করোনা মোকাবিলায় লকডাউনে মানুষ ঘরবন্দী হয়ে পড়ায় গর্ভধারণের হার বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল জাতিসংঘ। সেই আশঙ্কা সত্যি হয়ে উঠল ভারতে।
সম্প্রতি এক সমীক্ষায় জাতিসংঘের পপুলেশন ফান্ড (ইউএনএফপিএ) জানিয়েছিল, অল্প ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে অন্তত ৪ কোটি ৭০ লাখ নারী অত্যাধুনিক গর্ভনিরোধক ব্যবহার করতে পারছেন না। ফলে কয়েক মাসের মধ্যে ওই দেশগুলোতে অনিচ্ছাকৃত মাতৃত্বের শিকার হতে হবে আরও অন্তত ৭০ নারীকে।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, ভারতেও এই সমস্যা জাঁকিয়ে বসছে বলে মত দেশটির চিকিৎসকদের। ফলে আগামী বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিপুল চাপ পড়বে দেশটি।
তবে শুধু গর্ভনিরোধক ব্যবহার না করতে পারার জেরেই নয়, লকডাউনে অনিচ্ছাকৃত মাতৃত্ব বেড়ে চলার আরও কিছু সমীকরণ আছে বলেই মত ভারতীয় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের।
ভারতে লকডাউন শুরু হয়েছে ২৪ মার্চ মধ্যরাত থেকে। সেই হিসেবে এগোলে ডিসেম্বর-জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশটিতে শিশু জন্মের হার অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেড়ে যাবে।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে সদ্য গর্ভধারণ করে চেকআপ করাতে আসা রোগীর হার সেই ধারণাকেই আরও মজবুত করছে।
পরিবার পরিকল্পনা ও অনিচ্ছাকৃত মাতৃত্ব, কোনও কিছুকেই যে করোনা দাবিয়ে রাখতে পারেনি, তা মেনে নিচ্ছেন মুম্বাই থেকে কলকাতার অধিকাংশ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞই।
মে মাস থেকেই অনলাইনে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে একপ্রকার বাধ্য হয়েছেন মুম্বাইয়ের নামকরা হাসপাতালের স্ত্রীরোগের চিকিৎসক সৌমেন্দু জানা রায়।
তিনি বলেন, ভারতে মহারাষ্ট্রের মুম্বাই করোনাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
তবু এখানে এ বছর লকডাউনের পর থেকে যেভাবে গর্ভধারণের ঘটনা বেড়েছে তাতে মুম্বাই শহরেই অন্যান্য বছরের তুলনায় মনে হচ্ছে সংখ্যাটা প্রায় দ্বিগুণ ছাড়িয়ে যাবে।
এই আরও চিকিৎসক বলেন, এই সময় ফোনে পরামর্শ নেওয়া রোগীর সংখ্যা এমনই যে ছুটির দিনেও আমরা ফোন ছাড়ার ফুরসত পাচ্ছি না। প্রায় সকলকেই করোনা ঠেকাতে হাসপাতালে আসতে বারণ করা হচ্ছে। চলছে ফোনেই কাউন্সেলিং ও প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসা।
তবে বিষয়টা শুধু আনন্দের মাতৃত্বে আটকে নেই। মুম্বাইয়েরই আরেক চিকিৎসক আনন্দ আহুজার গলায় ধরা পড়ল সেই সুর। আকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের পাশাপাশি গর্ভপাতের আবেদনও আসছে। অনিচ্ছাকৃত মাতৃত্বও যে সমান তালে বাড়ছে তা মিথ্যে নয়। বেঙ্গালুরুর এক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক সৌম্য রায়বসাকও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তার অভিজ্ঞতা, অনেক ক্ষেত্রে হবু মা নিজেই গর্ভপাতের কড়া সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। সুতরাং এই মাতৃত্ব যে তার অনাকাঙ্ক্ষিত তা বোঝাই যাচ্ছে।
মুম্বাই-বেঙ্গালুরুর মতো অবস্থা শহর কলকাতারও। এখানেও অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক গর্ভধারণ করা রোগী ভিড় করছেন হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত ক্লিনিকগুলোয়। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়ের ভাষ্য, সংখ্যা তো বাড়ছেই। তবে এই সংখ্যার বাড়বাড়ন্ত শুধুই যে আধুনিক মানের গর্ভনিরোধকের অভাবের কারণে, তা সব সময় নয়। বরং এর নেপথ্যে আরও কিছু কারণ আছে। সবচেয়ে বড় কথা, অনেক জটিল রোগীর ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে, জটিলতা, সময়ের অভাব, এগুলো কমায় এই লকডাউনে তারা অনেক সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবে সন্তান ধারণ করতে পারছেন।
মেদিনীপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক নীলিমা হাজরা বলেন, শুধু কলকাতা, মুম্বাই বা বেঙ্গালুরুর মতো বড় শহরগুলোই নয়, এই অনাকাঙ্ক্ষিত মাতৃত্বের শিকার পশ্চিবঙ্গের গ্রামবাংলাও। আমরাও প্রতি দিন যে পরিমাণ রোগী পাওয়ার কথা, তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ, কখনও তিন গুণ রোগী পাচ্ছি। পরিযায়ী শ্রমিকরা এ রাজ্যে ফেরার পর থেকে এই অঙ্ক আরও বাড়ছে। সুত্র:আনন্দবাজার