• ঢাকা
  • শনিবার, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ ইং
এথেন্স থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ (২য় খন্ড)- সোহেল তাজ

২৪ জুলাই

কষ্টে অর্জিত স্বাধীনতাকে ও গণতন্ত্র যেকোনো মূল্যে রক্ষা করতে এগিয়ে আসলো এথেন্স এর গর্বিত ইতিহাসের আরেক চরিত্র- থেমিস্টোক্লিস

১৮ বছর যেতে না যেতেই ৪৯০ খ্রীষ্ট পূর্বে পৃথিবীর প্রথম এই গণতন্ত্র এক অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হয় যা তাদের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে।  সেই সময়ের সবচেয়ে শক্তিধর পরাশক্তি পারস্য সাম্রাজ্য এথেন্স শহরকে আক্রমণ করতে হানা দেয় গ্রীস ভূখণ্ডের ম্যারাথন শহরে।  পারস্যের রাজা দারিউস (১ম) এই সিদ্ধান্ত নেন কারণ এথেন্স এর যুগান্তকারী গণতান্ত্রিক শাসন ব্যাবস্থার কথা ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পরে মধ্যপ্রাচ্চে এবং পারস্য রাজত্বের অনেক অঞ্চল বিদ্রোহী হয়ে উঠে (আইওনিয়ন বিদ্রোহ)।  তাই তিনি এই ভাইরাসের উৎস এথেন্সকে নির্মূল করার সিদ্ধান্ত নেন যাতে করে ভবিষ্যতে আর কেউ তার শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার সাহস না পায়।  এই দুর্যোগময় সময়ে এথেন্সের শীর্ষ নেতাদের অন্যতম নেতা ও সামরিক জেনারেল ছিলেন থেমিস্টোক্লিস।  শত্রুকে মোকাবেলা করতে থেমিস্টোক্লিস সহ অন্যান্যদের নেতৃত্বে ১০০০০ এথেন্স নাগরিক দিয়ে গঠিত সৈন্য বাহিনী ম্যারাথনে হাজির হলে অচিরেই বুজতে পারে পরিস্থিতির ভয়াবহতা- শত্রু পক্ষের সংখ্যা তাদের থেকে ২-৩ গুন্ বেশি এবং তা ছাড়াও পারস্যের সৈন্যরা আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত এবং সামরিক যুদ্ধের কায়দা কৌশলে অতুলনী।

(এখানে একটা মজার ঘটনা উল্লেখ করতেই হবে। যখন এথেন্সে প্রথম সংবাদ পৌছালো যে পারস্যের সৈন্যরা আসছে তারা তৎক্ষণাৎ স্পার্টা শহরের সহযোগিতা চেয়ে অনুরোধ পাঠালো ফাইডিপেডেস নামে একজন কুরিয়ার এর মাধ্যমে।  সেই সময়কার কুরিয়াররা ছিল পেশাদার সংবাদ বহনকারী যারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দৌড়ে যেত। ফাইডপেডিস ২ দিনে ২২৪ কি মি পারি দিয়ে স্পার্টায় পৌঁছায় কিন্তু স্পার্টা সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে এবং এই দুঃসংবাদ নিয়ে ফাইডপেডিস এথেন্সে ফিরে আসে এবং শেখান থেকে আরো ৬৪ কি মি দূরে ম্যারাথনে দৌড়ে যা। এই ঐতিহাসিক যাত্রা থেকেই বিখ্যাত “ম্যারাথন” রেস এর নামকরণ )

