বাজারে বছরের এই সময়টায় নতুন পেঁয়াজ, তরমুজসহ মৌসুমি সবজিতে বাজার সরগরম থাকে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। ক্রেতা নেই, বাজার বন্ধ, আসেন না ব্যাপারীও। পাইকার না আসায় বড়ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষিরা। অথচ মাঠে পরিপক্ক হয়েছে মৌসুমি ফসল। ক্রেতা না থাকায় যা মাঠেই নষ্ট হচ্ছে।
কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সূত্র জানায়, বিগত আমন ও বোরো মৌসুমে ধান চাষে কিছুটা লোকসান হয় চাষিদের। যে কারণে এবার অনেকেই ভুট্টা, গম, মসুর ও পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছেন।
বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ২ লাখ ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বীজতলা করা হয়েছিল ২ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টর জমিতে। বীজতলা তৈরিতে অগ্রগতির হার ছিল ১১৫ শতাংশ। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫ লাখ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ কম হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব জমিতে এবার অন্য ফসল চাষ হয়েছিল। কিন্তু করোনার কারণে বিপর্যয় নেমে আসতে যাচ্ছে প্রান্তিক কৃষকদের জীবনে। ক্ষেতে উৎপাদিত শস্য পাকলেও বাজারজাত করতে পারছেন না।
বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি রবি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছু কিছু ফসলের আবাদ বেশি হয়েছে। এবার আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে, রোপণ হয়েছে ৪ লাখ ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে। শাক-সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ ৪৫ হাজার হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৫ লাখ ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে। ৪ লাখ ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৪৬ হাজার হেক্টর জমিতে। একইভাবে সূর্যমুখী আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৬৮৭ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৬৩৬ হেক্টর জমিতে।
বিশিষ্ট কৃষিবিদ ড. ইমদাদুল হক বলেন, ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে বেশি। আবার দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। কিন্তু ফলন তোলার সময় দেখা গেলো ক্রেতা নেই।
ড. ইমদাদুল হক বলেন, দেশে এখনো সরকার বাজারব্যবস্থা তৈরি করতে পারেনি। এখনো মধ্যস্বত্তভোগীদের ওপরই কৃষকদের নির্ভর করতে হয়। কিন্তু এবার তারাও এগিয়ে আসছে না। এই অবস্থায় আমরা বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়তে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, সারাদেশের চাষিদের বিষয়ে, চাষাবাদের বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করার নির্দেশনা দেওয়া আছে আমাদের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে। এসব বিষয়ে অবশ্যই সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা আসবে। কারণ বর্তমান সরকার সবসময়ই কৃষিবান্ধব, কৃষকবান্ধব।