সুমন ভূইয়া সাভারঃ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে এলাকাভেদে ধাপে ধাপে সীমিত পরিসরে পোশাক কারখানা চালুর পরিকল্পনা থাকলেও সেটি রক্ষা করা যায়নি। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার-আশুলিয়া ও চট্টগ্রামে গত দুই দিনে হাজার খানেক পোশাক ও বস্ত্র কারখানা উৎপাদন শুরু করেছে। দূরদূরান্তের শ্রমিকদের আপাতত কর্মস্থলে আসতে নিষেধ করা হলেও তাঁরা শিল্পাঞ্চলে ফিরছেন। ফলে নতুন করে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকছেই।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নির্দেশনা অনুযায়ী অনেক কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে উৎপাদন চালু করেছে। অনেকেই আবার জরুরি ক্রয়াদেশের কারণ দেখিয়ে ৭০-৮০ শতাংশ শ্রমিক নিয়ে উৎপাদন শুরু করেছে। এসব কারখানায় পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত হচ্ছে না।
এদিকে সাভার-আশুলিয়ার কয়েকটি কারখানার মালিকপক্ষ গতকাল চালু করতে চাইলেও শ্রমিকদের অনীহার কারণে সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদ, বকেয়া মজুরি ও লে-অফ করা কারখানা খুলে দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে সাভার, আশুলিয়া,গাজীপুর বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন। এর মধ্যে গাজীপুরে তিনটি মোটরসাইকেল ও আটটি বাইসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অন্যদিকে বিজিএমইএর নির্দেশনা ছিল, রোববার ও সোমবার ঢাকার ২১৩ কারখানা চালু হবে। আশুলিয়া, সাভার, ধামরাই ও মানিকগঞ্জের কারখানা খুলবে ২৮ থেকে ৩০ এপ্রিল।
কিন্তু রোববারই ঢাকাসহ সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক কারখানা চালু হয়েছে। সেদিনই বিষয়টি নজরে আনলে বিজিএমইএর তিনজন নেতা দাবি করেন, বিজিএমইএ ও স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে কারখানাগুলো খুলেছে। গতকালও অনেক কারখানা চালু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সংখ্যাটি আরও বাড়বে বলে জানান বিজিএমইএর এক নেতা।
গতকাল জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি আরশাদ জামাল বলেন, বেশির ভাগ কারখানাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎপাদন চালাচ্ছে। তবে কারখানার বাইরে শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা কঠিন। সে জন্য স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি প্রশাসনের সহযোগিতা লাগবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বিভিন্ন পরামর্শের আলোকে বিজিএমইএ সদস্য কারখানাগুলোর জন্য একটি গাইডলাইন তৈরি করে সেটি মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছে।
আশুলিয়ার এক কারখানার শ্রমিক শাহিদা খান অভিযোগ করেন, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি। মেশিনের মধ্যকার দূরত্ব বাড়ানো হয়নি। অধিকাংশ শ্রমিককেই কাজ যোগ দিতে হয়েছে।
অভিযোগ আছে, ধাপে ধাপে কারখানার উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়টি মানা হচ্ছে না। যেমন সাভারের উলাইল এলাকার একটি কারখানা গত রোববারই তাদের ২০ হাজার শ্রমিকের মধ্যে ১৫ হাজার জনকে কাজে লাগায়। গতকাল একটি গ্রুপ প্রায় ৪ হাজার শ্রমিককে একসঙ্গে কাজে যোগদানের জন্য কারখানায় আনে। তখন স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়কে ইস্যু করে কারখানায় ভাঙচুর চালান শ্রমিকেরা। পরে শিল্প পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর বিজিএমইএ শ্রমিকদের যথাযথ স্বাস্থ্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে সব কারখানা মালিকদের পুনরায় নির্দেশ দেয়।
মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে মো. শাকিল নামের একজন পোশাকশ্রমিক বলেন, ‘কারখানা থেকে ফোন করে জানাইছে, কাজে যোগ না দিলে চাকরি থাকবে না। চাকরি না থাকলে পরিবার নিয়ে বাঁচবো কিভাবে।