এই প্রতিকূল অবস্থায় থেমিস্টোক্লিসের দৃঢ় নেতৃত্বে আর অসীম আত্মবিশ্বাস নিয়ে এথেন্সের সৈন্যরা জোরালো আক্রমণ করে পারস্যের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে , যা ছিল একটি অবিস্মরণীয় বিজয়  থেমিস্টোক্লিস নিজে একজন সাধারণ পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও এই বিজয়ের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।  এই বিজয়ের পর সারা এথেন্স যখন উল্লাসিত এবং চারিদিকে আনন্দ উৎসব সে সময় একমাত্র থেমিস্টোক্লিস ছিলেন চিন্তিত এবং ভারাক্রান্ত কারণ তিনি বুজতে পেরেছিলেন যে এই বিজয় সাময়িক। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দূরদর্শী, বিচক্ষনি এবং বাস্তববাদী।  তার বুঝতে দেরি হয়নি যে এই পরাজয় মেনে নেবে না রাজা দারিউস এবং একদিন না একদিন এর প্রতিশোধ নেবেই।  পরবর্তীতে এক সভায় তিনি একটা প্রস্তাব পেশ করেন যেখানে তিনি ভবিষ্যতে এথেন্সকে রক্ষা করার কিছু পরামর্শ দেন।  এই প্রস্তাবের মূল ছিল এথেন্স রক্ষা করার লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী তৈরী করা।  তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে ভবিষ্যতে পারস্য সাম্রাজ্যের সাথে স্থলে মুখোমুখি যুদ্ধ হলে কোন ভাবেই বিজয় সম্ভব হবে না কারণ পারস্যের সেনা সংখ্যা অনেক বেশি এবং তারা অতীত পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে পরের বার প্রস্তুত হয়ে আসবে।  অনেকেই এই ব্যায়বহুল প্রস্তাবের বিরোধিতা করলেও শেষ পর্যন্ত থেমিস্টোক্লিস তার সুচিন্তিত যুক্তিতর্কের মাধ্যমে সভাকে রাজি করান এ প্রস্তাবে।  তার এই দূরদর্শী চিন্তাই সঠিক প্রমাণিত হয়।  ৪৮৬ খ্রীষ্ট পূর্বে রাজা দারিউস (১ম) মারা গেলে তার ছেলে জারক্সিস ক্ষমতায় অবতীর্ণ হন এবং তার বাবার পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে ৪৮০ কৃষ্ট পূর্বে এথেন্সকে আক্রমণ করেন বিশাল সৈন্য বাহিনী নিয়ে যার সংখ্যা ছিল লক্ষাধিক।

এই আক্রমনের আগেই থেমিস্টোক্লিসের নেতৃত্বে এথেন্স বাসীরা একটি অভিনব কৌশল অবলম্বন করে। সকল নগরবাসী ও নাগরিকেরা শহর ত্যাগ করে , মহিলা এবং শিশুদের পার্শ্ববর্তী শহরগুলোতে পাঠানো হয় এবং সকল সবল পুরুষেরা থেমিস্টোক্লিসের সেই নৌবাহিনীর জাহাজে অবস্থান নেয়।  জনশূন্য এথেন্স এ প্রবেশ করে ক্সারক্সিস ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এথেন্সবাসীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবার কারণে এবং এক্রোপলিস সহ শহরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।  এই সময় থেমিস্টোক্লিস তার নৌবাহিনী (যার সংখ্যা ছিল প্রায় ২০০ অত্যাধুনিক দ্রুতগতি সম্পন্ন ট্রাইরিম যুদ্ধ জাহাজ) নিয়ে এথেন্স এর কাছেই অবস্থিত সালামিস দ্বীপে অবস্থান নেন।  এরই মধ্যে ক্সারক্সিসের কাছে একটা খবর পৌঁছায় এই মর্মে যে থেমিস্টোক্লিসের নেতৃত্বে এথেন্সবাসীরা সালামিস দ্বীপ হয়ে পলায়ন করছে।  এই সংবাদ পাবার সাথে সাথে ক্সারক্সিস তার সৈন্যবাহিনীসহ জাহাজে করে সালামিস দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা করেন।  কিন্তু এই সংবাদটা আসলে ছিল থেমিস্টোক্লিসের কৌশলের অংশ এবং ক্সারক্সিস তার পাতা ফাঁদে পা ফেলেন।

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ক্সারক্সিসের নৌবাহিনী যখন সালামিস দ্বীপের একটা নির্ধারিত স্থানে পৌঁছায় ঠিক ওই মুহূর্তে থেমিস্টোক্লিস তার ট্রাইরিম যুদ্ধজাহাজ দিয়ে আচমকা ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে ক্সারক্সিসের প্রায় সকল জাহাজ বিধ্বস্ত করে দেয় এবং ক্সারক্সিস নিজেই বাধ্য হয় পালিয়ে পারস্যে ফিরে যেতে।

