• ঢাকা
  • শনিবার, ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা মে, ২০২৪ ইং
স্মরণ: মিসেস শাহাজাদী বেগম

রেজাউল করিম, ফরিদপুর।
আজ ১১ জুলাই, ২০২১।
আজ মিসেস শাহাজাদী বেগম-এর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী।

করোনা মহামারীর কঠোর বিধিনিষেধ থাকায় ঘরে বসেই আমরা আজ স্মরণ করছি মিসেস শাহাজাদী বেগমকে।

একজন শিক্ষক ও সাংবাদিক হিসেবে তাঁকে স্মরণ করা এটা শুধু আমার দায় নয় এটা আমার দায়িত্বও বটে।

“এসেছে নতুন শিশু
তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান
এ পৃথিবীকে এ শিশুর
বাসযোগ্য করে যাবো আমি
নবজাতকের কাছে
এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।”

কবি সুকান্ত এর ভাষায় যাঁরা পৃথিবীকে নবজাতকের বসবাস উপযোগী করে তুলতে জোয়াল কাঁধে নেন; শাহাজাদী বেগম ছিলেন তেমনিই এক লড়াকু প্রাণ। তিনি ছিলেন স্বপ্নদ্রষ্টা একজন সুশিক্ষক।

বিনয়ী, সদালাপী ও মিষ্টভাষিণী শাহাজাদী বেগম ছিলেন সারদা সুন্দরী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক।

সমাজহিতৈষী ও স্থানীয় বিদ্যুৎসাহী ব্যাক্তিবর্গের সহায়তা নিয়ে তিনি তিল তিল করে গড়ে তুলেছিলেন সারদা সুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

যদিও এখন তার অনেক আধুনিকায়ন হয়েছে। তবে তাঁর রেখে যাওয়া প্রতিটি শ্রমবিন্দু ঘামের কাছে আমরা যে সত্যিকারেরই ঋণী। তবে সে ঋণ শোধরাবারও নয়।

তিনি ১৯৫১ সালের ২০ জুলাই ফরিদপুর জেলা শহরের কোমরপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ হায়দার আলী ও মাতা সৈয়দা মেহেরুন নেছা। তিনি ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেন এবং পরের বছর ১৯৭৬ সালে সারদা সুন্দরী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। মাত্র ২৯ জন ছাত্রী নিয়ে শুরু হয় সারদা সুন্দরী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের তাঁর পথচলা যা আজ হাজারো অধিক শিক্ষার্থীর এক মুখরিত প্রাঙ্গণ।

সংসার জীবনে ঘর বেঁধেছিলেন বোয়ালমারীর অলিয়ার রহমান এর সাথে যিনি আজ প্রতিষ্ঠিত এনজিও ব্যাক্তিত্ব বলে সুপরিচিত ও পল্লী প্রগতি সহায়ক সমিতির নির্বাহী পরিচালক। বীরমুক্তিযোদ্ধা অলিয়ার রহমান ও শাহাজাদী বেগম এর দুই সন্তান-
মৌ ও শাতিল।

শাহাজাদী বেগম সংসার জীবনে সময় দিয়েছেন কম, স্কুলে সময় দিয়েছেন বেশি। আর তাইতো কর্মময় জীবনে হয়েছেন আলোকিত মানুষ। আমরা আলোর পথের যাত্রী; তবে প্রদীপের আলোর নীচে ঘন অন্ধকারও থাকে সেকথা নাইবা ভাবলাম।

সুদীর্ঘ চল্লিশ বছর তিনি ছিলেন একই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক। এ বিদ্যালয়ের তৎকালীন হাজারো শিক্ষার্থীদের মনের মনিকোঠায় তাঁর অনুপ্রেরণা ও ভালোবাসার গল্প জমা আছে।

এ স্কুলে যোগদান করে আমি তাঁর স্নেহধন্য হয়েছিলাম একজন নতুন সহকর্মী হিসেবে মাত্র ৫ বছর। ঐ যে কথায় বলে না যে, সূর্য কতো বড়ো তা ঘরের ছোট কোন ছিদ্র দিয়েও দেখা যায় ;অল্প সময়ে আমি সেরকমই দেখেছি তাঁর হৃদয়ের বিশালত্ব। আর আমার অগ্রজ সিনিয়র শিক্ষকবৃন্দের কাছে জমা আছে আমাদের চলে যাওয়া সেই বড় আপা’র উদারতা, কমলে কঠোর হৃদয় এর অংসখ্য প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

প্রগতিশীল নারী আন্দোলনের সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ফরিদপুর জেলা শাখার সহসভাপতি ছিলেন তিনি। নারী আন্দোলনের মিছিলে হেঁটেছেন সেটা অন্য যেকোন সম্মান,সম্মাননা বা পদক প্রাপ্তির চেয়েও বেশি তৃপ্তির ও গৌরবের ।

যে সমাজে নারীকে একসময় এমনকি এখনও মানুষকে ভাবে না সেই নারীর অধিকার আদায়ের মিছিলে থাকা নিশ্চয়ই গৌরবের। আমি সশ্রদ্ধ সালাম জানাই নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় যাঁরা নিজেক আত্ম বলিদান করেছেন এবং এখনও যাঁরা আন্দোলন করছেন মাঠ ময়দানে।

এছাড়াও শাহাজাদী বেগম বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি,জেলা ক্রীড়া সংস্থা, মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থাসহ অসংখ্য সংগঠনে তিনি দক্ষ সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছেন।

নিজপ্রচেষ্টা, সুগঠিত ম্যানেজিং কমিটি, স্থানীয় দাতা ও বিদ্যুৎসাহী সদস্যদের সহযোগিতায় তিনি বিদ্যালয়টিকে গড়ে তুলেছেন স্বমহিমায়। তাই শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক স্বীকৃতিসহ নারী শিক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করায় তিনি বিভিন্ন পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

এ বিদ্যালয় থেকেই তিনি অবসরে যান ২০১৭ সালে। ২০১৯ সালের এই দিনে মাত্র ৬৮ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। কিন্তু রেখে গেছেন বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের সোনালী ফসল। তাইতো আমরা সকল গুণীজন ও কীর্তিমানের সাথে শিক্ষা বিস্তারে অনন্য শাহাজাদী বেগমকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করি।

পরিশেষে বলি, মুখায়ব ও দেহের গড়নের সৌন্দর্য নয় ;কর্মের সৌন্দর্য মানুষকে করে মহীয়ান। নশ্বর পৃথিবীর নিয়মে শাহাজাদী বেগম চলে গেছেন কিন্তু আমাদের অন্তরাত্মায় স্পন্দিত হয় তাঁর কর্মের সৌন্দর্য।

লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষক।
১১ জুলাই ২০২২

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মে ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« এপ্রিল    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।