেবে। কারখানায় উপস্থিত না থাকলে চাকরি থাকবে না। তাই ফোন পাওয়া মাত্র বাড়ি থেকে বের হয়েছি। খুব কষ্ট করে এসেছি। গাড়ি নাই রাস্তায়, আমি মেয়ে মানুষ, কখনও ট্রাকে, কখনও পিকআপ ভ্যানে, অটোরিকশায় করে আবার কখনো পায়ে হেঁটে প্রায় ১৬ ঘণ্টায় সাভারে এসেছি। আমার ওপর পরিবারের চারজন নির্ভরশীল। চাকরি না থাকলে তারা না খেয়ে কষ্ট পাবে। তাই শত কষ্ট উপেক্ষা করে আসলাম কাজে যোগ দেওয়ার জন্য।
ডিইপিজেড বাসস্ট্যান্ড দিয়ে কারখানায় যাচ্ছেন মরিয়ম নামের এক পোশাক শ্রমিক। তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে বেশি ভাড়া দিয়ে রাতেই বাসায় ফিরেছি। আজ থেকে কারখানা খুলে দিয়েছে তাই আসা। না এলে তো বেতন ও চাকরি হারানোর হুমকি দেয় সুপারভাইজার। কারখানা কতৃপক্ষ বলেছে, সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তারা নিয়েছে। তারা যদি নিরাপত্তা না নেয়, তবুও আমাদের কাজ করেই খেতে হবে। আমরা মারা গেলেও পরিবারকে কষ্ট দিতে পারব না। আল্লাহর ওপর ভরসা করে মাস্ক পড়ে কারখানায় যাচ্ছি। হায়াত থাকলে কিচ্ছু হবে না ইন শা আল্লাহ।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সারোয়ার হোসেন বলেন, আজ এ শিল্পাঞ্চলের অর্ধেকের বেশি কারখানা খুলে দিয়েছে। শ্রমিকরাও কাজে যোগ দিয়েছেন। তারা কে কোন এরিয়া থেকে এসেছেন, করোনা আক্রান্ত এলাকা কি না, তা আমরা জানি না। বিভিন্ন জেলার শ্রমিকরা এসেছেন। তারা কাজও করবেন একই ছাদের নিচে। ফলে করোনা ঝুঁকি বাড়ল শ্রমিকদের। দেশের স্বার্থে কারখানা খোলা রাখতে হবে। তবে বিভিন্ন জেলা থেকে ফেরা শ্রমিকরা ১৪ দিন ঘরে সঙ্গরোধে (হোম কোয়ারেন্টাইনে) থাকার পর কাজে যোগ দিলে ভালো হতো।