• ঢাকা
  • রবিবার, ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই মে, ২০২৪ ইং
সদরপুরে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন

নুরুল ইসলাম , সদরপুর থেকেঃ

ফরিদপুরের সদরপুরের দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নে গত এক সপ্তাহে প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পদ্মায় নদী ভাঙনে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও প্রবল বর্ষণের ফলে তীব্র ¯্রােতে নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে ইউনিয়টির প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে পদ্মা পাড়ের শত শত ঘর, ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা। সব হারিয়ে ভাঙনকবলিতরা আশ্রয় নিয়েছে স্থানীয় স্কুল ঘর ও খোলা মাঠে। সেই সাথে খাদ্য, চিকিৎসা, বিদ্যুৎসহ রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সংকট। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে না কোন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা বলে জানায় স্থানীয়রা।

গত বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) সরেজমিনে সংবাদ সংগ্রহ কালে দেখা যায়, পদ্মার তীব্র ভাঙ্গনে ইউনিয়নটির নন্দলাপুর, নুরুদ্দিন সরদারের কান্দি, জহুরুল হক বেপারীর কান্দি ও কুদ্দুস মোল্যার কান্দি গ্রামের প্রায় শতাধিক মানুষ নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। এছাড়া নদী ভাঙনের শঙ্কায় পদ্মার পাড় থেকে সরে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। নদী ভাঙনের ফলে ইউনিয়নটিতে প্রায় ১০ দিন যাবত বিছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। ভাঙন রোধে এখনো নেয়া হয়নি কোন কার্যকরী পদক্ষেপ।

ইউনিয়নের নন্দলাপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ বেলাল জানান, গত সোমবার (২৮ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে হঠাৎ করে আমাদের গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মুহুর্তের মধ্যে আমার ও আমার প্রতিবেসীদের বাড়ি ভাঙ্গা শুরু হয়। আমরা আমাদের ছেলে-মেয়ে, গরু-ছাগল ও ঘরের মালামাল নিয়ে বেরিয়ে আসি। তাড়াহুড়ো করে ঘরের কিছু অংশ ভেঙে এনেছিলাম তা দিয়েই পরিবার নিয়ে খোলা মাঠে আশ্রয় নিয়েছি। এখন আমরা খুব অসহায় অবস্থায় দিন পার করছি।

নুরুদ্দিন সরদার কান্দি গ্রামের ইলিয়াস আলী বলেন, নদীতে আমাদের সব নিয়ে গেছে। এদিকে আমাদের কোন কর্মও নেই। পরিবার নিয়ে অর্ধ অনাহারে দিন কাটাচ্ছি। এখনো সরকারি ভাবে কোন সাহায্য সহযোগীতা পাইনি। এভাবে চলতে থাকলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। আমরা সরকারের কাছে সাহায্য চাই।

কুদ্দুস মোল্যার কান্দি গ্রামের রহিমা খাতুন জানান, সন্তানদের নিয়ে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ করে এলাকাবাসীর ডাক-চিৎকার শুনে বাইরে আসি। দেখি নদীতে সবকিছু বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আমার স্বামী, সন্তান নিয়ে দ্রæত ঘরের মালামাল সরিয়ে নিতে নিতেই সব শেষ হয়ে যায়। এখন খুব অসহায় অবস্থায় জীবন-যাপন করছি। আমি ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সরকারের কাছে স্থায়ী সমাধান প্রার্থনা করছি, যাতে আর কেউ ভিটা-মাটি হারা না হয়।

নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নাসির হোসেন বলেন, আমাদের ইউনিয়নটি পদ্মা নদী বেষ্টিত হওয়ায় প্রতি বছরই ভাঙনের শিকার হয়। আমি ভাঙন রোধে টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সরকারের কাছে আবেদন করেছি। আসা করছি ভাঙন রোধে খুব শীঘ্রই সরকার কার্যকারী পদক্ষেপ নিবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ইউনিয়নে প্রায় আড়াই শতাধিক মানুষ ভাঙন কবলিত রয়েছে। আমরা তাদের নামের তালিকা করে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগীতা করার প্রস্তুতি নিয়েছি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, আমি ক্ষতিগ্রস্থদের নামের তালিকা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি- এই কাজ চলমান রয়েছে। আমরা দ্রæত ভাঙন কবলিতদের পাশে দাড়াবো। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নুরুল ইসলাম
সদরপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুর
০৪-০৯-২০২৩

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মে ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« এপ্রিল    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।