• ঢাকা
  • সোমবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে মে, ২০২৪ ইং
আলফাডাঙ্গায় পরিবেশ বান্ধব দেশী প্রজাতির বহু গাছ বিলুপ্তির পথে

কবীর হোসেন, আলফাডাঙ্গা(ফরিদপুর)থেকেঃ
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা থেকে দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় গাছপালা। যেন সবুজ শ্যামল গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক রুপ মাধুর্য আজকাল বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সবুজ বৃক্ষলতা-পাতা রকমারী বৃক্ষরাজির সমারোহ হারিয়ে যাওয়ার পথে। অমিত সম্ভাবনার এই আমাদের বাংলাদেশ। গ্রামীন জনপদে প্রাকৃতিভাবে জম্ম নেয় নাম না জানা অসংখ্য বৃক্ষলতা-পাতা। এই বৃক্ষলতা-পাতা আমাদের মাটি ও আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে জম্ম নিচ্ছে এবং বেড়ে উঠেছে বছরের পর বছর ধরে।
গাছ মানুষের পরম উপকারী বন্ধু। প্রাণীকুলের বেঁচে থাকার প্রধান উপাদান অক্সিজেন। গাছ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য নিত্যক্ষণ অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। তাছাড়া মানুষ তথা প্রাণীকুলের শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহন করে থাকে। মানুষ বেঁচে থাকার জন্য যেমন অক্সিজেন প্রয়োজন তেমনি গাছ বেঁচে থাকার জন্য কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রয়োজন। গাছ কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহন করে পরিবেশ থেকে গরমের প্রভাব কমায়। আর অক্সিজেন ত্যাগ করে পরিবেশকে শীতল করে মানুষ ওপ্রাণীকুলের বেঁচে থাকার প্র্রধান উপকরণ অক্সিজেন যোগান দিয়ে থাকে।মানুষ গাছের এ পরম উপকারের বিষয়টি উপলদ্ধি করতে পারে না।
কারণ অক্সিজেন পেতে মানুষকে কোন বিনিময় দিতে হয় না। আর গাছ যে মানুষের কাছে বিনিময় চাইতে পারে না। স্বভাবই বিনিময় ছাড়া কোন জিনিস পেলে মানুষ সে জিনিসের গুরুত্ব দেয় না। মানুষ বিনিময় দিয়ে ক্ষুদ্র কোন দ্রব্য ক্রয় করলে তা অনেক যতœ সহকারে সংরক্ষন করে থাকে। অথচ বেঁচে থাকার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অক্সিজেন গাছ থেকে পেলেও গাছের প্র্রতি মানুষের চরম অবহেলা পরিবেশকে বৈরী করে তুলছে। তাই পরিবেশ মানুষের প্রতি ক্ষুদ্ধ হয়ে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দূর্যোগে পরিণত হচ্ছে।
এমন কি ষড় ঋতুর এদেশে ঋতুর পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। যখন বৃষ্টির প্রয়োজন তখন বৃষ্টি হচ্ছে না। হয়ত প্র্রচন্ড গরম অনুভূত হচ্ছে। আবার শীতের সময় হয়তো বৃষ্টি বা গরমের প্রকোপ দেখা দেয়।মানুষ নিজের প্রয়োজন মিটাতে ব্যাপক হারে বৃক্ষ নিধন করছে। গৃহ নির্মাণ, আসবাবপত্র তৈরীর জন্য যেমন বৃক্ষ নিধন করছে তেমনি গ্রামাঞ্চলের জ্বালানির প্রয়োজন মিটাতেও বৃক্ষ নিধন করা হচ্ছে। এভাবে বৃক্ষ নিধনের ফলে একদিকে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে অন্যদিকে দেশী প্রজাতির বৃক্ষ নিধনের ফলে হাইব্রীড প্রজাতির গাছ রোপন করছে। এসব হাইব্রীড গাছ পরিবেশের জন্য সীমাহীন ক্ষতিকর। এসব গাছের কারনে জীব বৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে দিন দিন পরিবেশের ক্ষতি করছে। হাইব্রীড গাছের শিকর মাটির অনেক গভীরে গিয়ে মাটি থেকে প্রতিদিন প্রচুর পরিমান পানি টেনে নিচ্ছে নিজের জীবন রক্ষায়। ফলে আশে পাশের এলাকা পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। এখন অনেক এলাকায় পানীয় জলের নলকুপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। কম সময়ে এসব গাছ দ্রুত বৃৃদ্ধি পাওয়ার কারণে গ্রামের বাড়ি ঘরের আঙ্গিনায়ও এসব হাইব্রীড গাছ লাগানোর প্রতিযোগিতা চলছে।পরিবেশ বিধ্বংসী এসব গাছে কোন পাখি পর্যন্ত বাসা তৈরী করে না। দেশী প্রজাতির গাছে যেভাবে নানা জাতের পাখি বাসা তৈরী করে। উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে অনেক পাখিও এখন এ গাছের কারণে বিলুপ্তির পথে।এছাড়া হাইব্রীড গাছের আশে-পাশে অন্য কোন গাছের চারা রোপন করলে তাও হয় না। আর হাইব্রীড গাছের কারণে পরিবেশ বান্ধব দেশী প্রজাতির গাছ বিলুপ্তির পথে। যেমন আগে একসময় হিজলা গাছ, গোদা গাছ, চুটচুইট্টা গাছ,চাট্টইল গাছ, বেল গাছ, তেতুল গাছ, তাল গাছ, খেজুর গাছ, বকুল গাছ, হরিতকি গাছ, বারগোটা গাছ, সেজনা গাছ, হোনালু গাছ, কলা গাছ, আইট্টা কলা গাছ, মাদার গাছ, ভাদি গাছ, নাগেশ্বর ফুলের গাছ, মধু ফুলের গাছ, চাইলদা গাছ, মিঝিরী গাছ, নিম গাছ, পোপন গাছ, চেইট পাতার গাছ, জারশুল গাছ, বট গাছ, অশ্বথ গাছ, কদম গাছ, ডইরগুলা গাছ, চম্পা ফুলের গাছ, পাইন্যা মাদার গাছ, তেলী মাদার গাছ, কাটা মাদার গাছ, পাইন্ন্যা গুলার গাছ, শিমুল তুলার গাছ, আছার গুলার গাছ, তুলা গাছ, নানা প্রজাতির বাঁশ, বেত গাছ, গর্জন গাছ, কর্ণাল গাছ, অর্জুন গাছ, কোনাক গাছ, হরতা গাছসহ আরো বিভিন্ন প্রজাতি গাছ বিলুপ্তির পথে।এগুলোর উন্নয়নে উদ্যোগ নিলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষা এবং পুষ্টি নিশ্চত হবে।
উপজেলার (বন-বিভাগ) ফরেস্টার মো. শেখ লিটন বলেন, সবাইকে দেশীয় বৃক্ষ সম্পদ রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে ও সচেতন হতে হবে ।বনজ সম্পদ ধংসের কারনে বন্য প্রাণী এবং পরিবেশের ক্ষতিছাড়াও ঔষধি গাছগাছড়া থেকে রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মে ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« এপ্রিল    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।