করোনা ভাইরাসের সংক্রমনরোধ ও জনগণের সুরক্ষায় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটি চলছে। কিন্তু দিন দিন বেড়ে চলছে করোনা আক্রান্তের ও মৃতের সংখ্যাও। সরকারি ছুটি শেষ হবে সাতদিন পরই (২৫ এপ্রিল)। এ অবস্থায় ছুটি না থাকলে, ঘরবাড়ি থেকে মানুষজন বের হয়ে পড়লে কী অবস্থা হবে তা নিয়ে জনমনে শঙ্কা কাজ করছে। বরং করোনা সংক্রমণ পুরোপুরিরোধ না হওয়া পর্যন্ত ঘরবাড়িতে মানুষজনকে ধরে রাখা না গেলে সংক্রমন আরও বেড়ে যেতে পারে।
ফলে পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও একদফা বাড়তে পারে সরকারি ছুটি। তবে যা কিছুই হোক না কেন সবকিছু নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর, এমনটাই জানিয়েছেন সরকারের একাধিক কর্তাব্যক্তি।
জানা গেছে, আজকে সংসদ অধিবেশনে দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে এবং সরকারি ছুটি বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় থেকেও সরকারি ছুটি বাড়ানোর সুপারিশ যাচ্ছে। ছুটি বাড়িয়ে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ছুটিকালীন মানুষজনকে ঘরবাড়িতে আবদ্ধ রাখতে সরকারিভাবে আরও কড়াকড়ির নির্দেশনা আসতে পারে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন কঠোর রয়েছে।
সরকারি ছুটি বাড়তে পারে ইঙ্গিত দিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন শনিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে রাইজিংবিডিকে বলেন, যেভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে ছুটি বাড়ানোর দরকার হতে পারে। তবে দেশ ও জাতির কল্যাণে পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন।
তিনি বলেন, আজকে সংসদ অধিবেশন রয়েছে। সেখানে ছুটির বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী কী নির্দেশনা দেন দেখি, তারপর জানিয়ে দেওয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী দেশবাসীকে সরকারি ছুটিতে ঘরবাড়িতে অবস্থানের আহ্বান জানিয়ে বলেন, কোনো জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরবাড়ি থেকে দয়া করে বের হবেন না। একটু সচেতন হলে আপনি আমি সবাই রক্ষা পাবো। বাংলাদেশ করোনাভাইরাসের চতুর্থ স্টেজ পার করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, মানুষ এখনো যথেষ্ট সচেতন নয়, তাদের মধ্যে মৃত্যুভয় দেখছি না। সংক্রমণরোধে সরকারি ছুটি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এসময়ে এতো কড়াকড়ির পরও তারা অপ্রয়োজনে বাসাবাড়ি থেকে বের হচ্ছে। করোনার সংক্রমণরোধে এই মানসিকতা সবাই পরিহার করতে হবে। করোনা নিয়ে সচেতন হতে হবে। বাসাবাড়িতে থাকতে হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংক্রমণ রোধে মানুষকে ঘরে রাখতে ছুটি আরও বাড়ানোর প্রয়োজন হবে। এজন্য ছুটি বাড়াতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, করোনার বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে ছুটি আরও বাড়ানোর প্রয়োজন হবে। যেভাবে রোগী বাড়ছে ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে আমরা সুপারিশ করবো।
তিনি বলেন, মানুষকে ঘরে রাখতে আমরা স্ট্রিকলি এনফোর্সমেন্ট চাই। করোনা প্রতিরোধে আমাদের প্রধান অস্ত্রই হলো- আইসোলেশন এবং দূরত্ব বজায় রাখা। এটা হচ্ছে, তবে আরেকটু কঠোর হলে সেটা ভালো হবে। তা না হলে আমরা সংক্রমণ রোধ করতে পারবো না।
তবে টানা সরকারি ছুটির কারণে দেশের উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক পেশাজীবী মানুষ এখন কর্মহীন। ছুটি আরও বাড়ানো হলে খাদ্যের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। দেশের সবচেয়ে বড় ফসল বোরো কাটার উৎসব শ্রমিক সংকটে ভাটা পড়েছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের অবস্থা আরও অবনতি ঘটতে পারে। ঈদ মৌসুম ঘিরে যে ব্যবসা-বাণিজ্য তাও লাটে উঠতে পারে। টানা ছুটিতে রমজান মাসে অর্থ সংকটে মানুষকে ঘরে আবদ্ধ করে রাখা কঠিন হতে পারে- অন্যদিকে করোনা সংক্রমণও দিন দিন বেড়ে চলছে। সার্বিক পরিস্থিতিসহ সবকিছু বিবেচনা করে সরকারি ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিতে পারেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন সাংবাদিকদের জানান, করোনার যা পরিস্থিতি তাতে ছুটি বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমাদের অনেক কিছু বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। এখন বোরো ধান কাটার মৌসুম। হাওরাঞ্চলসহ যে জায়গাগুলোতে বেশি বোরো হয় সেখানে কৃষক যেতে না পারলে অবস্থা কী হবে। তবে ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সবকিছু বিবেচনা করে হয়তো প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
করোনা সংক্রমণ রোধে ২৬ মার্চ থেকে ৪টা এপ্রিল সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। তারপর ৪টা এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পরে তা বাড়িয়ে ১৪ এপ্রিল করা হয়। চতুর্থদফা ১৪ এপ্রিল থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়। সবমিলিয়ে টানা ৩১দিনের সরকাটি ছুটি চলছে।
সংবাদ সুত্র ঃ রাইজিং বিডি