“মানবিক সহায়তা কার্ড” এর মাধ্যমে ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের খাদ্য সহায়তা প্রদান
জিল্লুর রহমান রাসেল, ফরিদপুর প্রতিনিধি
বর্তমানে সারা বিশ্ব করোনা ভাইরাসের প্রভাবে প্রকম্পিত। বাংলাদেশও এই ভাইরাসের ভয়ংকর থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে জীবন ও অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়ায় অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এ বিশাল কর্মহীন মানুষকে মানবিক সহায়তার এক মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর নির্দেশনায় মানুষের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিতে নিরলস কাজ করেছে সারাদেশে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ।
মানবিক সহায়তা প্রদান কার্যক্রমটি প্রথাগত পদ্ধতিতে পরিচালনা করতে গিয়ে অনেক সময় দ্বৈততা ও অস্পষ্টতা থাকে। এ অস্পষ্টতা দূরীকরনে ও মানবিক সহায়তা প্রদান কাজটি আরও জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার আওতায় নিয়ে আসার জন্য ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার এর নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন গ্রহন করেছেন এক ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ব্যবহৃত মডেলটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর সেটি এখন জেলা পর্যায়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এরই মধ্যে জেলার প্রায় আড়াই লক্ষ দুঃস্থ্য মানুষের তালিকা করে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে সেই কার্ড। কার্ডটি ডিজিটাল পদ্ধতি হওয়ার কারনে এই কার্ড নিয়ে দ্বৈততা দূর সহ ত্রাণ কার্যক্রম সহজতর থেকে অনেক সহজ হয়েছে। এরই মধ্যে এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে ফরিদপুরের সদর উপজেলাসহ বাকি ৮টি উপজেলার ৮১টি ইউনিয়নের আড়াই লক্ষ পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণের মাধ্যমে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানাযায়, জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের এক সময়োপযোগী সৃজনশীল সৃষ্টি এই ”মানবিক সহায়তা কার্ড”। এ কার্ডে উপকারভোগীর পরিবারের সকল তথ্য সন্নিবেশিত রয়েছে। এছাড়া ছবিযুক্ত কার্ড থাকার কারনে অনেকেই চাইলেও এই কার্ডধারী ব্যক্তিকে বাদ দিতে পারবে না। আবার একই ব্যক্তি বিভিন্ন জায়গা থেকে একবারের বেশি মানবিক সহায়তা ভোগ করতে পারবে না। এই কার্ডের পাশাপাশি ডিজিটাল পদ্ধতিতে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য একটি ওয়েবসাইট ডিজাইন করা হয়েছে।
এই ওয়েবসাইটে ওয়ার্ড অনুযায়ী উপকারভোগীদের সকল তথ্য সন্নিবেশিত থাকবে। ওয়েবসাইটটিতে প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ আপলোড করার পরে এটা জনসাধারনের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হবে। এতে কোন এলাকা থেকে কে মানবিক সহায়তা পাচ্ছে, সে মানবিক সহায়তা প্রাপ্তির উপযুক্ত কিনা এবং কেউ মানবিক সহায়তার আওতা থেকে বাদ পড়লো কিনা ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে যে কেউ জানতে পারবে। মানবিক সহায়তা প্রদানের এ স্বচ্ছ প্রক্রিয়া প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তাকে সকল প্রশ্নের উর্ধে রেখে জনসাধারনের মাঝে এক আস্থার সঞ্চারন করবে বলে সকলের দৃঢ় বিশ্বাস।
জেলা প্রশাসন সূত্রে আরো জানা যায়, ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের এই মানবিক সহায়তা কার্ড প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর গ্রহন করে এই আলোকে দেশের অন্যসব জেলায় মানবিক সহায়তা কার্ড করার জন্য বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসকদের দপ্তরে চিঠি প্রেরন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ফরিদপুরের মডেল মানবিক সহায়তা কার্ডের মডেলটি অবিকল রেখে দেশের অন্যসব জেলা প্রশাসন কার্ড গ্রহন করে তারা ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম কাজ শুরু করেছে।
এ ব্যাপারে জানতে ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাসুম রেজার সাথে যোগযোগ করলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ হতে প্রাপ্ত মানবিক সহায়তা বিতরণ কার্যক্রমকে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে জেলায়। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সংকটাপন্ন মানুষকে সহায়তা প্রদান একটা সময়োপযোগী সিস্টেমের ভেতরে নিয়ে আসার নিমিত্তে সুযোগ্য জেলা প্রশাসক অতুল সরকার স্যারের মহতী ও সুচিন্তিত আধুনিক ধারনার এক অনবদ্য সৃষ্টি “মানবিক সহায়তা কার্ড”। তার ভাবনা চিন্তা থেকে দেশে এই মানবিক সহায়তা কার্ড এর যাত্রা শুরু করছে ফরিদপুরে প্রথম। স্যারের এই উদ্যোগ এরই মধ্যে দেশের অন্য সব জেলা প্রশাসন উদ্যোগ গ্রহন করছে অনেকে। তিনি বলেন আমরা সদর উপজেলার ৩৩ হাজার পরিবারের মাঝে এই কার্ড বিতরণ করেছি। এখন সেই কার্ড ধরে তাদের ভিতর ত্রাণ দেয়া কার্যক্রম চলছে। আমরা করোনা সময়কালীনে প্রতি ১৫দিন পর পর এই কার্ডধারীদের মাঝে ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখবো।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, মানবিক সহায়তা কার্ডটি স্বচ্ছ কথায় একটি ডিজিটাল পদ্ধতির কার্ড। যার মাধ্যমে একটি কার্ড থেকে কে কতো বার ত্রাণ নিয়েছে তা জানা যাবে খুব সহজে। মূলত প্রথাগত পদ্ধতিতে করতে গিয়ে অনেক সময় দ্বৈততা ও অস্পষ্টতা থাকে। এ অস্পষ্টতা দূরীকরনে ও মানবিক সহায়তা প্রদান কাজটি আরও জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার আওতায় আনা সম্ভব হবে এখন থেকে। জেলার পুরো চিত্র একটি সফটওয়্যার এর মাধমে থাকবে তার মাধ্যমে জানা যাবে দুঃস্থ্যদের চিত্র। একই সাথে কেউ যদি মনে করে এই সফওয়্যার ব্যবহার করে দুঃস্থ্য কারা এবং কারো যদি তাদের ব্যাপারে কোন অভিযোগ থাকে সেটাও সেখানে লিখতে পারবে এমন অপশন রাখা হয়েছে। এমন কোন অভিযোগ পেলে আমরা যাচাই শেষে বিষয়টির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। তিনি বলেন, এভাবে আগামী একমাসের মধ্যে এই পুরো প্রক্রিয়া আমরা শেষ করতে পারবো। এরপর আর আমাদের জেলার দুঃস্থ্যদের নিয়ে বার বার ভাবতে হবে না। জেলার লিষ্ট থেকে আমরা ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলার পুরো তথ্য ডাটাবেজ এখন একটি জায়গায় থাকবে।
তিনি আরো বলেন, এখন কাগজের যে কার্ড দেয়া হয়েছে এরপর এইসব কার্ডে একটি করে বার কোড দেয়া থাকবে। যাতে কেউ এই কার্ড নকল বা অন্য কোন উপায়ে ব্যবহার করতে না পারে। আমরা জেলা প্রশাসন থেকে “মানবিক সহায়তা কার্ড” বিষয়টি ভেবে একটি ওয়েব সাইট খুলেছি। তিনি বলেন আমরা চেষ্টা করছি সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সহিত কর্ম সম্পাদনের জন্য।