• ঢাকা
  • রবিবার, ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই মে, ২০২৪ ইং
আজ মৃণাল সেনের ৯৭ তম জন্মদিন

বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও লেখক মৃনাল সেন। এ চলচ্চিত্রকার পাল্টে দিয়েছেন বাংলা ছবির ধারা। মৃণাল সেন ১৯২৩ সালে ১৪ মে বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। দেশ বিভাগের সময় তারা সপরিবারে কলকাতায় চলে যান। আজ ১৪ মে এ মহান চলচ্চিত্রকারের জন্মদিন। শুভ জন্মদিন মৃণাল সেন।

মৃণাল সেন কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিষয়ে পড়াশোনা করেন। ছাত্রাবস্থায় কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক শাখার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সরাসরি কখনো কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হননি। চল্লিশের দশকে তিনি সমাজবাদী সংস্থা আইপিটিএ’র (ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন) সঙ্গে যুক্ত হন। এ সংস্থার মাধ্যমে তিনি সমভাবাপন্ন মানুষদের কাছাকাছি আসতে সক্ষম হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালে তিনি একজন সাংবাদিক, একজন ওষুধ বিপণনকারী এবং চলচ্চিত্রের শব্দ কলাকুশলী হিসেবে কাজ করেন।

১৯৫৫ সালে মৃণাল সেন পরিচালিত প্রথম সিনেমা রাতভোর মুক্তি পায়। সিনেমাটি ব্যবসায়িকভাবে সাফল্যের মুখ দেখেনি। দ্বিতীয় সিনোমা নীল আকাশের নিচে তাকে স্থানীয় পরিচিতি এনে দেয়। তৃতীয় সিনেমা বাইশে শ্রাবণ দিয়ে তার জয়যাত্রা শুরু। এ সিনেমাটিই তাকে প্রথম আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। ১৯৬৯ সালে মুক্তি পায় ভুবন সোম। এ সিনেমাটি কলকাতার বাংলা চলচ্চিত্রে একটি মাইলফলক। বাংলা চলচ্চিত্রে নতুন ধারার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন মৃণাল সেন। এ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন শক্তিমান অভিনেতা উৎপল দত্ত।

মৃণাল সেন তার বিখ্যাত কলকাতা ট্রিলজি অর্থাৎ ইন্টারভিউ (১৯৭১), ক্যালকাটা ৭১ (১৯৭২) এবং পদাতিক (১৯৭৩)-চলচ্চিত্র তিনটির মাধ্যমে তৎকালীন কলকাতার রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থির অবস্থাকে তুলে ধরেছিলেন। মধ্যবিত্ত সমাজের নীতিবোধকে মৃণাল সেন তুলে ধরেন তার বহুল প্রশংসিত দুটি চলচ্চিত্র একদিন প্রতিদিন (১৯৭৯) এবং খারিজ-এর (১৯৮২) মাধ্যমে।

১৯৮০ সালে তার আকালের সন্ধানে মুক্তি পায় আর রাতারাতি হইচই ফেলে দেয়। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ ছিল চলচ্চিত্রটির মূল আলোচ্য বিষয়। মৃণাল সেনের পরবর্তী উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র মহাপৃথিবী (১৯৯২) এবং অন্তরীণ (১৯৯৪)। তার নির্মিত এখন পর্যন্ত শেষ চলচ্চিত্র আমার ভুবন মুক্তি পায় ২০০২ সালে।

মৃণাল সেন বাংলা ভাষা ছাড়াও হিন্দি, ওড়িয়া ও তেলেগু ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। ১৯৬৬ সালে ওড়িয়া ভাষায় নির্মাণ করেন মাটির মনীষ, যা কালীন্দিচরণ পাণিগ্রাহীর গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয়। ১৯৬৯ সালে বনফুলের কাহিনি অবলম্বনে হিন্দি ভাষায় নির্মাণ করে ভুবন সোম। ১৯৭৭ সালে প্রেম চন্দের গল্প অবলম্বনে তেলেগু ভাষায় নির্মাণ করেন ওকা উরি কথা। ১৯৮৫ সালে নির্মাণ করেন জেনেসিস, যা হিন্দি, ফরাসি ও ইংরেজি তিনটি ভাষায় তৈরি হয়।

মৃণাল সেন পরিচালিত চলচ্চিত্রগুলো বিশ্বের বড় বড় চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসা পাওয়ার পাশাপাশি পুরস্কারও জিতেছেন। ১৯৮১ সালে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে আকালের সন্ধানে চলচ্চিত্রটি বিশেষ জুরি পুরস্কার রৌপ্যভল্লুক জয় করে। ১৯৮৩ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে খারিজ বিশেষ জুরি পুরস্কার পায়। ভারত এবং ভারতের বাইরে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। তিনি একবার ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব দ্য ফিল্মেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

১৯৮১ সালে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘পদ্মভূষণ’ লাভ করেন। ২০০৫ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পান। ১৯৯৮-২০০৩ সালে তিনি ভারতীয় সংসদের সাম্মানিক সদস্যপদ লাভ করেন। ২০০০ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাকে অর্ডার অব ফ্রেন্ডশিপ সম্মানে ভূষিত করেন। মৃণাল সেনকে ফরাসি সরকার তাদের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘কমান্ডার অব দ্য আর্টস অ্যান্ড লেটারস’-এ ভূষিত করেন।

ভারতীয় চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের আত্মজীবনী বেরিয়েছে ২০০৪ সালের শেষভাগে। দিল্লির স্টেলার পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত ৩১০ পৃষ্ঠার এ বইটির নাম ‘অলওয়েজ বিয়িং বর্ন’।

মৃণাল সেন ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নিজ বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মে ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« এপ্রিল    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।