• ঢাকা
  • রবিবার, ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই মে, ২০২৪ ইং
মধুখালীর ধোপাডাঙ্গা-গাবুরদিয়া বিলে লাল শাপলা ছড়াচ্ছে সৌন্দর্যের রঙিন শোভা

এন কে বি নয়ন, বিশেষ প্রতিনিধি।।

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ধোপাডাঙ্গা-গাবুরদিয়া শাপলা বিলে শোভা ছড়াচ্ছে লাল শাপলা ফুল। বিশাল এলাকার বিলটিতে এখন লাল আর সাদা শাপলার অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। লাল শাপলার রঙিন ফুলগুলো তার আভা ছড়াচ্ছে। মুগ্ধ হচ্ছে এলাকা ও উপজেলাবাসী। সৌন্দর্য উপভোগ করতে উপজেলার গন্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছে মানুষ। ফরিদপুর শহর থেকে প্রায় ৫০/ ৬০ কিলোমিটার দূরে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল কোড়কদি ইউনিয়নের ধোপাডাঙ্গা-গাবুরদিয়া গ্রাম। মধুখালী উপজেলা সদর থেকে এর দুরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার। যা লাল শাপলা রাজ্য হিসাবে পরিচিত।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, প্রায় ৫০ থেকে ৬০ বছরের এ বিলে লাল আর সবুজের মাখামাখি দূর থেকেই চোখ পড়বে মানুষদের। কাছে গেলে ধীরে ধীরে সবুজের পটভূমিতে লালের অস্তিত্ব আরো গাঢ় লাল রঙের শাপলার রাজ্য চোখ জুড়িয়ে দেয়। মন ভুলিয়ে দেয় জাতীয় ফুল শাপলার বাহারি সৌন্দর্য। সূর্যের আভাকেও যেন হার মানিয়েছে এ বিলের পানিতে লতাপাতা গুল্মে ভরা শত সহস্র লাল ও সাদা শাপলা। এ যেন প্রকৃতির বুকে আঁকা এক নকশিকাঁথা।

কাছ থেকে দেখে মনে হয় লাল শাপলার কোনো চাদর বিছানো। চারপাশে গাঢ় সবুজের পটভূমিতে এ যেন বাংলার এক মুখরিত “লাল স্বর্গ”। পুরো বিলজুড়ে বিছানো শাপলা। প্রাকৃতিকভাবেই এই শাপলার অবারিত রঙ্গিন রুপ যে কাউকে মুগ্ধ করবে। রুপসী বাংলার এই রুপের প্রশংসা এখন গ্রাম ছাড়িয়ে উপজেলা জেলাজুড়ে। বিলের দূর থেকে সবুজের মধ্যে লাল রঙ দেখে দুরূহ হয়ে উঠার মতো অবস্থা। কাছে গেলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ফুলের অস্তিত্ব। কচুরিপনা,আগাছা আর লতা পাতায় ভরা এ বিলে ফুটন্ত শত-সহস্র লাল শাপলা সত্যিই সৌন্দর্যের অপরুপ এক লীলাভূমি।

এলাকাবাসী জানান, বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে উঠা বিলটির আকার দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটার। বিলে দুই ধরনের শাপলা জন্মে—লাল ও সাদা রঙের। তবে লাল শাপলাই বেশি। সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় তিন মাস এ বিলে শাপলা ফোটে। শাপলার ছবি তোলার জন্য ফটোগ্রাফার, সেলফি তুলে ফেসবুকে,ইউটিউবে ছবি তোলা মানুষদের কাছে একটি আদর্শ মনোরম জায়গা।

তাছাড়া শাপলার বিল শুধু সৌন্দর্য্য নয় , সবজি হিসেবে ও এখন বেশ জনপ্রিয়। ভিন্ন স্বাদের এই খাবার সবজি বাঙালী খাবার হিসেবে জুড়ি নেই। শাপলা তুলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে ওইসব এলাকার অসংখ্য পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছেন। এখাকার বাসিন্দাদের অনেকেই এই বিলের শাপলার ওপর নির্ভরশীল। এদের কেউ শাপলা তুলে, কেউবা বিল থেকে মাছ শিকার করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন ওই এলাকার কয়েক শ’ পরিবার। এখানে জমিগুলো মালিকানাধীন। ডিসেম্বর মাসে শুরুর দিকে শীতের মৌসুমে যখন পানি কমে যায় তখন সব শাপলা মরে যায়। ওই সময় কৃষকরা জমি পরিস্কার করে এখানে ইরি ধান,পেঁয়াজ ও পাট চাষ করেন। পরবর্তী বছর শাপলার গোড়া ও মোথা থেকে আবার জন্ম নেয় লাল শাপলার। এভাবেই দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে।

এলাকার বাসিন্দা গৌতম বিশ্বাস বলেন, সাধারণত আগস্টের থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই ৩ মাস এখানে শাপলা ফুটে। বছরের এই মাসগুলোতে শাপলা গ্রাম এই বিলে গেলে হাজারো শাপলা দেখতে পাবেন। আর শাপলা দেখতে হলে অবশ্যই খুব সকালে যেতে হবে কারণ বেলা গড়ানোর সাথে সাথে শাপলা ফুল বুজে যায় কিংবা শাপলা ফুল ব্যবসাহীরা ফুল বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যায়।

