চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) প্রতিনিধি :-
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচন ঘিরে প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র বাতিল করার ভয় দেখিয়ে এবং জাতীয় পরিচয়পত্র করা নিয়ে বিভিন্ন অজুহাত দাড় করিয়ে লাখ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহনের ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। গত ২৮ নভেম্বর অত্র উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষে বিজয়ী চেয়ারম্যান মেম্বাররা গেজেটভুক্ত হওয়ার পর সংশিস্নষ্ট উর্দ্ধতন দপ্তরে উক্ত নির্বাচন অফিসারের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহনের লিখিত অভিযোগ করেছেন।
উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী আহসানুল হক মামুন ও একই ইউনিয়নের ০১ নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুর রউফ গত ৩০ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ পেশ করার পর গত বৃহস্পতিবার দিনভর উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে অভিযোগের তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সহকারী সচিব (সংস্হাপন-১) মোঃ জিলহাজ উদ্দিন ও জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ হাবিবুর রহমান অভিযোগগুলো তদন্ত করেন। তদন্তে প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে তারা লিখিত জবানবন্দি গ্রহন করার পর নির্বাচন অফিসারের ব্যাংক হিসাব তলব করেন। এ ব্যাপারে শনিবার উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে জিজ্ঞেস করলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ” আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দাড় করানো হয়েছে এবং বিষয়টি তদন্তধীন আছে”।
লিখিত অভিযোগে সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশগ্রহনকারী আহসানুল হক মামুন জানায়, “নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র দাখিলের পরও উক্ত নির্বাচন অফিসার বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে প্রার্থীতা বাতিল করার ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে ১ম দফায় নগদ পৌনে দুই লাখ টাকা এবং পরে আরও দুই দফায় নগদ ৫০ হাজার টাকা সহ মোট সোয়া দুই লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন”। একই ইউনিয়নের ০১ নং ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুর রউফ জানায়, “মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন সব কাগজপত্র চেক করে সবকিছু বলে জানিয়ে দেওয়ার মাত্র দু’দিন পর নির্বাচন অফিসার মুঠোফোনে তাকে অফিসে ডেকে নিয়ে মনোনয়নপত্রের কোনো একস্হানে স্বাক্ষর না থাকার কথা বলে প্রার্থীতা বাতিল হয়ে যাবে বলে হুমকী দিয়ে তার কাছ থেকে দুই দফায় নগদ মোট ২৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন এবং উক্ত অফিসারের বাড়ী গোপালগঞ্জ জেলায় হওয়ায় অনেক বড় ক্যাডার বাহিনী তার হাতে থাকে বলেও হুমকী দেয়।
এছাড়া উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী মোঃ জুলহাস শিকদার জানায়, নির্বাচন প্রচার চলাকালীন বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তার প্রার্থীতা বাতিল হয়ে যাবে বলে হুমকী দিয়ে উক্ত অফিসার দুই দফায় নগদ মোট ৮০ হাজার টাকা ঘুষ হাতিয়ে নিয়েছেন। একই ইউনিয়নের আরেক প্রতিদ্বন্দ্বি চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ আলীর কাছ থেকে উক্ত অফিসার বিভিন্ন অজুহাতে নগদ ১০ হাজার টাকা এবং সদর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড সদস্য আঃ বারেক মন্ডলের কাছ থেকে নগদ ৪ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাগা উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বি শেখ শহীদুল ইসলামের স্ত্রী হাসিনা বেগম জানায়, নির্বাচন চলাকালিন সড়ক দুর্ঘটনায় আমার স্বামীর পা ভেঙে যাওয়ার কারনে নির্বাচন অফিসার আমাকে ডেকে নিয়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে নগদ ২৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। উক্ত ইউনিয়নের ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বি মহিলা সদস্য হেলেনা বেগমের কাছ থেকে নগদ ৫ হাজার টাকা এবং ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বি মহিলা সদস্যর কাছ থেকে আরও ৫ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহন সহ উক্ত নির্বাচন অফিসারের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহন অভিযোগের পাহাড় রয়েছে।
স্হানীয় ভুক্তভোগী সূত্রগুলো জানায়, সদ্য অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচন প্রার্থী ছাড়াও সাধারনরা উক্ত নির্বাচন অফিসারকে মোটা অংক না দিয়ে কেউ ভোটার আইডি কার্ড পর্যন্ত করতে পারে না। খোজ নিয়ে জানা যায়, সাধারন ভোটার আইডি কার্ড করতে গিয়ে স্হানীয় অনেকই উক্ত অফিসারকে হাজার হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে কাজ সেরেছেন। আবার অনেকে দৈন্যতার কারনে ঘুষের টাকা না দিতে পেরে দিনের পর দিন হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। এ রকম ভুক্তভোগী অনেকেই মুখ খুলেছেন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে-উপজেলা গাজীরটেক ইউনিয়নের মধু ফকির ডাঙ্গী গ্রামের আহাম্মদ মৃধার ছেলে মাহীম মৃধার কাছ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে উক্ত অফিসার ভোটার আইডি কার্ড করেছেন বলে অভিযোগ। এছাড়া একই ইউনিয়নের বেপারী ডাঙ্গী গ্রামের মোকাজ্জেল খানের ছেলে মোমিন খানের কাছ থেকে ভোটার আউডি কার্ডের জন্য উক্ত অফিসার নগদ ১৩ হাজার টাকা, একই গ্রামের করিম মৃধার ছেলে রুবেল মৃধার কাছ থেকে ভোটার আউডি কার্ডের জন্য নগদ ১০ হাজার, বড় গাজীরটেক গ্রামরে শেখ লুৎফরের ছেলে শেখ কামরুল ইসলামের কাছ থেকে ভোটার আইডি কার্ডের জন্য নগদ ৬ হাজার টাকা এবং উপজেলা সদর ইউনিয়নের টিলারচর গ্রামের রিয়াজুল মোল্যার ছেলে ফরহাদ মৃধার কাছ থেকে ভোটার আউডি কার্ডের জন্য নগদ ১০ হাজার ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানজিলা কবির ত্রপা জানান, ” উপজেলা নির্বাচন অফিসারের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহনের বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় তদন্ত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগগুলো আমরাও খতিয়ে দেখবো”। একই দিন উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ কাউছার বলেন, ” উপজেলা নির্বাচন অফিসার বেপড়োয়াভাবে ঘুষ বাণিজ্য চালাচ্ছেন। সে কারো কথাই শুনেন না এবং টাকা ছাড়া কোনো কাজ করেন না”