এম এম নুর ইসলাম
বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গা, ফরিদপুর থেকে
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিকাশ এগ্রো ফুড রাইচমিলের
বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে চন্দনা-বারাশিয়া নদীর পানি। চন্দনা-বারাশিয়া নদীর পানি পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, মরে যাচ্ছে প্রাকৃতিক মাছ। নদী পাড়ের মানুষেরা কোন কাজেই ব্যবহার করতে পারছেনা এ পানি। এ জন্য বিপাকে পড়েছে নদী পাড়ের মানুষ। নদীতে বজর্য ফেলায় পানি দূর্ষণের প্রতিবাদে নদী
পাড়ের দুই স্থানে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় পৌরসদরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের গুনবহা পুরাতন ব্রীজ এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কামারগ্রাম-আমগ্রাম ব্রীজের ওপর এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা আ.লীগের সদস্য আলী আকবর, পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিপ্লব হোসেন,
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাহাদুল আক্তার তপন, সাপ্তাহিক চন্দনার সম্পাদক কাজী হাসান ফিরোজ, কামারগ্রামের বাসিন্দা পলাশ বৈরাগী, আমগ্রামের বাসিন্দা তৈয়ব বিশ্বাস, গুনবহা গ্রামের বাসিন্দা আকরাম হোসেন ও ময়না গ্রামের আমিনুল ইসলাম প্রমুখ। দুই এলাকার মানববন্ধনে প্রায় চার শতাধিক বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ উপস্থিত র্ছিলেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, উপজেলার সোতাশী এলাকায় অবস্থিত বিকাশ এগ্রোফুডের অটোরাইচ মিলের বজর্যরে কারণেই দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে জনবসতি এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে এ মিলটি। লোকালয়ের এক কিলোমিটার বা এক হাজার ৯৮ গজের মধ্যে এ ধরনের মিল
স্থাপন না করার নির্দেশ থাকলেও তা মানা হয়নি। এমনিতেই পানি কম নদীতে। কৃষকরা পাট জাগ দিতে পারছে না। দ্রুত নদীতে বজর্য ফেলা বন্ধ করার দাবি জানান তারা। তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিকাশ এগ্রোর মালিক পক্ষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদী পাড়ে অবস্থিত ময়না ইউনিয়নের ঠাকুরপুর বাজার সংলগ্ন সোতাশী এলাকায় একটি বড় পাইপ দিয়ে নদীতে পড়ছে ময়লা পানি। এটি বিকাশ এগ্রোর
অটোরাইচ মিলের পাইপ বলে জানা গেছে। দৃশ্যমান এ পাইপের নিচের দিকে আরো ২টি পাইপ আছে বলে জানান উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পলাশ সাহা। তিনি অভিযোগ করেন অটোরাইচ মিলের যতো বজর্য এই পাইপ দিয়ে নদীতে পড়ছে আর দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। ঠাকুরপুর বাজারের মাছ
ব্যবসায়ি বাচ্চু খান অভিযোগ করে বলেন, অটোরাইচ মিলের পঁচা পানি পড়ে নদীর পানি নষ্ট হয়ে নদীর মাছ মরে গেছে। নদীতে মাছ পাওয়া যাচ্ছেনা। পঁচা পানির কারণে নদীতে মাছ ধরতে নামতেও পারছেনা মৎস্যজীবিরা। এর আগে আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করেছিলাম কিন্তু কোন কাজ হয়না।
দিনের পর দিন এ কাজ করে যাচ্ছে বিকাশ এগ্রো।
ঠাকুরপুর বাজার বণিক সমিতি সভাপতি মো. শওকত হোসেন সাগর বলেন, রাইচ মিলের বজর্যরে কারণে নদীর পানি পঁচে গেছে। পঁচা পানির গন্ধে বাজারে টিকা যায়না। মসজিদে নামাজ-কালাম পড়তেও সমস্যা হয়। নদী পাড়ের হাজার হাজার মানুষ নদীতে গোশল করতো, তারা গোশল করতে পারছেনা।
মিলের সন্নিকটে সোতাশী গ্রামের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। ময়না ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির মো.
সেলিম বলেন, নদী পাড়ের হাজার হাজার মানুষ নদীতে গোশল করতো, বিভিন্ন কাজে পানি ব্যবহার করতো, গরু বাছুর গোশল করাতো কিন্তু বিকাশ এগ্রো ফুডের বজর্যরে কারণে পানি নষ্ট হয়ে
যাওয়ায় কোন কাজে আসছেনা নদীর পানি। চরম বিপাকে আর ভোগান্তিতে আছে নদী পাড়ের মানুষ।
এ ব্যাপারে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ করেন স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি।
নদী এলাকায় সেচ সুবিধার মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, উৎস্যমুখে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি, সুপেয় পানির আধার তৈরিসহ এলাকার আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নকল্পে
২০১০-১১ অর্থ বছরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক
এমপি বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের আমলে চন্দনা-বারাশিয় নদী খনন করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।
কিন্তু দখল দূষণে এখন নদীর অবস্থা করুন। বিশেষ করে বজের্যর কারণে পানি পঁচে যাওয়ায় কোন কাজে আসছেনা চন্দনা-বারাশিয়ার পানি।
বিকাশ এগ্রো ফুডের স্বত্ত্বাধীকারি বিকাশ সাহা এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মিলের মালিক বিকাশ সাহা। তিনি বলেন, রাইচ মিলে কোন ময়লা, পঁচা পানি হয়না। এমনকি রাইচ মিলে
কোন বজর্য নেই। তিনি নিজে পাইপ দিয়ে পড়া পানি খেয়ে দেখেছে বলে জানান। তিনি দাবি করেন, এ পানি খেলেও কিছু হয়না। বিভিন্ন স্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে পানি দূষিত হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। যদিও ময়লা আবর্জনা ফেলার সে স্থানগুলো আরও ভাটিতে। তিনি আরো বলেন, কুষ্টিয়াসহ সারা দেশে হাজার হাজার মিল চলছে। সেসব মিল নদীতে পানি ফেলছে। সেখানে কিছু হচ্ছেনা। যতো সমস্যা এখানে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পেয়ে এবং সকল বিধিমোতাবেক মিল
করেছেন বলে তিনি দাবি করেন। যদিও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দেখাতে পারেননি। তবে ছাড়পত্রের জন্য
টাকা জমা দিয়েছেন এবং টাকা জমাদানের চালান দেখান তিনি।
এ বিষয়ে ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এমএইচ রাশেদের সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, এর আগে কোন অভিযোগ তঁারা পাননি। তদন্ত করে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নিবেন বলে তিনি জানান।
গতকাল বৃহস্পতিবার বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রেজাউল করিম বলেন, ময়না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। লিখিত অভিযোগ পেলে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।