মনির মোল্যা, সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
গত বছর পানির অভাবে পতিত জমির মাটি খুঁড়ে গর্ত করে পাট জাগ দিতে হয়েছিল ফরিদপুরের সালথা উপজেলার পাটচাষিদের। এতে চরম ভোগান্তীতে পড়েছিল তারা। একদিকে লেগেছিল অতিরিক্ত বাড়তি খরচ, অন্যদিকে কাঁদামাটি জড়িয়ে পাটের রং নষ্ট হয়ে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। এবারও পাটচাষিরা একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন বলে আশঙ্কা। পানির অভাবে চরম বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে ফরিদপুর শহরতলীর সিএন্ডবি ঘাটের সুইচ গেটটি পুরোপুরি খুলে দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন পাটচাষিরা।
কৃষকরা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে সোনালী আশ পাট কাটা শুরু হয়েছে। কিন্তু মাঝে মাঝে বৃষ্টি হলেও খাল-বিল, নিচু জমি ও জলাশয়গুলোতে তেমন পানি জমেনি। এমনকি চাষিদের ব্যক্তিগত পুকুরেও নেই পর্যাপ্ত পানি। এমন অবস্থায় কৃষকদের একমাত্র ভরসা এখন কুমার নদের পানি। তবে কুমার নদে যদি উপজেলার চাষিরা একযোগে পাট জাগ দেয়, তাহলে নদের পানি পচে মরে যেতে পারে সকল প্রজাতির দেশীয় মাছ। তারপরেও এখানকার প্রধান ফসল ঘরে তুলতে নছিমন ও ভ্যানযোগে কাচা পাটের আটি কুমার নদে এনে জাগ দিতে শুরু করেছে কৃষকেরা।
সালথা উপজেলার বেশ কয়েকজন পাটচাষির সাথে কথা বলে জানাযায়, অনাবৃষ্টির কারণে গত বছরও পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছিলাম। যে কারণে পাটচাষ লোকসান গুনতে হয় আমাদের। এবারও বৃষ্টি নেই, বর্ষার পানিও জলশায়গুলোতে ঢুকছে না। এদিকে ক্ষেতের পাটও কাটার অপযোগী হয়েছে। অনেকে পাট কাটাও শুরু করে দিয়েছে। তারা কয়েক কিলোমিটার অদূরে গিয়ে কুমার নদে পাট জাগ দিচ্ছে। কিন্তু হাজার হাজার পাটচাষি রয়েছে সালথায়। কতজন কুমার নদের পাট জাগ দেওয়ার মতো জায়গা পাবে? সব মিলিয়ে আমরা চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছি। এমন অবস্থায় ফরিদপুরের সিএন্ডবি ঘাটের সুইচ গেটটি খুলে দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
শিক্ষক মো. জাহিদুর রহমান বলেন, সালথা-নগরকান্দার মাটি অনেক শক্তিশালী। এখানে প্রচুরপরিমান পাট জন্মে। বৈদেশিক অর্থ উপার্জনে এখানকার কৃষকরা পাটের মাধ্যমে বড় ধরণের ভূমিকা রাখেন। আবার নিজেদের জীবনমান উন্নয়নও হয় পাটচাষ থেকে। সব মিলিয়ে পাটের উপর নির্ভর করে এখানকার কৃষকদের ভাল থাকা না থাকা। এখন পাট কাটার ভর মৌসুম চলছে। এখন মাঠে-খাটে প্রচুর পরিমান পানির প্রয়োজন। কিন্তু কোথাও পানির দেখা মিলছে না। সুইচ গেটের দরজা এখন খুলে না দিলে, কৃষকের পাট ক্ষেতে শুকিয়ে মরবে।
সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন শিকদার বলেন, সালথায় ১২ হাজার ৩০৩০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হচ্ছে। আশানুরূপ ফলনও হয়েছে এবার। কিন্তু পানির অভাবে দুশ্চিন্তায় রয়েছে চাষিরা। ফরিদপুর সিএন্ডবি ঘাটের সুইচ গেটটি খুলে দেওয়া খাল-বিল ও জলাশয়গুলোতে দ্রুত পানি ঢুকবে। এতে কৃষক অনেক উপকৃত হবে।
১৬ জুলাই ২০২৩