জিল্লুর রহমান রাসেল, ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম তিনজন রোগীই সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালের ছাড়পত্র নিয়ে তারা নিজ নিজ বাড়ি ফিরেন। এসময় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সগণ তাদের ফুলেল শুভেচ্ছায় বিদায় জানান। এসময় আক্রান্তদের গ্রামগুলো থেকে লকডাউনও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
সুস্থ্য হয়ে ঘরে ফেরা এই তিনজন হলেন, নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গী ইউনিয়নের ডাঙ্গি গ্রামের আব্দুল খলিলুর রহমান বেপারী (৬২), তার স্ত্রী জেসমিন আক্তার বুলু (৪৮) ও বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের চন্দনী গ্রামের মোঃ শাহাবুদ্দিন (৪৭)।
এদের মধ্যে খলিলুর রহমান গত ১৩ এপ্রিল সোমবার করোনা রোগী হিসেবে শনাক্ত হন। তার সপ্তাহখানেক আগে তিনি নারায়ণগঞ্জ হতে ফিরেন। ঢাকার আইডিসিআরে তার নমুনা পাঠানোর পর করোনা পজিটিভ আসে। তার সাথে করোনা আক্রান্ত হিসেবে সনাক্ত হন ঢাকা ফেরত আরো একজন। তাদেরকে ফরিদপুরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এঘটনার পর নগরকান্দা উপজেলা লকডাউন করা হয়।
এর চারদিন পর শুক্রবার করোনা ভাইরাস পরীক্ষার পর পজিটিভ আসে খলিলুর রহমানের স্ত্রী জেসমিন আক্তারের। ওইদিনেই বোয়ালমারীর শাহাবুদ্দিনের করোনা পরীক্ষার তার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তাদেরও ফমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঐদিনই বোয়ালমারীর চন্দনা গ্রামটি লকডাউন করে স্থানীয় প্রশাসন।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ মাহফুজুর রহমান বুলু জানান, দু’দফায় তাদের করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পর আমরা তাদের সুস্থ্যতার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এরপরই তাদেরকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। গত দুই সপ্তাহ যাবৎ করোনা ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করার পর হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার সময় ডাক্তার ও নার্সদের ফুলের অভিনন্দন পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন রোগীরা।
এদের একজন খলিলুর রহমান বলেন, হাসপাতালে আসার পর থেকে অনেক ভয়ে ছিলাম। আমার পরে যখন বাড়ির আরেকজনও করোনা আক্রান্ত হলো তখন ভয় আরো বেড়ে গিয়েছিলো। তিনি বলেন, শরীরে যখন জ¦র বেড়ে যেতো তখন খুব কষ্ট পেতাম। তবে আল্লাহর রহমতে খারাপ কিছু হয়নি।
খলিলুর রহমানের স্ত্রী জেসমিন আক্তার বলেন, হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের ভাল ব্যবহারই ছিল আমাদের বড় ভরসা। তারা আমাদের সেবা করতে যেয়ে অনেক কষ্ট করেছেন। সময়মতো খাবার খেতে পারেননি। বাড়িতে যেতে পারেননি। আল্লাহ তাদের মঙ্গল করুন।
ডাঃ মাহফুজুর রহমান বুলু ছাড়াও হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক কর্মকর্তা ডাঃ আসাদুল হক সুমন, ডাঃ কামরুজ্জামান, সিনিয়র স্টাফ নার্স আফসানা আক্তার, ও অন্য নার্সেরাও সুস্থ হওয়া তিনজন রোগীকে বিদায় মূহুর্তে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান।
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর ফমেকের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে সুস্থ্য হয়ে ঘরে ফেরার এই খবরে সংশ্লিষ্টদের মাঝেও স্বস্তি ফিরে আসে। এঘটনাকে তাদের জন্য বড় কেস স্টাডি হিসেবে উল্লেখ করেন তারা।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুর রহমান জানান, বর্তমানে সেখানে দু’জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন। আর করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছেন ৫ জন।