• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৮ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা জুলাই, ২০২৪ ইং
পৃথিবীর আলো দেখতেই মৃত্যুর প্রহর গুনতে হচ্ছে নবজাতককে সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের চিকিৎসকের বাঁধা

ফরিদপুর অফিস :

পৃথিবীর আলো দেখতে না দেখতেই মৃত্যুর প্রহর গুনতে হচ্ছে এক নবজাতককে। চিকিৎসকের অসাবধানতায় এমন পরিনিতি হয়েছে ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ চরকমলাপুর এলাকার বাসিন্দা নায়েব আলী ও মোর্শেদা বেগম দম্পতির সদ্য ভূমিষ্ট সন্তানের। স্বজনদের অভিযোগ, সিজারের সময় কেটে ফেলা হয়েছে ওই নবজাতকের পেটের একটি অংশ। ওই চিকিৎসক বলছেন, অসাবধানতাবশত নাভির গোড়া থেকে সামান্য ছিড়ে গিয়েছে। তবে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে দৌড়ঝাপ করছেন হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ। এমনকি সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের বাঁধা দেন এক চিকিৎসক।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় শহরের সৌদি বাংলা প্রাইভেট হাসপাতালে সিজার করা হয় মোর্শেদা বেগমের। এর আগে ওই দিন বিকালে তার প্রসব বেদনা উঠলে হাসপাতালটিতে নিয়ে আসেন স্বামী নায়েব আলী। পরে সেখানকার গাইনী চিকিসক ডাঃ শিরিনা আক্তার সিজারিয়ান অপারেশন করেন। এরপর মোর্শেদা বেগম কণ্যা সন্তানের জন্ম দেন। বর্তমানে শিশুটি আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ওই নবজাতকের বাবা পেশায় একজন দিনমুজুর। কসাইয়ের কাজ করে চলে তার সংসার। প্রথম সন্তানের মুখ দেখতে প্রসূতি স্ত্রীকে নিয়ে ওই দিন হাসপাতালটির সরণাপন্ন হোন। পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকের পরামর্শে সন্ধ্যা ৭ টায় স্ত্রীর সিজার করা হয়।
নায়েব আলী অভিযোগ করে বলেন, সিজার করার সময় আমার বাঁচ্চাটির নাভির পাশে পেট কেটে ফেলেছে ডাক্তার। বিষয়টি ডাক্তার আমাদের বলেনি। প্রায় দেড় থেকে দুই ঘন্টা পর দেখতে পারি পেট দিয়ে প্রচুর রক্ত বের হচ্ছে। পরে বিষয়টি ওই ডাক্তারকে বললে কোনো গুরুত্বও দেয়নি। বার বার বলার পর পেটে দুটি সেলাই দেয়া হয়। এরপর বাচ্চাটির অবস্থা খারাপ হতে থাকলে রাতেই শিশু হাসপাতালে (ডাঃ জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতাল) নিয়ে যাই। তখন সেখানের ডাক্তাররা উন্নত চিকিসার জন্য ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছে।
তিনি ভঙ্গুর কন্ঠে বলেন, আমার বাচ্চাটির অবস্থা ভালো না, উন্নত চিকিৎসার জন্য আমার টাকাও নেই। ঢাকায় নিয়ে যাব সেই টাকাও আমার নেই। বাধ্য হয়ে আজ (রোববার) ফরিদপুর মেডিকেলে নিয়ে এসেছি।
নায়েব আলীর চাচাতো ভাই মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, সিজারের সময় ডাক্তারের সাথে সহযোগিতা করেন হাসপাতালটির আয়া ও স্টাফরা। তাদের ভুলেই এই পরিণতি হয়েছে। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে এজন্য আমরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার চাই।
ওই নবজাতকের শারিরীক অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বিভাগী প্রধান প্রফেসর ডাঃ পারভেজ। তিনি বলেন, শিশুকে যখন আনা হয়েছিল তখন শকের মধ্যে ছিল। তার শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হওয়ায় শক হয়। আগামী ৭২ ঘন্টা না যাওয়া পর্যন্ত আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না।
এ ঘটনাকে অনাকাঙ্খিত বলছেন ওই গাইনী চিকিসক শিরিনা আক্তার। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, অপারেশনের সময় দেখা যায় বাচ্চাটির অবস্থান ঠিক জায়গায় নেই। প্রসবের সময়ও পার হয়ে যাওয়ায় বাচ্চাটি পেটের ভেতর পায়খানা করে। যে কারনে নাভির কিছু অংশ পঁচে গিয়েছিল। এছাড়া বাচ্চাটির গলার উপর দিয়ে নাড়ি পেঁচানো ছিল। সেটি সরাতে গিয়ে অসাবধানতায় হয়তো নাভির ওই অংশে নাড়ি ছিড়ে যায়। যে কারনে সমস্যাটি হয়েছে।
এ বিষয়ে হাসপাতালটির চেয়ারম্যান মোঃ শহিদুল ইসলাম লিখন বলেন, এটি একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা। খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে শিশুটির খোঁজখবর নিয়েছি। তাকে পরিপূর্ণ সুস্থ্য করার যাবতীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য দৌড়ঝাপ করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ওই হাসপাতালটিতে নিয়মিত রোগী দেখেন ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের চিকিৎসক ওবায়দুর রহমান। তিনিও কর্তৃপক্ষের যোগাসজসে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য চেষ্টা করছেন।
আজ রোববার দুপুরে ফরিদপুর মেডিকেলের শিশু ওয়ার্ডে ওই নবজাতকের স্বজনদের সাথে কথা বলতে গেলে সাংবাদিকদের বাঁধা দেন ওবায়দুর রহমান। তিনি বলেন, আপনারা কি করতে চাচ্ছেন? হাসপাতালে এসেই ছবি তুলছেন, অনুমতি নিয়েছেন? এ সময় তার সাথে অবস্থান করতে থাকেন সৌদি বাংলা প্রাইভেট ক্লিনিকের কয়েকজন কর্মকর্তা।
এ ঘটনায় ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় মৌখিক অভিযোগ দেন শিশুটির বাবা। পরে সেখানে কোতয়ালী থানা পুলিশ ছুটে আসেন। এ বিষয়ে কোতয়ালী থানার পরিদর্শক (এসআই) শামীম হাসান বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রাশেদুল হাসান কাজল, ফরিদপুর।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

জুলাই ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« জুন    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।