থেমিস্টোক্লিসের অসাধারণ নেতৃত্বে সেই সময়কার একমাত্র পরাশক্তি পারস্য সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে এথেন্সের এই অবিস্মরণীয় বিজয় খুলে দেয় সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত।  থেমিস্টোক্লিসের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এথেন্স এবং গণতন্ত্রের রক্ষক উপাধিতে ভূষিত করা হয়।  শুরু হয় এথেন্সের স্বর্ণ যুগ- এথেন্সের অর্থনৈতিক ও সার্বিক প্রভাব ছড়িয়ে পরে চারিদিকে।  এরই মধ্যে থেমিস্টোক্লিসের এই জনপ্রিয়তা অনেক প্রভাবশালীদের ঈর্ষান্বিত করে এবং তারা তার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র এবং মিথ্যা প্রচার করে।  এর ধারাবাহিকতায় তারা তার বিরুদ্ধে এক সভায় পাতানো ভোটের আয়োজন করে।  এথেন্সের প্রথা অনুযায়ী “অস্ট্রাসাইজ” নামক একটা বিধান ছিল। এই বিধানে বলা হয় যে, যে কোনো নাগরিক যদি এথেন্সের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসাবে গণ্য হয় এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হয় তাহলে ভোটের মাধ্যমে তাকে অভিযুক্ত করতে হবে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিকে “অস্ট্রাসাইজ” করা হবে অর্থাৎ তাকে নির্বাসনে পাঠানো হবে।  নিয়তির কি নির্মম পরিহাস ! যে থেমিস্টোক্লিস এথেন্সকে নিশ্চিৎ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করলো, ষড়যন্ত্রকারীরা তাকেই “অস্ট্রাসাইজ” করে চিরকালের জন্য নির্বাসনে পাঠিয়ে দে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমি কেন আমার বাবা তাজউদ্দীন আহমদের জন্মদিন উপলক্ষে এথেন্স এর কাহিনী উল্লেখ করছ। আমি এই ঐতিহাসিক কাহিনী গুলো উল্লেখ করেছি কারণ আমাদেরও এথেন্সের মত গৌরবের ইতিহাস আছে । আছে ইতিহাসগড়া চরিত্র যাদের কর্ম আর কীর্তি আমাদেরকে দিতে পারে একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার অনুপ্রেরণা।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে লুকিয়ে আছে শত শত বছরের অর্জনের ইতিহাস।  লুকিয়ে আছে অনেক গৌরবের কীর্তি আর ব্যক্তিত্বের ইতিহাস।  সেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া এই যাত্রায় আমরা খুঁজে পাই খুদি রাম আর মাস্টার দা সূর্য সেনদের মত স্বাধীনচেতা উদ্যমী চরিত্রদের।  খুঁজে পাই মহাত্মা গান্ধীর মত বিশাল চরিত্রকে যিনি উপনিবেশক শাসনের অবসান ঘটায় শান্তিকে হাতিয়ার করে।  বাঙালি/বাংলা ভাষা, স্বাধিকার, স্বাধীনতার ইতিহাসে খুঁজে পাই হোসেন শহীদ সোহরওয়ার্দী, এ .কে. ফজলুল হক, মৌলানা ভাসানী সহ আরো অনেককেই যাদের অবদান আর ত্যাগ সৃষ্টি করে দেয় বাঙালি জাতির কাঙ্খিত স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে যাবার পথ।

সেই পাইসিসট্রাটাস আর ক্লায়স্থেনিস যেমন এথেন্সবাসিদের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন একটা সুন্দর ভবিষ্যতের ঠিক একই ভাবে বাংলার মানুষকে স্বপ্ন দেখেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।  স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সম অধিকারের, স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বাংলার মানুষের ভাষা হবে বাংলা, স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন এমন একটা দেশের যে দেশে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে, স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন স্বাধীনতার।  আর তাই বাংলার মানুষ তাকে গ্রহণ করে নেয় তাদের জনক হিসাবে।

