• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
করোনার উচ্চ ঝুঁকি মধ্য আগষ্ট পর্যন্ত

এখন থেকে যারই জ্বর থাকবে তাদেরই ঘরে থাকতে হবে

ঈদে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে মানুষ গ্রামে গেছে এবং গ্রাম থেকে আবার শহরে আসছে তাতে সংক্রমণের হার কত হবে তা এখন বলা কঠিন। ঈদকেন্দ্রিক পশুর হাট ও ঈদযাত্রায় দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ উচ্চ পর্যায়ে হতে পারে। আগামী ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে সংক্রমণের হার বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই মধ্য আগস্ট পর্যন্ত করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে দেশ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৮৩টি ল্যাবে ১১ হাজার ১৬০টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৬৫৪ জন। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ, আর এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরই মধ্যে শহর থেকে সংক্রমণ গ্রামে ছড়িয়ে গেছে এবং গ্রাম থেকেও সংক্রমণ নতুন করে রাজধানীসহ শহরগুলোতে বাড়তে শুরু করেছে। এই ঈদকে ঘিরে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দ্বিতীয় পর্যায়ে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে করোনার প্রকোপ ঠেকাতে পরীক্ষা বাড়ানো, কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতে দ্রæত পদক্ষেপ নিতে হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং সংশ্লিষ্টরা মনে করছে, এখন আর কঠোর লকডাউনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এই মুহূর্তে দরকার বেশি বেশি পরীক্ষা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে অন্যদের মুক্ত রাখা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করার ক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন করা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, গত কয়েকদিন ঈদের কারণে নমুনা পরীক্ষার জন্য কম এসেছে মানুষ। তবে তারা দুয়েক দিনের মধ্যেই পরীক্ষা বাড়াবেন। তবে ওয়ারীর লকডাউনের পর সরকার এই পদ্ধতির বিকল্প খুঁজছে। কারণ সব কিছু খুলে যাওয়ার পর একটি নির্ধারিত এলাকার মানুষ লম্বা সময়ের জন্য লকডাউন মানতে চায় না।

আবার এসব এলাকার মানুষের কাজকর্মের ওপরও ব্যাঘাত ঘটে। ফলে অনেকের জীবন-জীবিকার তাগিদে বাসা পর্যন্ত পরিবর্তন করতে হচ্ছে। ফলে লকডাউন এক ধরনের অকার্যকর হয়ে পড়ছে। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর কোভিড নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে বৈঠক করতে পারে।

চীন বা ইউরোপের মতো আমাদের দেশে করোনার পাঁচ মাস পর লকডাউন কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই একদিকে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ জরুরি আবার কাজের জায়গায়ও মানুষকে ফিরতে হবে। আর এর জন্য জোনভিত্তিক যে লকডাউনের চিন্তা করা হয়েছিল তার সময় এখন পার হয়ে গেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের সবচেয়ে ভালো দিক হলো মৃত্যুহারটা কম। কিন্তু এবারের ঈদে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন হয়েছে, তাতে উচ্চ সংক্রমণের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তাই সংক্রমণের এই ওয়েব নিয়ন্ত্রণ করতে দ্রæত ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, মানুষ এখন আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত। লকডাউন এখন তাদের কাছে বিভীষিকার মতো হয়েছে। ঈদে ধর্মীয় উৎসব এবং অর্থনীতি বন্ধ করে সব কিছু বন্ধ রাখা আসলেই অসম্ভব ছিল। আর মানুষ একেবারেই স্বাস্থ্যবিধি মানেনি। এখন ঘরে ঘরে পরীক্ষা বাড়াতে হবে। আর বড় কথা হলো, এই ঈদের পর আর এই বছরে বড় কোনো উৎসব নেই। কাজেই এবার নিয়ন্ত্রণে মনোযোগী হতে হবে।

ঈদের ছুটিতে গ্রামে যাওয়া-আসা এবং পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলার কারণে অবশ্যই সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এখন থেকে যারই জ্বর থাকবে তাদেরই ঘরে থাকতে হবে। কোয়ারেন্টাইন এবং আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। আর এসব তদারকির জন্য শহরে-গ্রামে মিলিয়ে হাজার স্বেচ্ছাসেবক নামানো দরকার। তাদের দ্রæত প্রশিক্ষণ দিয়ে মাঠে নামাতে হবে। আর নমুনা পরীক্ষায় তাদের কাজে লাগাতে হবে।
দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ২ হাজার ৬৫৪ জনকে নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৪ জন হলো। আর গত এক দিনে মারা যাওয়া ৩৩ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৩ হাজার ২৬৭ জনে। বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১ হাজার ৮৯০ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত এক দিনে। তাতে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৪১ হাজার ৭৫০ জন।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ মার্চ, তা দুই লাখ পেরিয়ে যায় ১৮ জুলাই। এর মধ্যে ২ জুলাই ৪ হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ শনাক্ত। প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ২৮ জুলাই সেই সংখ্যা তিন হাজার স্পর্শ করে। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয় বুলেটিনে, যা এক দিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু।

নাসিমা সুলতানা জানান, গত এক দিনে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ এবং ৮ জন নারী। ৩১ জন হাসপাতালে এবং দুজন বাড়িতে মারা গেছেন। তাদের মধ্যে দুজনের বয়স ছিল ৯০ বছরের বেশি। এ ছাড়া একজনের ৮১-৯০ বছরের মধ্যে, ছয়জনের ৭১-৮০ বছরের মধ্যে, ১০ জনের ৬১-৭০ বছরের মধ্যে, আটজনের ৫১-৬০ বছরের মধ্যে, চারজনের ৪১-৫০ বছরের মধ্যে, দুজনের ৩১-৪০ বছরের মধ্যে ছিল। এই ৩৩ জনের মধ্যে ১৮ জন ঢাকা বিভাগের, ৯ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, একজন রাজশাহী বিভাগের, একজন খুলনা বিভাগের, একজন বরিশাল বিভাগের এবং তিনজন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

ডিসেম্বর ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« নভেম্বর    
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।