• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
মৃত লাফিয়ে বাড়ছে লুইজিয়ানায় ও নিউইয়র্কে

মৃত লাফিয়ে বাড়ছে লুইজিয়ানায় ও নিউইয়র্কে

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের প্রকোপ যেখানে বেশি সেসব এলাকায় সংক্রমণ রুখতে মাস্ক ব্যবহার নিয়ে শীঘ্রই নির্দেশিকা আনতে চলেছে হোয়াইট হাউস। দেশটিতে এ ভাইরাসের কেন্দ্র নিউইয়র্কে মাস্ক পরিহিত এক বাসিন্দা

চীন থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট কোভিড-১৯ মহামারী আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে। ইউরোপ মহাদেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় তিন দেশ ইতালি, স্পেন এবং ফ্রান্স এবং আমেরিকা মহাদেশের উত্তরাঞ্চলী দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং যেন আজ মৃত্যুপুরী। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাণঘাতী এ রোগে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ও লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্য।

দেশটির উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বের এ দুটি অঙ্গরাজ্যে ৩ এপ্রিল শুক্রবার ৬০০রও বেশি মানুষ করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন বলে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা ৭ হাজার ১০০ পেরিয়ে গেছে। আক্রান্ত পৌঁছেছে পৌনে তিন লাখে। দেশটির জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ৮টা থেকে শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টাতেই যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার ১৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৩২ হাজার ১৩৩ জন। বিপুল পরিমাণ আক্রান্তের চিকিৎসা করতে গিয়ে হাসপাতালগুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রোগীর চাপে নিউইয়র্ক সিটি ও নিউ অরলিয়ন্সের মতো বিস্তৃত স্বাস্থ্যসেবা সংবলিত শহরগুলোর স্বাস্থ্য কাঠামোও ভেঙে পড়তে বসেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এমন পরিস্থিতিতে দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের গভর্নর, শহরগুলোর মেয়র ও চিকিৎসকরা কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সামনের কাতারে থাকা প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সুরক্ষা উপকরণের জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরেই তাগাদা দিয়ে যাচ্ছেন। গুরুতর অসুস্থদের জন্য ভেন্টিলেটরের ঘাটতির কথাও বারবার বলছেন তারা। তবে কেন্দ্রীয় ট্রাম্প সরকারের কাছে থাকা এসব উপকরণের মজুদ প্রায় শেষ হয়ে আসায় অঙ্গরাজ্যগুলো এখন বিভিন্ন উৎস থেকে চড়া দামে এগুলো কিনতে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মোট মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশই দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য নিউইয়র্কের শহর নিউইয়র্কে। শহরটির মেয়র বিলদ্য ব্লাসিয়ো বলেছেন, ভাইরাসের ছোবলের সবচেয়ে ভয়াবহ দিনগুলো এখনও সামনে বলে আশঙ্কা তার। এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে দৌড়াতে হচ্ছে আমাদের।’ এসময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে কাজে লাগাতেও ফের অনুরোধ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন এক শত্রুর সঙ্গে লড়ছি যে হাজারও মার্কিনিকে মেরে ফেলছে, অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, যাদের মারা যাওয়ার দরকার ছিল না।’

রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাওয়া নিউইয়র্কের হাসপাতালগুলোর বাইরে টাঙানো হয়েছে তাঁবু। এক টুইটার বার্তায় নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের গ্লোবাল হেলথ ইন ইমার্জেন্সি মেডিসিনের পরিচালক ড. ক্রেইগ স্পেনসার বলেন, ‘সেসব তাঁবুতে আমি নিদারুণ কষ্ট, একাকিত্ব আর মৃত্যু দেখেছি। মানুষ একাকী অবস্থায় মারা যাচ্ছে।’

নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে মোট মৃতের সংখ্যা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলায় মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে বলেও মার্কিন গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫৯ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া করোনার সংক্রমণ কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব নাগরিকই এখন ‘ঘরবন্দী’ নির্দেশনার আওতায় রয়েছেন। প্রয়োজনীয় কেনাকাটা এবং চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করা ছাড়া আর কোনো অজুহাতেই ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ নেই তাদের।

তবে ঘর থেকে বের হলে মাস্ক পরা লাগবে কিনা- তা নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের বারবার অবস্থান বদলও তাদের বিপাকে ফেলেছে। শুক্রবার হোয়াইট হাউসের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, স্বাস্থ্য বিভাগ নাগরিকদের কাপড়ের মাস্ক পরার পরামর্শ দিলেও এটি পুরোপুরিই ঐচ্ছিক। এসময় তিনি বলেন, ‘কেউ চাইলে পরতে পারে, নাও পারে। আমি না পরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

দেশটির অন্য সব অঙ্গরাজ্যে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়লেও করোনাভাইরাস নিউইয়র্কজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অঙ্গরাজ্যটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, হাসপাতাল শয্যার অভাবে তারা গুরুতর সব রোগীকেও চিকিৎসা সেবা দিতে পারছেন না। তিনি আরও বলেন, ‘এরকমটা আগে কখনোই দেখিনি আমি। উন্নত বিশ্বে এমনটা হয় শুনিওনি।’

অপরদিকে শুক্রবার লুইজিয়ানায় মৃতের সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে ২০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার পর গভর্নর জন বেল এডওয়ার্ড বাসিন্দাদের ঘরবন্দি থাকার নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে অনুরোধ জানিয়েছেন। দক্ষিণ-পূর্ব এ অঙ্গরাজ্যটিতে আক্রান্তের সংখ্যাও ১০ হাজার পেরিয়ে গেছে। সেখানকার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সংক্রমণের বিস্তার রোধে মৃতপ্রায় রোগীদের কাছে স্বজনদের যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেককেই মৃত্যুর আগের কষ্টকর কয়েক ঘণ্টা একাকী কাটাতে হচ্ছে। নিউজার্সির গভর্নর ফিল মারফি করোনাজনিত জরুরি অবস্থা যতদিন থাকবে ততদিন সব পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ শুরুর পর এই প্রথম কোনো অঙ্গরাজ্য এমন পদক্ষেপ নিল। উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় এ অঙ্গরাজ্যটিও করোনার আঘাতে বিপর্যস্ত। শুক্রবার পর্যন্ত সেখানে ২৯ হাজার ৮৯৫ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃতের সংখ্যাও ৬০০ পেরিয়ে গেছে

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।