চিকিৎসক, পুলিশের পাশাপাশি করোনযুদ্ধে সামনের সারিতে আছেন সাংবাদিকরাও। মানুষের কাছে খবর পৌঁছে দিতে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও তাদের কাজ করতে হচ্ছে। তাই তারাও আক্রান্ত হচ্ছেন প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে।
ইতোমধ্যে রাজশাহীর ছয়জন সংবাদকর্মীর শরীরে শনাক্ত হয়েছে সংক্রমণ। তারা এখন করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়ছেন। তবে তারা শারীরিকভাবে ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন। যদিও কয়েকদিন আগে কেউ কেউ ভুগেছেন জ্বরে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তারা এখন বাসায় আছেন।
আক্রান্ত ছয় সাংবাদিক হলেন- মোহনা টেলিভিশনের রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিনিধি মেহেদী হাসান শ্যামল (৪২), এসএ টেলিভিশনের ক্যামেরাপার্সন আবু সাঈদ, সোনালী সংবাদের দুর্গাপুর উপজেলা প্রতিনিধি মিজানুর রহমান (৩৫), দৈনিক সানশাইনের স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর (২৪), রাজশাহী সংবাদের স্টাফ রিপোর্টার আবদুর রহিম (২৩) এবং কৃষিভিত্তিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল এগ্রিকেয়ার টোয়েন্টিফোর ডটকমের রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি মেহেদী হাসান (২৩)।
এদের মধ্যে মেহেদী হাসান শ্যামল রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক। আর আসাদুজ্জামান নূর রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক। নূর, মিজানুর, রহিম ও মেহেদীর করোনা শনাক্ত হয়েছে শনিবার (২০ জুন)। শ্যামলের করোনা শনাক্ত হয়েছে গেল ১৫ জুন। সবার আগে গত ৮ জুন করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে আবু সাঈদের শরীরে।
রোববার (২১ জুন) সকালে আবু সাঈদ জানান, তার প্রচুর জ্বর এসেছিল। সে জন্য নমুনা পরীক্ষা করেছিলেন। এতে করোনা শনাক্ত হয়। তবে তার পরিবারের তিনজনের করোনা নেগেটিভ এসেছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি নিজের ঘরেই আছেন। এখন জ্বর নেই। শারীরিকভাবে ভালো আছেন। ২১ দিন পর দ্বিতীয় দফা পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলে স্বাস্থ্যবিভাগ তাকে জানিয়েছে।
টিভি সাংবাদিক মেহেদী হাসান শ্যামল জানান, শারীরিকভাবে তিনিও ভালো আছেন। করোনা পজিটিভ হলেও কখনও তার শরীরে কোন উপসর্গ দেখা দেয়নি। তিনি বলেন, শারীরিক কোন সমস্যা নেই। কিন্তু ঘরবন্দী থাকলেও পরিবারের সদস্যদের জন্য ভয় পাচ্ছি। আজ বাবা দিবস। ছেলে-মেয়েটাকে কাছে নিতে পারছি না। এটা তো কষ্টের। কিন্তু সবার কাছে দোয়া চাই, আমার পরিবারের সবাই যেন সুস্থ থাকে।
আবদুর রহিম এবং আসাদুজ্জামান নূরও শারীরিকভাবে ভালো আছেন। তাদের কোন উপসর্গ নেই। তবে এগ্রিকেয়ারের মেহেদী হাসান ও দুর্গাপুর উপজেলার মিজানুর রহমানের উপসর্গ দেখা দিয়েছিল।
মিজানুর রহমান জানান, ১৪ জুন তার প্রচণ্ড জ্বর আসে। সঙ্গে কাশিও ছিল। তাই ১৬ জুন তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে নমুনা দিয়ে আসেন। শনিবার সন্ধ্যায় তাকে ফোন করে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট হওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে এখন তার জ্বর নেই। শারীরিকভাবে তিনি ভালো আছেন।
আসাদুজ্জামান নূর, মেহেদী হাসান ও আবদুর রহিম রাজশাহী মহানগরীর উপশহর এলাকার একটি বাসায় থাকেন। তারা তিনজনই রাজশাহী কলেজের ছাত্র। আবদুর রহিম জানান, মেহেদী হাসান গত ১৩ জুন একটি রিপোর্ট করতে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে আমের হাটে যান। পরদিন তার প্রচণ্ড জ্বর আসে।
তারা ধারণা করছেন, বানেশ্বরের ওই আমের হাটেই করোনা সংক্রমিত হয়েছেন মেহেদী হাসান। তবে এখন তার জ্বর নেই। মেহেদীর ওই জ্বর করোনার কারণে হতে পারে ভেবেই তারা তিনজন নমুনা দিয়েছিলেন। এতে তাদের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এখন তারা তিনজন ওই বাসাতেই আছেন।
গত ১২ এপ্রিল রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হন। এরপর মহানগরে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে ১৫ মে। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজশাহী জেলা ও মহানগরে মোট শনাক্ত হয়েছেন ২৩৭ জন। এদের মধ্যে চারজন মারা গেছেন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫৫ জন।