• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩রা মে, ২০২৪ ইং

ফরিদপুর ও মধুখালী প্রতিনিধি:-

হত্যাকান্ডের ১২ দিন পার হলেও কোনো আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ

ফরিদপুর ও মধুখালী প্রতিনিধি:-

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামালদিয়া ইউনিয়নের মাকড়াইল গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়া হত্যাকান্ডের ১২ দিন পার হলেও কোনো আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

শনিবার (০৫ জুন) দুপুরে মধুখালী বাজার থেকে ভ্যানযোগে বাড়ি ফিরছিলেন জাহাঙ্গীর হোসেন। মাকরাইল গ্রামের উত্তর পাড়া পেঁৗছামাত্রই রাস্তার উপরে প্রকাশ্যে দিবালোকে মামুন ও তার লোকজন জাহাঙ্গীরের উপর হামলা চালিয়ে পৈচাশিকভাবে পিটিয়ে তাকে গুরুতর আহত করে মৃত ভেবে ফেলে যায়।

পরে গ্রামের লোকজন তাকে উদ্ধার করে মধুখালী হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তার শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যায় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত দেড় টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাহাঙ্গীর হোসেন।

এ ঘটনায় নিহতের পিতা হিরু মিয়া বাদী হয়ে গত ৬ জুন ওয়ালিদ হাসান মামুনকে প্রধান আসামী করে এবং ১৬ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামী করে মধুখালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ১২ দিন পার হলেও কোনো আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

এদিকে মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন গ্রামবাসী।  বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) বেলা ১১ টার দিকে মাকড়াইল বাজারের চৌরাস্তায় ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন গ্রামবাসী। পরে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মানবন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে হাজারো মানুষ অংশ নেয়।

মানববন্ধন কর্মসূচী চলাকালে বক্তব্য রাখেন কামালদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুল বাশার, কামালদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোঃ ইউনুস মিয়া, জাহাঙ্গীর হোসেনের বাবা মোঃ হারুন-অর-রশিদ হিরু মিয়া, বড় মেয়ে ঢাকার ভিকারুন্নেসা স্কুলের ছাত্রী মাহমুদা জাহান জ্যোতি, স্থানীয় বাসিন্দা জিয়াউল  ইসলাম, হানিফ শেখ, স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার মনজু মণ্ডল, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তার মন্ডল প্রমুখ।

মানববন্ধনে পিতার খুনিদের বিচার চেয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে অন্যান্যদের সাথে অংশ নেয় নিহতের চার বছর বয়সী শিশু পুত্র শাফিন মাহমুদ সামী ও ১৩ বছর বয়সী ছোট মেয়ে ঢাকার ভিকারুন্নেসা স্কুলের ছাত্রী জান্নাতুল জাহান প্রীতি।

মানববন্ধনে বক্তব্যকালে নিহতের বাবা হিরু মিয়া বলেন, গত ১১ দিন আগে নৃশংসভাবে জাহাঙ্গীর হোসেনকে হত্যার পর থানায় মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশ একজন আসামীকেও গ্রেফতার করতে পারেনি। আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না।

নিহতের মেয়ে মাহমুদা জাহান জ্যোতি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার বাবা সারাজীবন সততার সাথে জীবন পরিচালিত করেছেন। তিনি কারো উপর কোন অন্যায় আচরণ করেছেন বলে শুনিনি। গ্রামে মাদক, সন্ত্রাস ও ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় তঁাকে পরিকল্পিতভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে

কামালদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুল বাশার বলেন, মামুন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। মাদক ব্যবসা ও নারী পাচারের সাথে জড়িত মামুন। জাহাঙ্গীরকে নির্মমভাবে হত্যার আগেও এলাকায় একাধিক অপকর্ম করেছে মামুন। এলাকায় মামুনের একটি বাহিনী রয়েছে। মামুন ও তার বাহিনীর অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

ইউপি চেয়ারম্যান আরো বলেন, জাহাঙ্গীর হোসেনকে হত্যার আগের দিন তারা মেছোড়দিয়ায় তঁার ভগ্নিপতির বাড়িতে বসে গোপন বৈঠক করে। এরপর তারা পরিকল্পিতভাবে জাহাঙ্গীর হোসেনকে হত্যা করে। এর আগে এই মামুন ঢাকায় ব্যাংক ডাকাতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খেটেছে। র‍্যাবের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছে। এখনো সে এলাকায় তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এসব অঘটন ঘটিয়ে চলেছে। তিনি জাহাঙ্গীর হোসেনের খুনিদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি দাবি করেন।

তিনি বলেন, মামলা দায়েরের ১২ দিন পার হলেও আসামীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। দ্রুত আসামীদের গ্রেফতারের দাবী জানান ইউপি চেয়ারম্যান।

এব্যাপারে মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলার তদন্তভার ও আসামীদের গ্রেফতারের বিষয়টি সিআইডি দেখছে। আমাদের সহায়তা চাইলে সর্বাত্মক সহায়তা করা হবে।

ফরিদপুরের সিআইডির পরিদর্শক আক্তারুজ্জামান মিনা বলেন, মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা সঠিক পথেই এগোচ্ছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, মধুখালী উপজেলার কামালদিয়া ইউনিয়নের মাকরাইল গ্রামের সম্ভ্রান্ত গৃহস্থ হারুনুর রশীদ হিরু মিয়ার বড় সন্তান জাহাঙ্গীর হোসেন (৫২)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে তিনি দীর্ঘদিন যাবত ঢাকাতেই পার্টসের ব্যবসা করতেন। তবে সাম্প্রতিক করোনাভাইরাস এর মহামারীর কারণে তিনি ঢাকা থেকে নিজ গ্রাম মাকরাইলে ফিরে আসেন এবং মধুখালী বাজারে পার্টসের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেন।

তার স্ত্রী সাজেদা মাহমুদ বিথী ঢাকার ভিকারুন্নেসা স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন। গত বছরের ৪ নভেম্বর সাজেদা মাহমুদ বিথী ক্যান্সাওে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। জাহাঙ্গীর হোসেনের বড় মেয়ে মাহমুদা জাহান ভিকারুন্নেসা স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। আর তার ছোট মেয়ে জান্নাতুল জাহান স্মৃতি একই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। শাফিন মাহমুদ সামী নামে তাদের চার বছরের একটি শিশু পুত্র রয়েছে।

এলাকায় মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে বাধা দেওয়াতেই ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মে ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« এপ্রিল    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।