সেই যেমন থেমিস্টোক্লিসের দূরদর্শী বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে এথেন্স নির্ঘাত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায় ঠিক একই ভাবে বাঙালি জাতির ক্রান্তি লগ্নে, যখন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ধ্বংসের লীলাখেলা চালালো, বাংলার মানুষ যখন দিশেহারা একই ভাবে হাল ধরলেন তাজউদ্দীন আহমদ।  মুক্তি পাগল বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ছিনিয়ে আন্তে মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বের দায়িত্ব নিলেন। তাজউদ্দীন আহমদ এর জীবনী পড়লে দেখা যায় যে তিনি বরাবরই খুব বিচ্চক্ষন, দূরদর্শী, আত্মবিশশী, এবং অর্থনীতি ও আইনের উপর পড়াশোনা করায় তীক্ষ্ণ মেধাসম্পন্ন ছিলেন যার স্পষ্ট প্রমান খুঁজে পাওয়া যায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ৯ মাসে এবং পরবর্তী ৪ বছর ১৯৭৫ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত।

আরও পড়ুন  পূর্বের পর্ব

এথেন্স থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ -সোহেল তাজ

১৯৭০ সালে (পূর্ব ও পশ্চিম) পাকিস্তানের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং সংবিধান অনুযায়ী সরকার গঠন করার অধিকার পায়।  কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক ও রাজনীতিক গোষ্ঠী এই রায় মেনে নিতে পারে নি এবং বিভিন্ন অছিলায় ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বিলম্ব ঘটাতে থাকে এবং ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।  ক্ষমতা হস্তান্তরের লক্ষে কিছু আলোচনা আর বৈঠকের আয়োজন করে কিন্তু পর্দার আড়ালে ব্যাপক সামরিক প্রস্তুতি নেয় (মূলত পশ্চিম পাকিস্তানী সেনা সদস্য) এবং বিমান যোগে তাদের পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানে নিয়ে আসে।  ২৫ মার্চ ১৯৭১ “অপারেশন সার্চলাইট” নামক বিদ্রোহী দমন অভিযান চালায়- শুরু হয় গণহত্যা। আওয়ামীলীগ নেতৃত্বের বিবেচনায় ছিল যে পশ্চিম পাকিস্তানিরা হয়তো শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না এবং সেই জন্য তাদের একটা পূর্বপরিকল্পানা ছিল।  কিন্তু এই অভিযানের ব্যাপকতা ও হিংস্রতা পাল্টে দেয় সব হিসাব নিকাশ। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে ফেলে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনা বাহিনী কিন্তু তাজউদ্দীন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা অজানার পথে পারি দেন।  বাংলার মানুষের উপর যখন চলছে অত্যাচার নির্যাতন গণহত্য- যখন বাংলার মানুষ দিশেহারা- ২৬ মার্চ তারা পায় আসার আলো যখন রেডিওতে শুনতে পায় বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার ঘোষণা।

এমতাবস্তায় আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাজউদ্দীনের কাঁধে এসে পরে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমস্ত দায়িত্ব।  তিনি গভীরভাবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলেন।  তিনি স্পষ্ট ভাবে বুজতে পেরেছিলেন তার কি করণীয় এবং ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ সীমান্তবর্তী জীবনগরের টঙ্গী নামক এলাকার একটা ব্রিজের নিচে সেই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিলেন- স্বাধীনতা সংগ্রাম কে সফল করতে হলে আইনের ভিত্তিতে (১৯৭০ সালের নির্বাচন সেই আইনগত ভিত্তির উত্স) সরকার গঠন করতে হবে এবং দৃঢ়তার সাথে ঠিক তাই করলেন।

১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করা হল এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হল এবং ১৭ই এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভাবে কাজ শুরু করল এবং সকল প্রতিবন্দকতা, অভ্যান্তরীন ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে মহান মুক্তিযুদ্ধের সফল নেতৃত্ব দিয়ে নয় মাসে বিজয় ছিনিয়ে আনলো।  তাজউদ্দীনের এই অবিস্মরণীয় নেতৃত্বের (তিনি নিজে রনাজ্ঞনে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিদর্শন, দেখভাল এবং খোঁজ খবর নেন) স্বীকৃতি হিসাবে তাকে সাধারণ জনতা বঙ্গতাজ উপাধি দেয়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী জাতির জনক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করার পরপরই তাজউদ্দীন তাকে স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিয়ে প্রধান মন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে দেন।  বঙ্গবন্ধুর সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭৪ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত।  সেই থেমিস্টোক্লিসের মত তিনিও ষড়যন্ত্রকারীদের শিকার হন এবং এক অর্থে নীরবে নির্বাসনে চলে যান। জীবনদশায় না হলেও ইতিহাস থেমিস্টোক্লিসকে তার প্রাপ্য স্থান এবং সন্মান দিয়েছে- তাজউদ্দীন কি পাবে তার প্রাপ্য সন্মান ?

