করোনা ভাইরাস ও বন্যার কারণে পানের দাম কমে যাওয়ায় রাজশাহীতে লোকসানে পড়েছেন পানচাষীরা। কয়েকগুণ লোকসান গুণেই পান বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। পান বিক্রি করে খরচই উঠছে না তাদের।
চাষীরা বলছেন, করোনা ভাইরাস ও বন্যার কারণে পানের দাম কমে গেছে। উৎপাদন ভালো হলেও বড় যে পান করোনার আগেও বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা বিড়া দরে সেই পান এখন বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা বিড়া দরে। আর ছোট যে পান বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা বিড়া দরে এখন তা বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে তিন টাকা বিড়া দরে।
এক বিড়াতে ৬৪ টা পান হয়। সে হিসাবে ৬৪টি পান বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২ টাকায়। অথচ রাজশাহীতে চৈত্র, বৈশাখ মাসে ২৫০ টা বিড়া পর্যন্ত পান বিক্রি হয়েছে। সারা বছরই রাজশাহীতে পান উৎপাদন হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, রাজশাহীতে ৪ হাজার ৩১১ হেক্টর জমিতে পান উৎপাদন হয় ৬৮ হাজার ৯৭৬ মেট্রিক টন। গড়ে ৪০ টাকা বিড়া ধরে এক টন পানের দাম দাঁড়ায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। রাজশাহীতে বছরে এগারোশো তিন কোটি ৬১ লাখ টাকার পান বেচাকেনা হয়। যা আমের চেয়েও বড় বাজার।
পান চাষের সাথে জড়িত আছেন রাজশাহীর ৬৯ হাজার ২২৮ জন কৃষক। প্রধানত রাজশাহীর মোহনপুর, দুর্গাপুর ও বাগমারা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পান উৎপাদন হলেও মোহনপুর উপজেলাতে সবচেয়ে বেশি পান উৎপাদন হয়। মোহনপুর উপজেলার প্রধান অর্থকরী ফসল পান। মোহনপুরের ধুরইল,
খানপুর, মল্লিকপুর ও মহব্বতপুর সবচেয়ে বেশি পান উৎপাদন হয়। এই চারটা গ্রামের প্রায় সবাই পান উৎপাদনের সাথে জড়িত।
মোহনপুরের ধুরইল গ্রামের পানচাষী রফিকুল ইসলাম বলেন, ভাইরাসের কারণে এবছর বিদেশি পান যায়নি। এই কারণে পানের দাম খুবই কম। এক বিড়া পান গতবছর এই সময়ে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা দরে। সেই পান এখন বিক্রি হচ্ছে বিড়াপ্রতি ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা দরে। আর ছোট যে ৫০ টাকা বিড়া দরে বিক্রি হয়েছে সেই েযপান বিক্রি হচ্ছে বিড়া প্রতি ২ টাকা দরে। পান বিক্রি করে লেবারের খরচটাই উঠছে না।
মোহনপুরের হলিদাগাছী গ্রামের কৃষক আবুল কালাম জানান, ভোর থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত পান ভাঙতে খাওয়া দাওয়াসহ একজন শ্রমিককে খরচ দিতে হয় ৫০০ টাকা। এখন অবস্থা এমন পান ভেঙে বিক্রি করে তাতে শ্রমিকের পয়সা হয়না।
তিনি জানান, এক পোয়াতে ৩২ বিড়া পান থাকে। এক পোয়া পানের দাম ১০০ থেকে ৫০০ টাকা। অর্থাৎ বিড়া প্রতি পানের দাম পড়ে ২ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। লকডাউনের পর থেকে পানের দাম কমে গেছে।
দাম কমের বিষয়ে মোহনপুরের আমরাইল গ্রামের সুমন আলী নামের এক কৃষক জানান, করোনার কারণে দূরদুরান্ত থেকে পাইকাররা আসতে পারছেন না। অনেকে যেখানে দিনে ৫০ টি পান খেতো এখন সেখানে ৫/ ৬ টি পান খাচ্ছেন। আবার বৃষ্টিতে মোহনপুরের নিমাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার কারণে অনেকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পান ভেঙে হাটে বিক্রি করছে। ফলে পানের দাম কম হচ্ছে। আবার হাট ঠিকমত না বসার কারণেও পান কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
ধুরইল গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম নামের আরেক কৃষক জানান, এক বিঘা জমিতে বছরে পান উৎপাদনের রক্ষণাবেক্ষণ ও শ্রমিকের খরচ পড়ে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। সেখানে পান বিক্রি করলে সর্বনিম্ন ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এবছর দাম কমে যাওয়ার কারণে আমাদের বর্ষণের কারণে মড়ক দেখা গেছে। নিম্নাঞ্চলের কারণে ডুবে যাচ্ছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শামসুল হক বলেন, রাজশাহীতে আমের বাজারের চেয়েও পানের বাজার বড়। আম তো বেচাকেনা হয় দেড় থেকে দুই মাস ধরে। আর পান সারাবছরই পাওয়া যায়। তবে করোনাকালীন দুর্যোগের কারণে অনেকেই পান খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন।
তিন আরো বলেন, ছোট ছোট ভাসমান পানের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। বড় অনেক দোকানও বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারণে পানের দাম এখন কিছুটা কম। এছাড়া রাজশাহীর পান মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্নস্থানেও যেত। এখন তো বিমান চরাচল বন্ধ তাই এখন যেতে পারছে না।