ফরিদপুর সিটি পেজ এবং ফরিদপুর লাইভ গ্রুপের মডারেটর সজিব মোল্লা সরেজমিনে বিলটি ঘুরে এর চিত্র ক্যামেরা বন্দী করেন। তিনি বলেন,
শাপলা ফুলের অপরূপ শোভা সৌন্দর্য পিয়াসী মানুষকে বিমোহিত করে। শাপলার অপরূপ শোভা ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয় মানুষ। হাজারো ফুলের ভিড়ে শাপলা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।

ওই গ্রামের বাসিন্দা গুরুপদ বিশ্বাস,সরজিত বিশ্বাস,হরিস চন্দ্র,রমেশ বিশ্বাস, নৃপতিসহ এলাকাবাসী জানান, বিলটি লম্বায় প্রায় এক কিলোমিটারের বেশী হবে। প্রস্থ ও প্রায় এক কিলোমিটার। কয়েকশত একরজুড়ে এর এরিয়া। শুখনো মৌসুমে ইরি,পেঁয়াজ ও পাটের আবাদ করা হয়। আর সারাবছর প্রায় ৫০ একর এরিয়া জুড়ে পানি থাকে। সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায। তবে পুরো বিলটির সব জমিই মালিকানাধীন।
এসকল জমির মালিক ও এলাকাবাসীর জানান, বিলটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষাকরনের পাশাপাশি, সরকারিভাবে মৎস্য অবমুক্ত করনের ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

সুজিত রাজবংশী, কানু রাজবংশীসহ এলাকাবাসী আরও বলেন, এবছর শাপলা ফুল কম ফুটেছে প্রচুর কস্তুরীর কারনে শাপলার বিস্তার তেমন ঘটেনি। স্থানীয় প্রশাসন যদি লাল শাপলা বিলের দিকে একটু নজর দিতো তাহলে হয়তো আমাদের ফরিদপুরে বরিশালের উজিরপুরের সাতলার মতোই পর্যটকদের আনাগোনা ঘটতো। একটি স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য সেই স্থানকে পরিচিত করিয়ে দেয়। সেই সাথে দর্শনার্থীদের আনাগোনার কারনে অর্থনৈতিক পরিবর্তনও ঘটে। গড়ে ওঠে ভ্রাম্যমান ক্ষুদ্র ব্যবসায় যা থেকে লাভোবান হতে পারে স্থানীয় গরীব জনগন।

কোরকদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুর রহমান খান,সাধারণ সম্পাদক উসমান গনি বলেন, এ বিলটি অনেক পুরনো। জেলার মধ্যে এটিই হচ্ছে একমাত্র বড় লাল শাপলার বিল। যা আমাদের এলাকার ঐতিহ্য বহন করে। ধোপাডাঙ্গা শাপলা বিলে আসতে হলে প্রথমে মধুখালী বাজার থেকে রামদিয়া হয়ে শ্রীরামপুর মোল্লাডাঙ্গী গাবুরদিয়া সংলগ্ন ধোপাডাঙ্গা শাপলার বিল। এখানে প্রতিটি বাড়িতেই নৌকা আছে। নৌকায় চড়ে আগতরা প্রতিদিন বিলটি ঘুরে এর সৌন্দর্য উপভোগ করেন।

শাপলার বিলে বিভিন্ন দর্শনার্থীদের মতো পরিবার পরিজন নিয়ে বিলে ঘুরতে আসা মধুখালীর নারী নেত্রী স্বপ্না আমিন,নারী নেত্রী শুক্লা ভৌমিক,রাধা ভৌমিক বলেন লাল শাপলার বিলে নৌকায় চড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরাটা সত্যি একটা অন্যরকম ভালো লাগা।

 

মধুখালী পৌরসভার মেয়র মোরশেদ রহমান লিমন বলেন, যদিও এটা আমার পৌরসভার বাইরে। কিন্তু দুরত্ব বেশি নয়। প্রতিদিন এখানে উপজেলা ছাড়াও বিভিন্ন দুর-দুরান্ত থেকে দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে। এ বিলের বিষয় যদি আমার কোন সহযোগীতা প্রয়োজন হয়,তাহলে ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতার চেষ্টা করবো।

এ ব্যাপারে মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আশিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, সময় করে বিলটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবীর বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহনের চেষ্টা করা হবে।

মধুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রেজাউল করিম বকু বলেন, উপজেলার লাল শাপলার বিলের মুগ্ধতায় মানুষ বিমোহিত। দীর্ঘ করোনাকালীন ঘরবন্দী মানুষ লাল শাপলার বিলে নৌকায় চড়ে ঘুরতে গিয়ে আনন্দ উপভোগ করছে। এটি উপজেলার একটি ঐতিহ্য বটে। তবে এটি সংরক্ষণ করা হলে ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য ভালো একটি বিনোদন কেন্দ্রে রুপলাভ করা উচিত। তাছাড়া এলাকাবাসীর দাবীর বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে মধুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, এটা আমার উপজেলার একটি সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এটি রক্ষাকরনের পাশাপাশি এলাকাবাসীর দাবী ও বিলের সৌন্দর্য বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক ড. হযরত আলী বলেন, ফরিদপুরে বর্ষা মৌসুমে প্রায় দুই শতাধিক খাল, বিল, নদী-নালা, জলাশয়ে শাপলা পাওয়া যায়। তবে আগের মতো বর্ষা না হওয়ায় এর উৎপাদনে হ্রাস পেয়েছে। মধুখালীর ধোপাডাঙ্গা বিলটিতে প্রচুর লাল শাপলা ফোটে এবং এর সৌন্দর্য মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বলে শুনেছি।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মে ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« এপ্রিল    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।