(এই সরকার গঠনের ফলে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বাঙালি জাতির স্বাধীনতা আন্দোলন একটি আইন গত ভিত্তি পায় যার ফলে অনান্য ব্যার্থ বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের পরিণতি থেকে রক্ষা পায়।  এই সরকারের বলিষ্ট নেতৃত্বে ১১ সেক্টরে সফল ভাবে যুদ্ধ পরিচালিত হয় তাছাড়া ১ কোটি শরণার্থীর দেখভাল করতে হয়।

বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করা হয় এবং তার অনুপস্থিতিতে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।

তাজউদ্দীন আহমদ প্রধান মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন ছাড়াও প্রতিরক্ষা, তথ্য, সম্প্রচার ও যোগাযোগ, অর্থনৈতিক বিষয়াবলি, পরিকল্পনা বিভাগ, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, শ্রম, সমাজকল্যাণ, সংস্থাপন এবং অন্যান্য যেসব বিষয় কারও ওপর ন্যস্ত হয়নি তার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।

এম মনসুর আলী- মন্ত্রী, অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এ এইচ এম কামরুজ্জামান- মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র, সরবরাহ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং কৃষি মন্ত্রণালয়)

খন্দকার মুশতাক আহমেদ- পররাষ্ট্র মন্ত্রী (বিস্বাসহ্খ্যাত- বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার ষড়যন্ত্রকারী)

এম এ জি ওসমানী- প্রধান সেনাপতি

মেজর জিয়াউর রহমান- সেক্টর কমান্ডার (জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের পর বিতর্কিত ভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন)

আমরা যদি আমাদের ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে আমরা খুঁজে পাবো অনেক অনুকরণীয় চরিত্রদের আর তার পাশাপাশি পাবো খলনায়ক।  (নিশ্চিত করতে হবে যেন ইতিহাস থাকে সংরক্ষিত- ইতিহাস আড়াল বা বিকৃত করা মানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সাথে বিস্বাসঘাতগতা করা) তাদের কীর্তি আর কর্ম থেকে অনুপ্রেরণা আর শিক্ষা নিতে হবে যাতে করে আমরা আমাদের ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য দিয়ে যেতে পারি একটা সোনার বাংলা। আমার বাবার যেই স্বপ্নের জন্য এত ত্যাগ করেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সফল নেতৃত্ব দিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত স্বেচ্ছায় নিজের জীবন দিয়েছেন, সেই স্বপ্নের মুলে ছিল এমন একটা সমাজব্যাবস্থা যেখানে মেধা আর যোগ্যতাই হবে মূল মন্ত্র এবং চালিকা শক্তি। নতুন প্রজন্ম মেতে উঠবে মেধা আর যোগ্যতার প্রতিযোগিতায়- বাক স্বাধীনতা, মুক্ত চিন্তা, ন্যায় বিচার হবে সেই সমাজবাবস্থার ভিত্তি এবং খুলে দিবে স্বভাবনাময় নতুন দিগন্তের জানালা। আর আমার বাবার জন্মদিনে এটাই হবে তার সবচেয়ে বড় পাওয়া।

##লেখাটি সোহেল তাজ এর ফেইসবুক থেকে সংগৃহিত।।

## আরও পড়ুন ও জানুন করোনা ভাইরাস চিকিৎসায় ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর পরামর্শ ও নিয়মাবলী।।

##কোভিড রুগীর বাসায় চিকিৎসার একটি পূর্নাংগ নির্দেশনাঃ

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

জুলাই ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« জুন    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।